প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৯ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জুলাই অভ্যুত্থান: শ্রমজীবীদের অবদান ‘ভুলতে বসেছে সবাই’

editor
প্রকাশিত আগস্ট ৩, ২০২৫, ০৮:৫২ পূর্বাহ্ণ
জুলাই অভ্যুত্থান: শ্রমজীবীদের অবদান ‘ভুলতে বসেছে সবাই’

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

ছোট্ট ইকরার হাতে পুতুল, পাশেই রাখা বাবার ছবি। পুতুলখেলার ফাঁকে বাবার ছবি এগিয়ে দিয়ে সে বলছিল, “বাবা ‘মজা’ আনতে গেছিল, আর আহে নাই।”

মেয়েটির বাবা রাজিব হোসেন ঢাকায় সিএনজি চালাতেন; থাকতেন কদমতলী থানার পাশের একটি বাড়িতে। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই যখন কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল পুরো দেশ, সেদিন রাতে কদমতলীর এক সড়কে পড়েছিল রাজিবের লাশ।

তার স্ত্রী মোছাম্মৎ চম্পা বলেন, ওই দিন এশার নামাজের একটু আগে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন রাজিব; আর ফেরেননি। রাত দেড়টার দিকে কদমতলী থানার পাশের ফুটপাতে তার লাশ পাওয়া যায়।

জুলাই-অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রদের নেতৃত্বে হলেও তাতে শ্রমজীবী মানুষই সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছেন বলে মনে করেন কেউ কেউ। যদিও এর দাপ্তরিক কোনো হিসাব এখনও করা হয়নি।

শুধু জুলাই অভ্যুত্থান নয়, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনেও মারা গেছেন বহু শ্রমজীবী মানুষ। তবে সবার ঠাঁই ইতিহাসে হয়নি।

অন্যদের পাশাপাশি শ্রমিকদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বার বার রাষ্ট্রক্ষমতা পাল্টেছে। কিন্তু ক্ষমতার মসনদে যারাই বসেছেন, শ্রমিক শ্রেণির কথা ভুলে গেছেন বলে অনেকেই আক্ষেপ করেছেন। এবারও ভিন্ন কিছুর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, শ্রমজীবীদের অবদান ‘সবাই ভুলতে বসেছে’।

 

স্বীকৃতি ও অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের ‘নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি’ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, “শ্রমজীবী মানুষের রাজনৈতিক শক্তি তৈরি না হলে তাদের অধিকারের জায়গা পূরণ হবে না। এখনতো যাদের রাজনৈতিক শক্তি আছে, তাদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে। সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণি, বড় ব্যবসায়ী, আমলাতন্ত্রের কথা বলার জায়গা আছে। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের কথা বলার জায়গা নেই। তাদের রাজনৈতিক শক্তিটা এখনো গড়ে ওঠেনি।”

জীবন নদীর জোয়ার-ভাটা

কদমতলীতে নিহত রাজিবের গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের ছাতিয়ানিতে। সেখান থেকে মাইল দুয়েক দূরে রাজিবের শ্বশুরবাড়িতে থাকছেন তার স্ত্রী ও সন্তানেরা।

ডামুড্যার তিনখাম্বা-পুলকারপাড়ে বাস থেকে নেমে দেখা হয় রাজিবের বাবা তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে, যিনি একটি চায়ের দোকানে অপেক্ষা করছিলেন। কথা বলতে বলতে তিনি নিয়ে গেলেন রাজিবদের টিনশেডের ছোট্ট ঘরে।

পেশায় রাজমিস্ত্রি তোফাজ্জল বলছিলেন, “আমার পোলাডা তো মইর‌্যা গেল; আমার নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হইয়্যা গেল।”

ছাতিয়ানি গ্রাম থেকে কিছুটা পথ অটোরিকশায়; এরপর মাইলখানেক মাটির রাস্তা ধরে হেঁটে যখন খাঁইগো মৌজার সিকদার বাড়ির কাছে পৌঁছানো গেল, তখন সামনের ধানক্ষেতে অথৈ পানি।

