প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

কাছেই ভোট পেছনে কথা

editor
প্রকাশিত আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ণ
কাছেই ভোট পেছনে কথা

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

‘ফেব্রুয়ারি স্টেশনের’ দিকে এগিয়ে চলছে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ট্রেন। তবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে শীতল সম্পর্ক টের পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিরোধিতা করে এনসিপি নেতারা শুরু থেকে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এখনো ভেতরে-ভেতরে রয়ে গেছে এর সুর। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে দাবি বা শর্ত নিয়ে যেসব বক্তব্য আসছে, তাতে থাকছে সরকারের সমালোচনা। তবে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবেই জানিয়ে পাল্টা বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে সরকারের একাধিক উপদেষ্টাকে। এসবই শীতল সম্পর্কের প্রকাশ।

Manual3 Ad Code

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এনসিপির ওপর থাকা অগাধ আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে অন্তর্বর্তী সরকারের। সেই চিড় ধরা আত্মবিশ্বাস থেকে নির্বাচন নিয়ে জামায়াত ও এনসিপির বিরোধিতাকে তেমন আমলে নিচ্ছে না। গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান দাবি করে এনসিপি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি করে জাতীয় নির্বাচন ঢিলে করতে চায় জামায়াত।

 

তবে সরকারের বড় একটি অংশ মনে করে, ছাত্রদের আন্দোলনের ফসল তাদের সরকার। কিন্তু গত এক বছরে নানা কাজে জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে শুরু করেছে ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত নতুন রাজনৈতিক শক্তি এনসিপি। অন্তর্বর্তী সরকার টের পেতে শুরু করেছে, গত এক বছরে এনসিপির ওপর আসা টানা অভিযোগ দলটির জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। তাই এনসিপির ওপর ভর করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরও দেরি করতে পারবে সেটি এখন আর মনে করে না সরকার।

 

Manual6 Ad Code

সরকার-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলে, এই পরিস্থিতিতে চাইলেও নির্বাচন দেরি করার মতো যথেষ্ট সুযোগ সরকারের হাতে নেই। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ধীর গতি অনুসরণের রাস্তায় নেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন নিয়ে ধীর গতির রাজনীতি আরও করুণ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে এমন দুর্ভাবনা পেয়ে বসেছে সরকারের একটি বড় অংশের ভেতরে। অতিসম্প্রতি তারা সিদ্ধান্তে এসেছে, নির্বাচন দিয়ে সরে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমত্তার কাজ।

Manual6 Ad Code

 

সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, নির্বাচন দেরি করার রাজনীতি থেকে সরে আসতে হয়েছে সরকারকে। জনগণের ভেতরে নির্বাচনে প্রত্যাশা ও বড় দল বিএনপির নির্বাচনী চাপ সরকারের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকপাড়াও সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিতেই হয়েছে প্রধান উপদেষ্টাকে।

 

Manual2 Ad Code

সূত্র জানায়, দেশের অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি এগুলোর কোনোটাই অনুকূল পরিবেশে নেই। বিদ্যমান এত সংকট কাটিয়ে ওঠার মতো রাজনৈতিক শক্তিও অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে নেই। নতুন রাজনৈতিক শক্তি এনসিপির জনপ্রিয়তা অনেকাংশে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে গেলে এসবের দায় নিতে হবে। তাই নির্বাচন দিয়ে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর করাই হবে সরকারের জন্য উত্তম উপায়।

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে বিএনপির মতো শক্তিশালী রাজনৈতিক দল দ্বিতীয়টি নেই। তাদের সঙ্গে বড় জনসমর্থন রয়েছে। তাই আগের সব কৌশল বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির দাবির প্রতি ভেতরে সমর্থন রেখেছে। নির্বাচন পাশ কাটিয়ে এখন আর চলতে চাইছে না। দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এই মুহূর্তে প্রত্যাশা হলো দ্রুত নির্বাচন আদায় করে নেওয়া। ডিসেম্বর থেকে বড়জোর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিএনপি জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেছে। তবে এ সময়ে জামায়াত, এনসিপিসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে তেমন আগ্রহ নেই। তারা নির্বাচনের চেয়ে বেশি আগ্রহী সংস্কারের দিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার এতদিন সংস্কারকে প্রাধান্য দিয়ে দ্বিতীয় চিন্তায় নির্বাচন রেখেছে। অতিসম্প্রতি মনে করছে, নির্বাচন দিতেই হবে। জনগণের ও বিএনপির নির্বাচনের চাপ দূরে রেখে আর বেশি সময় নেওয়া অসম্ভব। এ ভাবনা থেকে এনসিপি ও জামায়াত নির্বাচনের বিরোধিতা করে নানা ইস্যু সামনে নিয়ে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। সরকার মনে করে, এনসিপি ও জামায়াতকে দিয়ে বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে এনসিপি অংশগ্রহণের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। যদি সরকার সামনে নতুন সংবিধান ও জুলাই সনদের বিষয় অপরিপূর্ণ রাখে এবং তা বাস্তবায়ন না করে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, সে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এনসিপির সংশয়ের জায়গা রয়েছে।’

গতকাল রাজধানীর বাংলা মোটরে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশে যে নির্বাচন হবে, তার মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটা নতুন শাসনতান্ত্রিক কাঠামো পাবে। এই আকাক্সক্ষা যদি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ না হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো মানে থাকে না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারি কিংবা তার আগেই হতে পারে। কিন্তু সেই নির্বাচনের ধরনটা কী রকম হবে, সেটি জাতির কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। আমি যদি বিদ্যমান সংবিধানকে বহাল রেখে সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তাহলে ওই সংবিধানের মধ্য দিয়ে এ দেশে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা থেকে যায়। এ কারণেই আমাদের দাবি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে। নতুন সংবিধানের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যদি সামনের নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে এনসিপি যেকোনো সময় সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, সেগুলো শুধু সংসদ নির্বাচন করার কথা বলছে। সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো পরের সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ কারণেই আমরা নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়েছি। সরকার একটি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে নতুন সংবিধান উপহার দিতে পারে।’

কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, এই বিতর্ক নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেন, ‘আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সংবিধানে নেই। সংবিধানের বাইরে আমরা যেতে পারি না। এটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আমি এর মধ্যে ঢুকতে চাই না। যদি আইন পরিবর্তন হয়, তাহলে হবে। সিইসির এ বক্তব্য সরকারের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে তোলে।’ গতকাল শনিবার রাজশাহী আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (আরপিএটিসি) হলরুমে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গণতন্ত্রের ভাষা হচ্ছে মানুষ যাকে পছন্দ করবে, তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। পিআরের ভাষা হচ্ছে মার্কার মধ্যে ভোট দেবে, কে এমপি হবে কেউ জানে না।

গতকাল শনিবার কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পিআরে গণতন্ত্র নেই। কেউ কেউ এখনো পিআর পিআর বলে চিৎকার করছেন, উদ্দেশ্য কিন্তু পিআর না; পিআর পিআর করে যদি কিছু পান। যারা চিৎকার করছেন, আপনারা আসুন, আলোচনা করি, কীভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ ১৬ বছর ধরে রক্ত দিয়েছে ভোটের অধিকারের জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য, সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য। সেসব অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code