প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সিলিন্ডারের রং পাল্টে ঢুকানো হচ্ছে নিম্ন মানের গ্যাস

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৯, ২০২৪, ০২:১৮ অপরাহ্ণ
সিলিন্ডারের রং পাল্টে ঢুকানো হচ্ছে নিম্ন মানের গ্যাস

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

এসি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। গরম থেকে বাঁচতে শহর-গ্রাম সর্বত্র চাহিদা রয়েছে এ যন্ত্রের। গত কয়েক বছরে সারা দেশে এসির গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। বাজার বড় হওয়ার পাশাপাশি এসি নিয়ে অসাধু চক্রের কার্যক্রমও বেড়েছে। একদিকে যেমন চীন থেকে ব্যবহৃত কম্প্রেসার (রিকন্ডিশন কম্প্রেসার) অবৈধভাবে আমদানি করে গ্রাহককে গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে এসির গ্যাস নিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে করা হচ্ছে জালিয়াতি।

জানা গেছে, অতি মুনাফার লোভে কিছু আমদানিকারক বোতলের রং ও গ্যাসের নম্বর পরিবর্তন করে বাজারজাত করছে। ফলে মেরামতের সময় গ্যাসের ধরন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আবার দামি কোম্পানির অদাহ্য গ্যাসের সিলিন্ডারে ভরে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের দাহ্য গ্যাস। এদিকে নামকরা কোম্পানির নামের সাথে মিল রেখে চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে নকল গ্যাস। এগুলো যখন এসিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তখন ঘটছে দুর্ঘটনা। তৈরি হচ্ছে বিস্ফোরণের ঝুঁকি।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কম দামি আর-৪০৭ (R-407) গ্যাসের সিলিন্ডার আমদানি করে কৌশলে বোতলের কমলা রং পরিবর্তন করে সবুজ করেন। বোতলের গায়ে আর-২২ (R-22) স্ক্রিন প্রিন্ট করে লাগিয়ে ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। ভেতরে থাকে আর-৪০৭ নিম্নমানের গ্যাস! ক্রেতারা আর-২২ গ্যাসের দাম দিয়ে কেনেন সেটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এসির জন্য নন সিএফসি ও এইচসিএফসি গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা এইচসিএফসি (আর-২২) গ্যাসের। আর আরকেমা ফরেন ফ্রান্স ব্রান্ডের গ্যাসের দাম রাখা হয় ২৪-২৬ হাজার টাকা। এর বিপরীতে কম দামি ও কিছুটা নিম্নমানের এবং বাজারে চাহিদা কম এমন গ্যাস হচ্ছে আর-৪০৭। এ গ্যাসের সিলিন্ডারের রং কমলা। যার প্রতিটি আমদানিতে খরচ হয় মাত্র ৩-৫ হাজার টাকা। এটি বাজারে বিক্রি হয় ১০-১১ হাজার টাকায়।

 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কম দামি আর-৪০৭ (R-407) গ্যাসের সিলিন্ডার আমদানি করে কৌশলে বোতলের কমলা রং পরিবর্তন করে সবুজ করেন। বোতলের গায়ে আর-২২ (R-22) স্ক্রিন প্রিন্ট করে লাগিয়ে ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন আর-২২ বলে। ভেতরে থাকে আর-৪০৭ নিম্নমানের গ্যাস! ক্রেতারা আর-২২ গ্যাসের দাম দিয়ে কেনেন আর-৪০৭। এভাবে হন প্রতারিত। আবার আর-২২ গ্যাসের সিলিন্ডারের ট্যাগ ও স্টিকার উঠিয়ে কৌশলে আরকেমা ফরেন ফ্রান্স ব্র্যান্ডের গ্যাসের স্টিকার লাগিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

গ্যাস বদলের কাজ করছেন যারা

অনুসন্ধান বলছে, গ্যাস জালিয়াতির এ কাজের সঙ্গে রাজধানীর ওয়ারী এলাকার জয়কালী মন্দির রোডের অধিকাংশ ব্যবসায়ী জড়িত। এর মধ্যে মূল হোতা হচ্ছে মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজ। একই সঙ্গে রুবেল রেফ্রিজারেশন, ভাই ভাই রেফ্রিজারেশন, মুনিয়া রেফ্রিজারেশন, মাসুম রেফ্রিজারেশন, নিশাত ট্রেডার্স, অনুপম রেফ্রিজারেশন, রুহুল আমিন রেফ্রিজারেশন ও বিসমিল্লাহ রেফ্রিজারেশনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি বছরের ২৬ মে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (ব্রামা) পক্ষ থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। যেখানে ‘আর-৪০৭সি রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস আমদানি করে আর-২২ গ্যাস হিসেবে বিক্রি করে জাতির সঙ্গে মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজ প্রতারণা করছে’ বলে উল্লেখ করা হয়।

