প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

নতুন ছাপানো নোটের দেখা নেই

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ণ
নতুন ছাপানো নোটের দেখা নেই

Manual7 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নতুন নোট ছাপা হয়েছে। কিন্তু ঢাকের শব্দ বাহক পর্যন্ত পৌঁছায়নি। নতুন ছাপানো নোট বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাবে কীভাবে? নতুন নোট ছাপানোই হয়েছে কম। মাত্র ৫২০ কোটি টাকার বিভিন্ন নোট ছাপা হয়েছে। অথচ এক ঈদেই নতুন নোট ছাড়া হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার।

Manual8 Ad Code

নতুন নোট বাজারে না থাকার দুটি কারণ জানা গেছে। এর একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে এ ভয়ে নতুন নোট ছাপা হচ্ছে না। ভল্টে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত বিপুল পরিমাণ নোটও নতুন নোট না ছাপানোর অন্যতম কারণ।

নতুন নোট বাজারে কম থাকায় তা নিয়ে নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। নতুন নোট পেলে মানুষ এখনো দ্বন্দ্বে পড়ে। সন্দেহের চোখে তাকায়। এটিএম বুথগুলোতে এখনো পুরনো ছেঁড়া-ফাটা নোট দেওয়া হচ্ছে। অথচ নতুন নোট বাজারে ছাড়ার তিন মাস পরও এ ধরনের পরিস্থিতি থাকার কথা নয়।

Manual5 Ad Code

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ভল্টে থাকা ছবি সংবলিত নোটের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর বাজারে নতুন নকশার নোট ছাড়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যে পরিমাণ নোট কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফিরে আসছে, শুধু তার মূল্যমানের সমপরিমাণ নতুন নকশার নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। পাশাপাশি বর্তমানে টাকা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে কোনো ঋণ দিচ্ছে না। ফলে বিপুল পরিমাণে নোট বাজারে আসছে না। তাছাড়া এভাবে বেশি নোট বাজারে ছাড়লে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, সে কারণে হিসাব করে নতুন নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

গত বছর ৫ আগস্টের পালাবদলের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত নোট বাজার থেকে প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিল আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে ভল্টে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত নোট বাজারে না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে টাকার নতুন নকশা প্রণয়ন করে তা বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর শেখ মুজিবের ছবি বাদ দিয়ে নতুন নোটের নকশা তৈরির অনুরোধ জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বাজার থেকে নোট প্রত্যাহার করা হলে অর্থনীতিতে নানা অস্থিরতা তৈরির শঙ্কা থাকায় সে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাছাড়া এটি ব্যয়সাপেক্ষ। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভল্টে থাকা নোট বাজারে ছাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে মৌন থাকে। এসব নোট বাজারে ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পর নতুন নোটের নকশা তৈরির কাজ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশেষে গত ২ জুন বাজারে ছাড়া হয় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে ছাপানো নতুন নোট। মূলত ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে এ নতুন নোট ছাড়া হয়। ওই সময় বাজারে আসে নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট। তবে সরবরাহ করা হয় মাত্র ৫২০ কোটি টাকার, যেখানে সাধারণত ঈদের আগে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহায় সরবরাহ করা হয় মাত্র ৫২০ কোটি টাকার। এতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হওয়ায় নতুন টাকার ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। ফলে বেশি দামে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে নতুন নোট। অন্যদিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঈদুল ফিতরে কোনো নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়নি। কিন্তু নতুন নোটের নকশা তৈরি করে সেটি বাজারে আনতে এক বছর পার হয়ে গেছে। তারপরও বাজারে নতুন নোট সহজলভ্য হয়নি।

জুনে নতুন নকশার নোট বাজারে ছাড়ার পর তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ নোট বাজারে সহজলভ্য হচ্ছে না। ভল্টে থাকা পুরনো নকশার হাজার হাজার কোটি টাকার নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। এগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে নতুন করে যদি ব্যাপক হারে নোট ছাপানো হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। সে কারণে যে পরিমাণ নোট ছেঁড়া-ফাটা ও পুরনো নোট বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফেরত আসছে, শুধু সেগুলোর মূল্যমানের সমান নোট নতুন করে ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এটির পরিমাণ খুব কম হওয়ায় বাজারে নতুন টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। আর ভল্টে থাকা শেখ মুজিবের ছবি সংবলিত নোট বাজারে ছাড়া হলে আন্দোলন হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সে নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এমনকি ছবি সংবলিত কী পরিমাণ নোট ভল্টে আছে, সেটিও প্রকাশ করা হচ্ছে না।

এদিকে গত ১২ আগস্ট বাজারে ছাড়া হয় ১০০ টাকার নতুন নোট। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষরিত ১০০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটটির দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪০ মিলিমিটার এবং প্রস্থ ৬২ মিলিমিটার। নোটটি ১০০ শতাংশ সুতি কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখ থাকছে। নোটটিতে থাকছে নীল রঙের আধিক্য। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নোটের সামনে বাঁ-পাশে থাকছে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদের ছবি। নোটের মাঝখানের ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা-কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলার ছবি মুদ্রিত রয়েছে। নোটের পেছন ভাগে আছে সুন্দরবনের ছবি। আগের নোটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি আছে। নতুন নোটে তা নেই। বাজারে ছাড়া নতুন নোটের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত সব কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা চালু থাকবে। এ ছাড়া মুদ্রা সংগ্রাহকদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে নিয়মিত নোটের পাশাপাশি ১০০ টাকা মূল্যমান নমুনা নোট (যা বিনিময়যোগ্য নয়) ছাপানো হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে টাকা জাদুঘর থেকে নির্ধারিত মূল্যে এসব নোট সংগ্রহ করা যাবে।

ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশি মুদ্রায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো ১, ৫, ১০ ও ১০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়। এসব নোটে শেখ মুজিবের ছবি ছিল। তবে পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের সময়ে নতুন নতুন নোট প্রচলনের পাশাপাশি পুরনো নোটগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি সংবলিত ১০০ ও ৫০০ টাকার নোট ছাপে। আর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ মুজিবের ছবিযুক্ত ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন চালু করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব কাগুজে নোটেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ১১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ২, ৫, ১০, ২০, ৫০ ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code