প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সরবরাহকারীরা আরামে কৃষকরা ঋণের জালে

editor
প্রকাশিত আগস্ট ১৯, ২০২৫, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ
সরবরাহকারীরা আরামে কৃষকরা ঋণের জালে

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির বিপ্লব ঘটে গেছে। কিন্তু সেসবের ধারে-কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা নেই কৃষকের। বিশেষ করে প্রান্তিক চাষিদের। তারা এখনো ব্যবহার করেন মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি। সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন

কৃষিতে যন্ত্রপাতির বিপ্লব ঘটানোর। যন্ত্রপাতি কেনার এই প্রকল্পে সরকারের নীতিনির্ধারকদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি নানা কৌশল নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের কৃষক দরিদ্র তো কী হয়েছে? সরকার ভর্তুকি দেবে। তারা কম দামে সেসব যন্ত্রপাতি পাবে।’

কিন্তু মন্ত্রীর স্বপ্নে বিভোর করার আড়ালে ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের সুবিধা দেওয়া। দিয়েছেনও তাই। কিন্তু নিম্নমানের যন্ত্রপাতি গছিয়ে ঋণের জালে আটকে দিয়েছেন কৃষকদের। সাবেক কৃষিমন্ত্রী এখন জেলে। এসব যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় যারা লুটপাটের আয়োজন করেছেন, তারাও দুর্নীতি প্রতিরোধীদের জালে। তাদেরও শিগগির জেলে যেতে হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শ্রমিকসংকট মোকাবিলা, দুর্যোগের সময় দ্রুত ধান-গমের মতো ফসল উত্তোলন, খরচ কমিয়ে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি কমিয়ে আনা ও কৃষি আধুনিকায়নের প্রয়োজনে সরকার পাঁচ বছর আগে ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পটি’ শুরু হয়েছিল। যেখানে ১২টি ক্যাটাগরিতে ১৫টি ছোট-বড় যন্ত্রে সরকার নির্দিষ্ট হারে ভর্তুকি দিয়েছে। এ ভর্তুকিতেই চলেছে হরিলুট, যেখানে সবচেয়ে বেশি সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কম্বাইন হার্ভেস্টর যন্ত্রে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই প্রকল্প অফিস ও বিভিন্ন অঞ্চলের ৯ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তাদের অনিয়মের বিচার চলছে। তবে সরবরাহকারী যেসব প্রতিষ্ঠান এসব যন্ত্র সরবরাহে জড়িত, তারা প্রত্যেকেই অনিয়ম করে হাজার কোটি টাকার বেশি সরকারি ভর্তুকি লোপাট করলেও তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষিযন্ত্র বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে কম্বাইন হার্ভেস্টর বিতরণে। কম্বাইন হার্ভেস্টর হচ্ছে ধান ও ভুট্টা কাটা, মাড়াই এবং একই সঙ্গে প্যাকেটজাত করার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। যন্ত্রটি সরবরাহে প্রকল্পের আওতায় শুরু থেকেই সরবরাহকারী হিসেবে নিবন্ধিত ছিল ১৪টি কোম্পানি। সরবরাহকারী সবগুলো কোম্পানির বিরুদ্ধেই রয়েছে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি ভর্তুকি আত্মসাতের অভিযোগ। যেখানে যন্ত্র বিতরণ করা ছাড়াই ভুয়া বিল তোলা, একই যন্ত্র দেখিয়ে একাধিকার ভর্তুকির টাকা উত্তোলন ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প অফিস থেকে ৮৫৪টি কম্বাইন হার্ভেস্টরের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। যেখানে যন্ত্রগুলোর বিপরীতে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার যন্ত্রের দামের ৫০-৭০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিয়েছে। এ তালিকায় সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো এই ৮৫০ যন্ত্রের বিপরীতে একাধিকবার বিল উত্তোলন করেছে। একই সময়ের মধ্যে আরও ৯৭১টি যন্ত্রের ভর্তুকির বিল নেওয়া হয়েছে, যে যন্ত্রগুলোর মাঠে কোনো অস্তিত্বই নেই।

প্রকল্প অফিস থেকে একই যন্ত্র দেখিয়ে একাধিকবার বিল নেওয়ার ৮৫৪টি যন্ত্রের যে তালিকা কৃষি মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে সরবরাহকারী ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামই রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ, আবেদিন ইকুইপমেন্ট, চিটাগাং বিল্ডার্স অ্যান্ড মেশিনারি, মেটাল অ্যাগ্রিটেক, এসিআই মোটরস, এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাকডোনাল্ড ক্রপ কেয়ার, এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্রিনল্যান্ড টেকনোলজিস, উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলামার্ক ও আদি এন্টারপ্রাইজ। ভর্তুকির টাকা লোপাটে এই প্রতিষ্ঠানগুলো জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কৃষি মন্ত্রণালয়।