গ্যাস জালিয়াতির এ কাজের সঙ্গে রাজধানীর ওয়ারী এলাকার জয়কালী মন্দির রোডের অধিকাংশ ব্যবসায়ী জড়িত। এর মধ্যে মূল হোতা হচ্ছে মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজ। একই সঙ্গে রুবেল রেফ্রিজারেশন, ভাই ভাই রেফ্রিজারেশন, মুনিয়া রেফ্রিজারেশন, মাসুম রেফ্রিজারেশন, নিশাত ট্রেডার্স, অনুপম রেফ্রিজারেশন, রুহুল আমিন রেফ্রিজারেশন ও বিসমিল্লাহ রেফ্রিজারেশনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্রামার তৎকালীন সভাপতি আসাদুজ্জামানের সই করা চিঠিতে বলা হয়, গত ২১ এপ্রিল মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ১১৫০টি রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস চায়না থেকে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ১০৫০টি আর-৪০৭সি এবং ১০০টি আর-৪০৪এ গ্যাস ছিল। মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হক (জুয়েল) বিল অব এন্ট্রিতে বর্ণিত রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস আমদানি করে অধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে আর-২২ গ্যাস সিলিন্ডারে ছাপিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। এর আগেও তিনি এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

 

নামাজের সময় বাদে মসজিদের এসি বন্ধ রাখার অনুরোধ

Manual5 Ad Code

চিঠিতে আরও বলা হয়, আর-২২ গ্যাস আমদানি করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজ কোনো ছাড়পত্র না নিয়েই এসব গ্যাস আমদানি করে। অবৈধভাবে গ্যাসের নাম পরিবর্তন করে অধিক মুনাফা অর্জন করে রাফি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হক নিজে কয়েক কোটি টাকা উপার্জন করেছেন এবং অপরদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করেছেন।

 

চলতি বছরের জুন মাসে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুই কনটেইনার গ্যাসের চালান পরীক্ষা করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। পরে নকল গ্যাস আমদানির বিষয়ে তারা নিশ্চিত হন। জানা যায়, নকল গ্যাসের আমদানিকারক ছিল রাজধানীর ওয়ারী এলাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিশাত ট্রেডার্স। এ সময় ব্রামার সভাপতি আসাদুজ্জামান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিপুল অর্থের বিনিময়ে এ নকল গ্যাস চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে ছাড়িয়ে আনেন।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নকল কম্প্রেসার আমদানি এবং আমদানি করা গ্যাস নিয়ে নানা কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীগণ ব্রামার বর্তমান সভাপতি আসাদুজ্জামান ও সাবেক সভাপতি আবুল হোসেনের আশীর্বাদপুষ্ট।

 

অদাহ্য গ্যাসের বদলে এসিতে দেওয়া হচ্ছে দাহ্য গ্যাস

Manual4 Ad Code

সাধারণত এসিতে ব্যবহারের জন্য প্রচলিত ব্র্যান্ডের গ্যাসগুলো অদাহ্য। অর্থাৎ যে কোনো পরিস্থিতিতে বিস্ফোরণের কারণে আগুন ধরে গেলেও এ গ্যাস কোনোভাবেই সহায়ক ভূমিকা পালন করে না। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, সিলিন্ডারে অদাহ্য গ্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে আইসো-বিউটেন নামক দাহ্য গ্যাস। যা খুব সহজেই আগুন ধরতে এবং পরিসর বাড়াতে ভূমিকা পালন করে।

প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন করা হয়— জানতে চাইলে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, নামকরা যে কোনো ব্র্যান্ডের গ্যাসের বোতল বিশেষ প্রক্রিয়ায় অর্ধেক খালি করা হয়। এরপর সেখানে ভরে দেওয়া হয় বিউটেন। এটিও বর্ণহীন এবং সহজে তরলীকৃত গ্যাস। এভাবে ৩০ শতাংশ মূল গ্যাসের সঙ্গে ৭০ শতাংশ ভেজাল মিশিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি এসির জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণও। বিস্ফোরণের মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। পদ্ধতিটি এরই মধ্যে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

