প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

অশান্ত শিক্ষাঙ্গনে সেশনজটের শঙ্কা

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ
অশান্ত শিক্ষাঙ্গনে সেশনজটের শঙ্কা

Manual6 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual7 Ad Code

কথায় কথায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। যৌক্তিক-অযৌক্তিক নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা রাজপথ দখল করছে। গত রোববার ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা ও সংঘর্ষের পর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কোটাবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার শাসনের অবসান হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি শিক্ষা কার্যক্রম বরং দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে একের পর এক অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। কোথাও উপাচার্য অপসারণের দাবি- কোথাও নাম পরিবর্তন, আবার কোথাও আবাসন-সংকটকে ঘিরে আন্দোলন চলছে। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, জটিল হচ্ছে প্রশাসনিক কার্যক্রমও। এতে সেশনজটসহ নানা সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Manual1 Ad Code

শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ঘিরে টানা দুই-তিন মাস ক্যাম্পাসগুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এরপর থেকে ক্রমাগত অস্থিরতা ও আন্দোলনে সংকট আরও বাড়ছে। দেশের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো অশান্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়কে একেবারেই বিচ্ছিন্ন নয়।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষের পর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় এখনও ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে পরদিন রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় ক্যাম্পাসসংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২২০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের প্রায় ২০০ জনই শিক্ষার্থী। একটি বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন- এমন খবরে সংঘর্ষের শুরু হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল রড, পাইপ, লাঠি ও পাথর। গ্রামবাসীর হাতে ছিল রামদা, রড ও পাইপ। সংঘর্ষে জোবরা গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ একপর্যায়ে গ্রামের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী অলিগলিতে আটকে গেলে তাদের মারধর করে গ্রামবাসী। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় বেশকিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে।

তিন দফা দাবিতে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সংঘর্ষের জের ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ও আবাসিক হল খালি করার ঘোষণার পরও অনড় অবস্থানে শিক্ষার্থীরা। আর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ভোটার করার দাবিতে ছাত্রদলের আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। গতকাল আন্দোলনের মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের। শুধু তাই নয়, তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবেন। ভোট গ্রহণের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর অপরিবর্তিত রেখে তফসিলও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ও নির্বাচনকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। এ জন্য নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় এক দিন বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম বর্ষের ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও হল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সবার সহযোগিতা থাকলে সামনে আর কোনো চ্যালেঞ্জ নেই।

Manual1 Ad Code

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে গত রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের একটি চেয়ার ভাঙচুর ও একটি টেবিল উল্টে দেওয়া হয়। পরে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র তুলতে গেলে তাদের ঘিরে ধরেন ছাত্রদলের কর্মীরা। দুপুরের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও কয়েকজন সাবেক সমন্বয়কের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে যান। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয়। দফায় দফায় ধস্তাধস্তি ও বাক‌বিতণ্ডার পর সমন্বয়কদের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থীরা রাকসু ভবনের ফটকের তালা ভেঙে ফেলেন। এরপরও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ফটকে অবস্থান বজায় রাখেন। দুপুর ১টার দিকে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র তুলতে এলে ধস্তাধস্তি হয়। তাদের প্রতিরোধে ছাত্রদল রাকসু কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দুপুর ২টার দিকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়।

দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। তবে শিগগিরই এর সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েক দিন দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কতগুলো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে তা তিনি ও মন্ত্রণালয় অবহিত আছে। এতে অবশ্যই শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। যেকোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া সম্ভব উল্লেখ করে সি আর আবরার বলেন, সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং সমাধানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

Manual2 Ad Code

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও যোগাযোগ রেখেছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ধৈর্যের সঙ্গে, সহিষ্ণুতার সঙ্গে যাতে সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় তার দিকে ধাবিত হতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কারও জন্য কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদ জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করবে এ কমিটি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের প্রস্তাব পাঠাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

এদিক সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর সংঘটিত এসব ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে- হঠাৎ কেন বা কী কারণে এমন অশান্ত হয়ে উঠল ক্যাম্পাসগুলো। দেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে ক্যাম্পাসগুলোও অশান্ত হয়ে ওঠা নিয়ে নানা আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক সংকট আরও ঘণীভূত হতে পারে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসগুলোর অস্থিতিশীলতার প্রভাব আগে যেভাবে জাতীয় রাজনীতিতে পড়ত, এখন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, একটি কার্যকর শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পর্কের ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুধাবন করে তা পূরণে শিক্ষকদের সচেষ্ট থাকতে হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code