প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

দেশে দেশে পলাতক নেতাদের বিচার: কেমন ছিল পরিণতি?

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৫:০২ অপরাহ্ণ
দেশে দেশে পলাতক নেতাদের বিচার: কেমন ছিল পরিণতি?

Manual6 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের মুখে, অভ্যুত্থানে বা রাজনৈতিক চাপে বহু রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ক্ষমতা হারানোর পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা, অনুপস্থিত অবস্থায় আদালতের রায় কিংবা দেশে ফিরে তদন্ত—এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তিই দেখা গেছে গত অর্ধশতকে। এর মধ্যে কেউ বিদেশে নির্বাসনে মারা গেছেন, কেউ দেশে ফিরে আইনের মুখোমুখি হয়েছেন, আবার কারও বিচার শেষ হওয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছে।

বিশ্ব ইতিহাসে পালিয়ে যাওয়া বা দেশত্যাগী রাষ্ট্রপ্রধানদের পরিণতির একটি সারসংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো।

Manual1 Ad Code

শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি: অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড

১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। দেশ ছাড়ার পর মিশর, মরক্কো, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াতে হয় তাকে। তিনি আর কখনোই ইরানে ফেরেননি। ইরানের বিপ্লবী আদালত অনুপস্থিত অবস্থায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরবর্তীতে রেজা পাহলভি বিদেশেই মৃত্যুবরণ করেন।

Manual4 Ad Code

ইদি আমিন: বিচার ছাড়াই নির্বাসনে মৃত্যু

১৯৭৯ সালে উগান্ডায় আমিনবিরোধী বাহিনী ক্ষমতা দখল করলে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন একনায়ক ইদি আমিন। প্রথমে লিবিয়া, পরে সৌদি আরবে আশ্রয় পান। তিনিও কোনোদিন দেশে ফেরেননি। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমের অভিযোগে তদন্ত হলেও কোনো আনুষ্ঠানিক বিচার হয়নি। বিদেশেই তার মৃত্যু হয়।

 

মার্কোস সিনিয়র: বিদেশেই মৃত্যু

১৯৮৬ সালে পিপল পাওয়ার আন্দোলনে ক্ষমতা হারিয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়রকে দেশ ছাড়তে হয়। তিনি হাওয়াইয়ে নির্বাসনে চলে যান এবং সেখানেই মারা যান। দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তার পরিবারের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের আদালতে বহু রায় হলেও মার্কোসের ফৌজদারি কোনো সাজা হয়নি।

 

বেবি ডক দুভালিয়ে: বিচার অসমাপ্ত

১৯৮৬ সালে গণঅভ্যুত্থানে হাইতির জঁ-ক্লোদ ‘বেবি ডক’ দুভালিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ফ্রান্সে পালিয়ে যান। দীর্ঘদিন নির্বাসনের পর ২০১১ সালে হঠাৎ দেশে ফিরে আসেন। দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলেও রায় ঘোষণার আগেই মারা যান।

থাকসিন শিনাওয়াত্রা: রাষ্ট্রীয় ক্ষমা

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রা ২০০৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ১৫ বছরের নির্বাসিত জীবন যাপন করেন। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে অনুপস্থিতিতে ২০০৮ সালে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন থাই আদালত। ২০২৩ সালের ২২ আগস্ট দেশে ফিরলে তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর ২০২৪ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পান। তিনি এখনো থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী নেতা।

 

ইয়ানুকোভিচ: অনুপস্থিতিতে ১৩ বছরের সাজা

২০১৪ সালের মাইদান বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ রাশিয়ায় পালিয়ে যান। তিনি আর কখনো দেশে ফেরেননি। ইউক্রেনের আদালত অনুপস্থিত অবস্থায় তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে ১৩ বছর কারাদণ্ড দেয়।

বেন আলী: নির্বাসনেই কঠোর সাজা

Manual1 Ad Code

২০১১ সালের আরব বসন্তে ক্ষমতাচ্যুত তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট জিন এল-আবিদিন বেন আলী সৌদি আরবে পালিয়ে যান। তিনি আর দেশে ফেরেননি। অনুপস্থিত অবস্থায় দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হত্যার মামলায় তাকে একাধিকবার আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে সৌদি আরবেই তার মৃত্যু হয়।

ইভো মোরালেস: ফিরে এলে মামলা স্থগিত

২০১৯ সালে সেনাবাহিনীর চাপ ও বিক্ষোভের মুখে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস দেশ ছাড়েন। মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনায় কয়েক মাস থাকার পর ২০২০ সালে তিনি দেশে ফেরেন। তার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসে উসকানি’র অভিযোগে মামলা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে স্থগিত বা খারিজ হয়ে যায়।

 

নওয়াজ শরিফ: দেশে ফিরে মামলায় খালাস

পাকিস্তানের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ২০১৭ সালের পানামা পেপার্স স্ক্যান্ডালের কারণে অযোগ্য ঘোষিত হয়ে ক্ষমতা হারান। ২০১৮ সালে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালে চিকিৎসার নামে লন্ডনে গিয়ে নির্বাসিত জীবন শুরু করেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানে ফেরার পর অ্যাভেনফিল্ড, আল-কাদির ট্রাস্টসহ প্রায় সব মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তাকে খালাস দেয়। এরপরথেকে তিনি আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

Manual8 Ad Code

 

পারভেজ মোশাররফ: দেশে ফিরলেও বিদেশে মৃত্যু

পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা হারিয়ে দেশত্যাগ করেন এবং দুবাইয়ে নির্বাসিত জীবন শুরু করেন। ২০১৯ সালে লাহোর হাইকোর্ট বিদ্রোহের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন, যা পরে স্থগিত হয়। এরপর চিকিৎসার অনুমতি নিয়ে তিনি দুবাইয়ে ফিরে যান। ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

 

আশরাফ ঘানি: পলাতক জীবন, বিচার হয়নি

২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর তালেবান ক্ষমতা দখল করলে পালিয়ে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। সেই থেকে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছেন। আফগানিস্তানে ঘানির বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা বিচারের খবর পাওয়া যায়নি।

 

গোতাবায়া রাজাপাকসে: তদন্ত হলেও রায় নেই

 

২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকটের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। কয়েক মাস মালদ্বীপ ও সিঙ্গাপুরে থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হলেও এখনো কোনো রায় হয়নি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code