রাজিবের শ্বশুর আব্দুর রশিদ সিকদার পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন বাড়ির ভেতরে। হাঁটু পানি পেরিয়ে সিকদার বাড়িতে প্রবেশ করতেই পাওয়া গেল রাজিবের স্ত্রী চম্পা এবং দুই সন্তান ইকরা ও আলিফের দেখা।

দোচালা ভাঙা ঘরে বসে চম্পা শোনাচ্ছিলেন রাজিবের কথা; পাশে খেলায় মত্ত ইকরা ও আলিফ।

চম্পার ভাষ্য, “মরণের তিন দিন আগে থেইক্কাই আর সিএনজি চালায় নাই। গ্যাঞ্জাম অইত্যাছে দেইখ্যা ঘর থেইক্কাও বাইর হইত না। হে তো কোনো রাজনীতির সাথেও আছিল না। তয় ক্যান মারলো হ্যারে?”

তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন জোয়ারের পানি ধানক্ষেত থেকে উঠান পেরিয়ে ঘরের দরজার কাছে চলে এসেছে। ইকরা আর আলিফ ঘরের দরজা থেকে সেই পানিতে লাফিয়ে লাফিয়ে পড়ছিল। রাজিবের শ্বশুর তখন ব্যস্ত নাতি-নাতনিদের শান্ত রাখতে।

চম্পা বলেন, “হে তো মইর‌্যা গ্যাছে। অহন আমার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ কী? কিছুই জানি না।”

শৈশবের দুরন্তপনায় মত্ত ইকরা-আলিফও হয়ত জানে না, তাদের জন্য কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?

Manual5 Ad Code

চম্পা বলেন, “আমার স্বামীরে কারা মারছে, এটা তদন্ত করে বিচার করুক সরকার। ভবিষ্যতে যেন এরকম আর না হয়।”

জোয়ারের পানি থাকায় রাজিবের শ্বশুর নৌকায় করে ঘরের দরজা থেকে মাটির রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গেলেন। নৌকায় বসে তিনি বলছিলেন, “আমি বরগুনা থেইক্যা এহানে আইস্যা ঘর কইরা থাকতেছি ১০ থেকে ১২ বছর। আমার নাতি-নাতনিগো ভবিষ্যতে যে কী আছে, আল্লাহ জানে।”

রাজিবের গ্রামের বাড়ি গিয়ে কথা হয় স্থানীয় চা দোকানদার ও অটোচালকসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারাও সবাই রাজিবের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

ছাতিয়ানি গ্রামের চা বিক্রেতা আল আমিন বলেন, “পোলামাইয়্যাডিরে দেখলে মায়া লাগে। অল্প বয়সেই এতিম হয়ে গেলগা।”

 

রাজিবদের জন্য সরকার কী করেছে?

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ‘শহীদের তালিকা’ সম্প্রতি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এতে ৮৪৪ জন ‘শহীদ’ হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। ১৯৮ নম্বরে রয়েছে রাজিব হোসেনের নাম।

তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “সরকার ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে দিছে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা দিছে। আর জেলা পরিষদ থেকে দিছে ২ লাখ টাকা।”

Manual2 Ad Code

১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থেকে মাসে মাসে টাকা পাচ্ছে রাজিবের স্ত্রী-সন্তান। আর ৫ লাখ টাকা থেকে ২ লাখ স্ত্রী, দেড় লাখ সন্তান এবং দেড় লাখ টাকা বাবা-মাকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে দেওয়া ২ লাখ টাকা এখনও ব্যাংকে রাখা আছে বলে বলেছেন রাজিবের বাবা ও স্ত্রী।

স্থানীয় কয়েকজন দাবি করেছেন, রাজিবের দুই সন্তানের জন্য সরকার থেকে যেন দীর্ঘমেয়াদী কিছু চিন্তা করা হয়। তাদের লেখাপড়া যেন বন্ধ না হয়।

 

জুলাইয়ে মারা গেলেন কত শ্রমিক?