প্রকল্প অফিসের সঙ্গে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর চুক্তি এবং প্রকল্প প্রস্তাবনার বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো কারণে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে প্রকল্প অফিস তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে, করতে পারে কালো তালিকাভুক্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘সরবরাহকারী যারা অনিয়ম করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য আমরা দুদকে চিঠি দিয়েছি। একই সঙ্গে আমরা এসব সরবরাহকারীকে কালো তালিকাভুক্ত করব। এ নিয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

Manual3 Ad Code

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার কৃষি যান্ত্রিকীরকণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়ন করতে চেয়েছিলেন। অঞ্চলভেদে প্রতিটি হার্ভেস্টরে সরকার ১৫ লাখ ৭৫ হাজার (সমতলে সর্বোচ্চ) থেকে ২২ লাখ ৫০ হাজার (হাওর ও উপকূলে সর্বোচ্চ) টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। একেকটি যন্ত্র কোম্পানিগুলো বিক্রি করেছে ২৮-৩৮ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে।

সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের পরিচালক মঞ্জুর উল আলম জানান, গত ৩০ জুন ৮৫১টি যন্ত্রের তালিকা কৃষি মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর বিপরীতে একাধিকবার বিল তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে আরও ৯৭১টি যন্ত্রের তালিকা করা হয়েছে, যেগুলোর মাঠে কোনো অস্তিত্বই নেই।

ভুয়া বিল তুলে নেওয়ার চিত্র উঠে এসেছে কৃষি ও পরিবেশ অডিট অধিদপ্তরের এক আপত্তিতে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ২৬টি আপত্তি পাঠিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। যেখানে ১ হাজার ৭১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। এর ২৫ নম্বর আপত্তিতে বলা হয়েছে একই কৃষিযন্ত্র (কম্বাইন হার্ভেস্টর) বিভিন্ন অর্থবছরে একাধিকবার বিতরণ দেখিয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি) দেওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৯৫ কোটি টাকার বেশি। একইভাবে ২৪ নম্বর আপত্তিতে বলা হয়েছে, আমদানি করা কম্বাইন হার্ভেস্টর অপেক্ষা বেশিসংখ্যক হার্ভেস্টর বিতরণ দেখিয়ে সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো ৭৫৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছে। অর্থাৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলো ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ভর্তুকি তুলে নিয়েছে।

Manual7 Ad Code

অডিট বিভাগের তথ্য বলছে, কম্বাইন হার্ভেস্টর বিতরণে কোম্পানিগুলো বিভিন্নভাবে সরকারের অর্থ তুলে নিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। এর মধ্যে প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে যন্ত্রটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বেশি, অনুমোদিত যন্ত্রের বাইরে নিম্নমানের যন্ত্র আমদানি, চেসিস নম্বর ও ইঞ্জিন নম্বরের জালিয়াতি, ৫০ শতাংশ ভর্তুকির জায়গায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকি উত্তোলন করেছে কম্বাইন হার্ভেস্টর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

কৃষিযন্ত্র বিতরণে অনিয়মের কথা স্বীকারও করেছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে যে অনিয়ম হয়েছে, তার তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

Manual4 Ad Code

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩০২০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে প্রকল্পটি যখন অনুমোদন হয়, তখন কৃষিমন্ত্রী ছিলেন ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি অবশ্য দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই জেলে রয়েছেন। তবে শুরু থেকেই এই প্রকল্পের যে অনিয়ম চলছিল, সেগুলোর তদন্তে নানাভাবেই বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ফলে বিভিন্ন সময় যন্ত্র বিতরণে ভর্তুকি লোপাট নিয়ে অভিযোগ থাকলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে এগোয়নি। দুদক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে। সেই তদন্তের নেতৃত্বে ছিলেন দুদকের উপপরিচালক মো. ইয়াসির আরাফাত। বিভিন্ন সময় প্রকল্প অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এই কর্মকর্তা। কিন্তু তিনি কোনো চূড়ান্ত কোনো প্রতিবেদন দেননি। এ অবস্থায় আবার নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে গত জুলাই থেকে। যেখানে দুদকের উপসহকারী পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) মো. আসাদুজ্জামানের স্বাক্ষরে নতুন করে প্রকল্পের তথ্য চাওয়া হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে। এ অবস্থার মধ্যে দুদক একটি চিঠি দিয়ে প্রকল্প অফিসের সাবেক ১২ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শুনানির জন্য ডেকেছে। যেখানে সাবেক তিন প্রকল্প পরিচালক রয়েছেন। তারা হলেন প্রথম প্রকল্প পরিচালক মো. বেনজীর আলম, মো. তারিক মাহমুদুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ সফিউজ্জামান রয়েছেন।

