প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস: সংলাপ, সংস্কার ও বিচারে মনোযোগ সরকারের

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৮, ২০২৪, ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস: সংলাপ, সংস্কার ও বিচারে মনোযোগ সরকারের

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। পরে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। আজ ৩ মাস পূরণ হলো অন্তর্বর্তী সরকারের। দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে দেশের অর্থনীতি সচল ও বিভিন্ন সেক্টরের সংস্কারে মনোযোগ দিয়েছে এই সরকার।

 

পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকাজ শুরু, সহিংসতায় অচল মেট্রোরেলের মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন চালু, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও আটটি জাতীয় দিবস বাদ দেওয়াসহ নানান কাজে ব্যস্ত ছিল অন্তর্বর্তী সরকার।

 

তবে প্রথম দিকে নানান চাপে ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকারের কাছে একের পর এক দাবি দাওয়া নিয়ে হাজির হতে থাকেন বিভিন্ন মহলের লোকজন। কেউ আসেন চাকরি জাতীয়করণের জন্য, কেউ গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে। এছাড়াও ঘটেছিল মব জাস্টিজের ঘটনা, শিক্ষকদের পদত্যাগ, সচিবালয়ে আনসারের অবরোধ কর্মসূচি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ নিয়েও বেশকয়েক দিন আন্দোলন চলছিল। শেষমেশ সেটা রুখতেও সফল হন সরকার। সবই সামাল দিতে হয়েছে এই সরকারকে।

Manual3 Ad Code

এদিকে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে টানাপড়েন এরই মধ্য শুরু হয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ সংলাপে নির্বাচনই প্রাধান্য পেয়েছে। তারা এই সরকারের কাছে নির্বাচন ও সংস্কারের একটি রোডম্যাপ চেয়েছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো রোডম্যাপ দেয়নি। বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য দুটি কমন চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন তা হলো- দ্রব্যমূল্য এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা। এর বাইরে সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন তারা।

Manual4 Ad Code

 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। অনেকে আবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। দলীয় নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ ও উচ্চপর্যায়ের আমলারাও গা-ঢাকা দেন।

 

হাসিনা সরকারের নৃশংস দমন-পীড়নে প্রাণ হারায় শিশু-কিশোর-শিক্ষার্থী-নারীসহ হাজারো মুক্তিকামী মানুষ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে জনতার এ বিজয়কে দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন আন্দোলনকারীরা।

 

আওয়ামী সরকারের অবসানের পর মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে রাষ্ট্র সংস্কার ও অর্থনীতি পুনর্গঠন করে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের ব্যাপারে বিপুল আশা ও উদ্দীপনা। দীর্ঘ স্বৈরশাসনে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রায়, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় লুণ্ঠনে অর্থনীতিও বিপর্যস্ত। সেই জায়গাগুলো সংস্কারের জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করতে নেওয়া হচ্ছে উদ্যোগ। এরই মধ্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তা হলো- সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। এছাড়া গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

 

 

গণহত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

 

এদিকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা নিয়ে বিচারকাজ শুরু করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক অভিযোগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী-ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, দীপু মনি, আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা, পুলিশের তৎকালীন আইজিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য, র‍্যাবের তৎকালীন ডিজি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের আসামি করা হয়।

 

বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ অন্তর্বর্তী সরকারের

 

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, সেই সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে বড় বড় ঋণখেলাপি ও লুটেরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দখল থেকে মুক্ত করে পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন; দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ ব্যক্তির তালিকা তৈরি ও ৭৯ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু; ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ অর্থাৎ কালোটাকা সাদা করার বিধান বাতিল; দায়মুক্তি আইন নামে পরিচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন চলমান সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা; গণশুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত; রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প কিংবা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে-এমন প্রকল্প পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত।

এছাড়া বলপূর্বক গুম হওয়া থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর ও বিগত সরকারের আমলে সংগঠিত গুমের ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন; আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনা জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন; মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী স্বর্ণা দাশ নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানানো ও দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

Manual4 Ad Code

 

 

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক

 

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট ছাড়া অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত বৈঠক করছেন। সেখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা সাক্ষাৎ করেন। দলগুলোর প্রতিনিধিরা বৈঠকে রাজনীতিতে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, সংস্কার এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। এছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

 

এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গত ৪ সেপ্টেম্বর সচিব সভা হয়। ওই সভায় তিনি সিনিয়র সচিবদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন।

Manual2 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code