প্রথম দফায় ৮৩৪ জন ’জুলাই শহীদের’ তালিকা গেজেটে প্রকাশ করা হয়। পরে গেজেট হয় আরও ১০ জনের।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) প্রতিবেদন বলছে, জুলাই অভ্যুত্থানে অন্তত ১১৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। মূলত ১৬ জুলাই থেকে ৪ অগাস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ তালিকা করার কথা বলছে প্রতিষ্ঠানটি।

তাদের হিসাবে, নিহতদের মধ্যে দোকান কর্মচারী ২৪ জন, পোশাক শ্রমিক ১০ জন, পরিবহন শ্রমিক ২৭ জন, নির্মাণ শ্রমিক ১০ জন এবং অন্যান্য ৪৩ জন।

বিলসের নির্বাহী পরিচালক ও সরকারের শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের তালিকাটি হালনাগাদ করা হচ্ছে। এটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা বলা যাবে না।”

বিলসের প্রতিবেদনে ১০ জন পোশাক শ্রমিক নিহতের কথা বলা হলেও গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার দাবি করেছেন, এ সংখ্যা অন্তত ২৬।

শ্রম সংস্কার কমিশনের এ সদস্য বলেন, “এই তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। আমরা সেটি শিগগিরই প্রকাশ করব।”

Manual4 Ad Code

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের দাবি, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে প্রায় ৯৭ জন সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ এবং শ্রমিক দলের নেতাকর্মী।

তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের পক্ষে গত জুনে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থনিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরীর কাছে নিহত শ্রমিকদের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।

 

Manual3 Ad Code

অতীতেও ‘আলোচনায়’ ছিলেন না শ্রমজীবীরা

স্বাধীনতার আগে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন ১১ জন; তাদের কতজনের নাম আমরা জানি–সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, “ছয় দফা আন্দোলনে ৭ জুন যে হরতাল হয়, তাতে অন্তত ১১ শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে মনু মিয়া ও মুজিবুল্লাহ ছাড়া কতজনের নাম আমরা জানি? বাকিদের নাম গণমাধ্যমেও সেভাবে লেখা হয় না।

“বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে আমার জানামতে একজন ছাত্রই মারা গিয়েছেন; বাকিরা তো ছাত্র ছিলেন না। শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা নিয়ে কেউ আলোচনা করে না, যেহেতু তারা নিজেরা আলোচনায় নাই। তারা নির্ভর করে সংবাদমাধ্যম আর রাজনীতিবিদদের ওপরে।”

জুলাই অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন ছবিতে দেখেছি, পরিবহন শ্রমিক, রিকশাচালকরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর তো পুরো কৃতিত্বই চলে গেছে ছাত্রনেতা আর রাজনীতিবিদদের হাতে।”

শ্রমজীবী মানুষদের ইতিহাস সংরক্ষণে গবেষকদের দায় কতটা–এমন প্রশ্নে মহিউদ্দিন বলেন, “গবেষকেরাতো তথ্য পেলে সেটাকে নিয়ে কাজ করতে পারেন। এখন পত্রিকাতেওতো শ্রমিকদের কেউ মারা গেলে নাম লেখা হয় না।”

পুলিশের প্রতিবেদন উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বরং প্রতিবেদন নষ্ট করে দেওয়া হয়। পুলিশের প্রতিবেদন উন্মুক্ত থাকলে গবেষকরা সেখান থেকে তথ্য পেত।

“প্রথম কথা হল, যারা মারা গেছেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দরকার। শুধু নাম নয়; তাদের নাম, বয়স, পেশা, কোথায় মারা গেছেন, কীভাবে মারা গেছেন–সব থাকা দরকার। সেই পূর্ণাঙ্গ তালিকাটা থাকলে সেটা ধরে গবেষণার কাজটা সহজ হয়।”

শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপারে মনোজগতের পরিবর্তনও জরুরি বলে মনে করেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বলেন, “আমাদের এখানে দেখবেন–বুদ্ধিজীবী কবরস্থান আছে। আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি, কিন্তু শহীদ শ্রমিক দিবস পালন করি না।

“অতীতেও কিন্তু বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নিহতের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষই বেশি ছিল। এটা আমাদের মনোজগতেই রয়ে গেছে। একটু ব্যতিক্রম হলো নূর হোসেন, তাকে নিয়ে একটু কথাবার্তা হয়। বাকিদের নিয়ে তাও হয় না।”

দরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন

শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে অবমূল্যায়ন করার ব্যবস্থাটা আগের মতই রয়ে গেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, “শুধু জুলাই অভ্যুত্থানে নয়, এর আগে ব্রিটিশ শাসনের সময়ও সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছে। তারা ভেবেছিল, জমিদার প্রথা থেকে মুক্তি পাবে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, তারা ভেবেছে পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোর শোষণ থেকে বের হতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে অবমূল্যায়ন করার ব্যবস্থা আগের মতই রয়ে গেছে।”

এবার সেই ব্যবস্থাটা ভাঙতেই সাধারণ মানুষ জুলাইয়ে পথে নেমেছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জুলাইয়েতো সাধারণ মানুষও পথে নেমেছে। তাদের বড় অংশজুড়ে ছিল শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ। কিন্তু এখনই তাদের কথা সবাই ভুলতে বসেছে।

“আমাদের যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে; এমনকি রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনেও শ্রমিকরা অংশ নিয়েছেন। পরবর্তী সময়েও যত আন্দোলন হয়েছে, সেখানেও শ্রমিক শ্রেণীর বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধেও শ্রমিক, কৃষক আর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অংশগ্রহণই সবচেয়ে বেশি ছিল। এবারও লোকজন পথে নেমেছে এই ব্যবস্থাটা ভাঙার প্রত্যাশা থেকেই। মেহনতি মানুষ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তারা ভেবেছেন, তাদের মুক্তি হবে। মুক্তি তো হয়নি। তাদের যে অবমূল্যায়ন হয়েছে, তা ব্যবস্থারই অংশ। এই ব্যবস্থাটা হল পুঁজিবাদী ব্যবস্থা।”

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণের স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি। কর্মসংস্থান, মজুরি ও নিরাপত্তা–এ তিন বিষয়ে সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিত। শ্রমিকরা যেন একটা সম্মানজনক অবস্থায় বাঁচতে পারে। শ্রমজীবী মানুষের সমস্যার সমাধান হলে পুরো দেশের মানুষের সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। ক্ষমতায় যারা থাকেন, তারা শ্রমজীবী মানুষের কথাটা ভুলে যান।”

গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, “জুলাই আন্দোলনকে অভ্যুত্থানে রূপ দিয়েছে মূলত শ্রমজীবী মানুষ। তারা এ আন্দোলনে কেন জড়িয়েছিলেন, তারা চেয়েছিলেন, যেন মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারেন। পোশাক কারখানার শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিকদের বড় অংশ কিন্তু আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। তাদের অনেকে জীবন দিয়েছে। শ্রমিক যারা নিহত হয়েছেন, তাদের স্বীকৃতি যেন দেওয়া হয়।

“এখন জুলাই জাদুঘর হচ্ছে। অনেক রকম স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে। শ্রমিকদের স্মরণ করে স্মৃতিস্তম্ভ করা উচিত। জুলাই জাদুঘরে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের ইতিহাস সংরক্ষণ করা উচিত। শ্রমিকদের মজুরি, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি। শ্রমিকদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও হওয়া উচিত।”

অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “জুলাইয়ে যেসব শ্রমজীবী মানুষ জীবন দিয়েছেন, তাদের স্বীকৃতি দেওয়াটা ভীষণ জরুরি। একটা লোক অধিকারের জন্য জীবন দিয়েছে, কিন্তু তার স্বীকৃতিই মিলছে না। বায়ান্নতে মেলেনি, একাত্তরে মেলেনি–এই সংস্কৃতির পরিবর্তন হওয়া দরকার।

“কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখলাম যে শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। আসলে বেশি বা কম তো বিষয় না; একজনও যদি মারা যায়, সেই লোকটাকে তো তার পরিবার হারাল। হয়ত সেই লোকটিই ছিল পরিবারের ভরসার জায়গা। ওই একজনের মৃত্যুতে তো পুরো একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। স্বীকৃতির পাশাপাশি সেই পরিবারটির কথাও আমাদের ভাবতে হবে; স্বীকৃতি এবং সেই নিহতের পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে হবে। এজন্য আহত ও নিহতদের সঠিক তালিকা হওয়াটা জরুরি।”

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code