 

Manual8 Ad Code

ঋণের ফাঁদে নিঃস্ব হচ্ছেন কৃষক

কম্বাইন হার্ভেস্টর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ভুয়া ভর্তুকির টাকা আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হয়নি। কিস্তিতে যন্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো শত শত কৃষককে ঋণের ফাঁদে ফেলেছে। চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে কৃষকের কাছ থেকে ডাউনপেমেন্ট নিয়ে কিস্তিতে যন্ত্র বিক্রি করেছে। যে যন্ত্র এখন অনেক কৃষকের গলার কাঁটা। নিম্নমানের যন্ত্র হওয়ায় অনেকেই ঠিকমতো কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। কিস্তি দিতে না পারলেই কৃষকের বাড়ি বা মাঠ থেকে যন্ত্রটি উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিগুলো।

ভর্তুকি মূল্যে যন্ত্র বিক্রির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকলেও যন্ত্র তুলে নেওয়ার কাজটি এখনো করছেন সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। অথচ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর কিস্তিতে যন্ত্র বিক্রি করারই কোনো সুযোগ নেই।

২৭ জুলাই প্রকল্প অফিসে চিঠি পাঠায় মানিকগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়। সেই চিঠিতে বলা হয়, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে কৃষক হামিদুর রহমান। তিনি এই প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদি এন্টারপ্রাইজের ডিএফ ইসাকি ব্র্যান্ডের একটি কম্বাইন হার্ভেস্টর কিনেছিলেন। যেখানে সরকারি ভর্তুকি ছিল ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। গ্রাহক লিখিত অভিযোগ করে জানিয়েছেন, তার কিছু টাকা বকেয়া থাকায় কোম্পানির লোকজন সম্প্রতি জোরপূর্বক হার্ভেস্টরটি উঠিয়ে নিয়ে গেছে।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কৃষক মমিন সরকার আরও দুই কৃষকের সঙ্গে এসিআইয়ের ইয়ানমার ব্র্যান্ডের দুটি কম্বাইন হার্ভেস্টর কেনেন। যেগুলোর প্রতিটির দাম ২৯ দশমিক ৫০ লাখ টাকা করে বলে জানান। হার্ভেস্টর দুটিতে সরকারি ভর্তুকি বাদে তাদের পরিশোধ করতে হতো ৩১ লাখ টাকা। কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডাউনপেমেন্ট ও কিস্তি বাবদ দুটি হার্ভেস্টরের বিপরীতে এই তিন কৃষক ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। শেষদিকে এসে যন্ত্র দুটি বারবার নষ্ট হওয়ার কারণে তাদের আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। তখন কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন তারা। এ অবস্থায় কোম্পানির লোকজন দুটি হার্ভেস্টরই কৃষকের কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

একই কাজ এসিআই এ বছরের শুরুতেও করেছে। আগৈলঝাড়া উপজেলার কৃষক বাদল বল্লভের কিস্তির টাকা না পেয়ে ফেব্রুয়ারিতে যন্ত্র নিয়ে নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি অফিসের সামনে মানববন্ধনও করেছেন।

এ ধরনের অভিযোগ অধিকাংশ কোম্পানির বিরুদ্ধেই রয়েছে। বাংলামার্ক, আদি, এসিআইসহ কয়েকটি কোম্পানি যন্ত্র বিক্রি করা যন্ত্র কৃষকের কাছ থেকে তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে সামনের সারিতে ছিল।

এসিআই এগ্রোবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এফ এইচ আনসারি বলেন, ‘অনেকে যন্ত্র নিয়েছেন, যাদের এটি প্রয়োজনই নেই। তারা এটি নিয়ে ফেলে রেখেছেন আবার কিস্তির টাকাও পরিশোধ করছেন না। সে ক্ষেত্রে আমরা কিছু যন্ত্র তাদের কাছ থেকে নিয়ে এসে অন্যত্র বিক্রি করে আমাদের টাকা রিকভারি করেছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের ভর্তুকি বন্ধ থাকায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। অনেক যন্ত্র আমরা আমদানি করেছি, কিন্তু এখন ভর্তুকি না থাকায় বিক্রি করতে পারছি না।’

প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৪০ হাজারের মতো নানা ধরনের যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কম্বাইন হার্ভেস্টর বিতরণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ১০০টির বেশি, যেখানে লক্ষ্য ছিল ১৫ হাজার বিতরণের। এ অবস্থায় প্রকল্প অফিস থেকে নতুন করে এক বছরের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে। কারণ প্রকল্পের এখনো অব্যবহৃত ৫২৮ কোটি টাকা রয়েছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code