 

বিশেষ করে টেকনিশিয়ানরা গ্রাহকের কাছ থেকে আসল গ্যাসের দাম নিয়ে কম দামি নকল গ্যাস এসিতে ভরে দিচ্ছেন বলেও জানায় সূত্রটি। অর্থাৎ ক্রেতার অজ্ঞতা, টেকনিশিয়ানের চতুরতায় এবং ব্রামার সাবেক ও বর্তমান সভাপতির আড়াল নেতৃত্বে এসিতে এসিতে ছড়িয়ে পড়ছে নকল গ্যাস।

Manual5 Ad Code

 

গ্রাহকের অন্ধ বিশ্বাস আর অজ্ঞতাকে পুঁজি করছেন টেকনিশিয়ানরা

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্রাহকের অজ্ঞতা কিংবা ‘টেকনিশিয়ান হিসেবে তুমি যা ভালো মনে কর’— এমন অন্ধবিশ্বাসকেই পুঁজি করছেন কারসাজিরা। সাধারণত বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য কোনো গ্রাহকেরই একটি গ্যাসের সিলিন্ডার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন অনুসারে এসির গ্যাস রিফিল করেন এলাকার টেকনিশিয়ানরা।

 

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে গ্যাসের নম্বর ও বোতলের রং আলাদা করা হয়। যখনই কেউ অর্ডার করেন তখন সে অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। একই সঙ্গে প্রায় অধিকাংশ আমদানিকারক এবং নকল গ্যাস তৈরি করে এমন প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে খুচরা দোকান ও নিজস্ব টেকনিশিয়ান। তারাই সিন্ডিকেটের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার একটি দোকানের টেকনিশিয়ান বলেন, এসির গ্যাসের বোতল (সিলিন্ডার) সরবরাহ করা হয় দোকান থেকেই। আমরা শুধু রিফিল করে দিয়ে আসি। তবে অনেক সময় দেখা যায়, দামি গ্যাসের দাম রেখে কম দামি গ্যাস রিফিল করা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে অধিকাংশ গ্রাহকই জানেন না।

নকল গ্যাস আমদানি ও বাজারজাত রোধে বন্দরে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে— জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, যে গ্যাসগুলো আমদানি হয় সেগুলো পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেই লাইসেন্স নিয়ে করা হয়। যারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত আমদানিকারক তারা ভেজাল গ্যাস আমদানি করেন না। এরপরও আমরা খবর পাই, কিছু কিছু গ্যাস আমদানি করা হয় যেগুলো খুবই নিম্ন মানের। এর পরিমাণ খুব বেশি নয়। আমাদের কাস্টমস অথরিটির এগুলো দেখার কথা। তবে, আমাদের আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে।‘আমরা চেষ্টা করছি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে মেশিন দেওয়ার জন্য। যার মাধ্যমে সিলিন্ডারের ভেতরে কী গ্যাস আছে সেটি তারা পরীক্ষা করতে পারবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় কিছু মেশিন কেনা হবে। সেগুলো কাস্টমস অথরিটিকে দেওয়া হবে। তারা সিলিন্ডারে কী গ্যাস আছে সেটি টেস্ট করতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কাস্টমস অথরিটি ঠিক করেছে প্রতিটি সিলিন্ডার থেকেই তারা কিছু কিছু গ্যাস নিয়ে পরীক্ষা করবে। এটি করা হলে খারাপ গ্যাসগুলো ধরা পড়বে। আমরাও শুনেছি, কিছু ভেজাল গ্যাস মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে আসে। এটা বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। আমাদের সঙ্গে কাস্টমস অথরিটি কাজ করছে।

 

যা বলছে মালিক সমিতি

অসাধু ব্যবসায়ী ও অবৈধ মজুতকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মালিক শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিলিন্ডারের রং পরিবর্তন করে বেশি দামে বিক্রি করা এবং অবৈধভাবে মজুত করা এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।

 

Manual4 Ad Code

এ বিষয়ে কথা বলতে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক এস এম আনছারুজ্জামানের সঙ্গে টেলিফোনে এবং উপপ্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মনিরা ইয়াসমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে দুই দিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেননি। উপপ্রধান পরিদর্শককে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code