প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

সড়কে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ব্যর্থ রাশি রাশি মামলাও

editor
প্রকাশিত আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ণ
সড়কে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ব্যর্থ রাশি রাশি মামলাও

Manual5 Ad Code

 

Manual1 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual6 Ad Code

প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক চালকের বিরুদ্ধে মামলা ও গাড়ি ডাম্পিং করার পরও শৃঙ্খলা ফিরছে না ঢাকার রাস্তায় বরং পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার বেপরোয়া চলাচল পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে-শুধু জরিমানা করে কখনোই রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। ছোট গাড়ি নিরুৎসাহিত করে বড় বাসের সংখ্যা বাড়ানোসহ অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভেঙে পড়েছিল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে ভেঙে পড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে। ক্রমে পরিস্থিতির উন্নতি হলে ট্রাফিক পুলিশ পুরোদমে এখন রাস্তায় কর্তব্য পালন করছেন। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। যেখানে-সেখানে পার্কিং, যাত্রী তুলতে লোকাল বাসের ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিযোগিতা, মূল সড়কে ব্যাটারি রিকশার বেপরোয়া চলাচল, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের অনীহাসহ বিভিন্ন কারণে এখন বিশৃঙ্খল অবস্থা ঢাকার রাজপথ। সেই সঙ্গে যখন-তখন বিভিন্ন দাবিতে রাজপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশের কারণে পরিস্থিতি আরও নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে।

Manual4 Ad Code

ট্রাফিক সার্জেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর অনেক যানবাহন চালকদের মধ্যে বেপরোয়া মনোভাব চলে এসছে। পূর্বের তুলনায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের হারও এখন অনেক বেশি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খুব বেশি কঠোরতাও দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকেও নির্দেশনা আছে-সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করার জন্য। একই সঙ্গে মামলা করারও চাপ আছে। তারপরও অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও ছাড় দেন অনেক সার্জেন্ট। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে এত বেশিসংখ্যক যানবাহনের চালক ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করেন যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে সারা দিন শুধু মামলাই করতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, আগে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মামলা করার টার্গেট দেওয়া হতো। এ জন্য তখন চাপ ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সেই চাপ ছিল না। তবে সম্প্রতি মামলা না করার কারণে অনেককে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাই সম্প্রতি মামলার সংখ্যা বেড়েছে।

তবে মামলা দেওয়ার জন্য সার্জেন্টদের কোনো লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার কথা অস্বীকার করে মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের ডিসি রফিকুল ইসলাম বলেন, এরকম কোনো টার্গেট দেওয়া হয় না।

বাংলাদেশের ট্রাফিক আইন অনুযায়ী, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, অবৈধ পার্কিং, উল্টোপথে চালানো, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি, ভুয়া লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি, ট্রাফিক সংকেত অমান্য, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, যত্রতত্র ইউটার্ন নেওয়া, সিটবেল্ট না বাঁধা, হেলমেট ব্যবহার না করা, চলন্ত গাড়িতে চালকের ফোনে কথা বলা, সড়কে প্রকাশ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ বেশ কয়েকটি কারণে জরিমানা করে ট্রাফিক পুলিশ।

ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অপরাধে রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে দেড় সহস্রাধিক মামলা হচ্ছে। ডাম্পিং করা হচ্ছে ২১৭টি যানবাহন আর রেকার করা হচ্ছে ৬৬টি যানবাহন।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে ট্রাফিক আইন অমান্যের অপরাধে ৩৩ হাজার ১২৭টি মামলা হয়েছে। ডাম্পিং করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪১টি গাড়ি। এ সময় রেকার করা হয় এক হাজার ৩২২টি যানবাহন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০২৩ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশন করা বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ২০ লাখ ২৯ হাজার ৯৭৯টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬৬টি।

ঢাকা পরিবহন কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যানজটের কারণে রাজধানীবাসীর প্রতিদিন প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জরিমানা কিংবা মামলা কোনো সমাধান নয়।

Manual7 Ad Code

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মামলা, জরিমানাকে ট্রাফিক পুলিশ তাদের অর্জন হিসেবে দেখছে। এটা যদি সত্যি হতো তাহলে তো সড়কে অনেক আগেই শৃঙ্খলা ফিরে আসত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তা আসেনি।

তিনি বলেন মামলা, জরিমানা দিয়ে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। এ জন্য পদ্ধতিগত পরিবর্তন প্রয়োজন। ঢাকার সড়কে ছোট গাড়ি নিরুৎসাহিত করে বড় গাড়ি উৎসাহিত করার কথা সবাই বলে এলেও তা করা হচ্ছে না বরং ছোট যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তিনি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, ২০১৫ সালে যেখানে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ এখন হয়েছে ৬০ লাখ। ১০ লাখ অটোরিকশা আর ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন রাজধানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এসব বন্ধের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, উন্নয়নের দুষ্টচক্রে সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভার বাড়ছে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে সড়কে গাড়ি বাড়ায় যানজট ও দূষণও বাড়ছে।

আদিল মুহাম্মদ খান আরও বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করা, ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। একই সঙ্গে কার ফ্রি স্কুল জোন গড়ে তোলা, পথচারীবান্ধব রাস্তা তৈরি, বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের সেবা ও পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মেগাসিটির দুই কোটিরও বেশি মানুষের জন্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রয়েছে ৪ হাজার। রাজধানীর ৩৩৯টি পয়েন্টে ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া রাজধানীতে বর্তমানে ৬০০ শিক্ষার্থী ট্রাফিক পুলিশের সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন বলে জানা যায়। রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দুই শিফটে কাজ করেন। প্রথম শিফট সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বেলা আড়াইটা। দ্বিতীয় শিফট বেলা আড়াইটা থেকে রাত ১১টা। এ ছাড়া রাজধানীর বেশ কিছু পয়েন্টে রাত সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা, আবার কোনো পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টা ট্রাফিক সদস্য থাকে। পুলিশ সদস্যরা হাতের সংকেতে রোদ, বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code