প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সংকটেও বাড়ছে কোটিপতি

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ
সংকটেও বাড়ছে কোটিপতি

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগে চলছে স্থবিরতা। কমছে কর্মসংস্থান, বাড়ছে বেকারত্ব। বিশেষ করে ছদ্ম বেকারত্ব মহামারি আকারে বেড়েছে। সব মিলিয়ে কমছে অর্থনীতির গতি। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতেও দেশে বেড়েছে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাবসংখ্যা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

Manual8 Ad Code

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এক কোটির ওপরে হিসাবসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০টি; যা আগের প্রান্তিক জুন শেষে ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি। সেই হিসাবে তিন মাসে কোটিপতির হিসাবসংখ্যা বেড়েছে ৭৩৪টি। আর ছয় মাসে বেড়েছে ৬ হাজার ৭০৮টি। মার্চ শেষে কোটিপতির হিসাবসংখ্যা ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি।

 

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এসব কোটিপতির হিসাবে সেপ্টেম্বর শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা; যা আগের প্রান্তিক জুন শেষে ছিল ৮ লাখ ৮ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। সেই হিসেবে গত তিন মাসে এসব হিসাবে আমানত কমেছে ৫ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। তবে গত মার্চের তুলনায় আমানত বেড়েছে ১৮ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। মার্চ শেষে এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।

 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কিছু সাবেক এমপি, মন্ত্রী এবং নেতাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও তলব করা হয়েছে। এর পরও দেশে দুর্নীতির পরিমাণ কমছে না। আর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত এসব টাকা তারা ব্যাংকেই রাখছেন। ফলে ব্যাংকে আগের মতোই কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণও বাড়ছে।

তাদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ যখন দিশেহারা, তখন একশ্রেণির মানুষের অর্থ বৃদ্ধি দেশে আয়বৈষম্য বাড়ার বহিঃপ্রকাশ। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং সাম্প্রতিক সময়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে আশঙ্কাজনক হারে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী মানুষের আয় বাড়েনি। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন অবস্থায় অর্থ জমানো দূরের কথা, অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। এই সময়ে দেশের একটি শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে। এরা হচ্ছেন পুঁজিপতি, বিত্তবান ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তাদের আয় আগেও বেশি ছিল, এখন আরও বেড়েছে। মূলত আয়বৈষম্যের কারণেই দেশের কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে কালো টাকা অর্জন, হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা, করনীতিতে অসামঞ্জস্য, ধনীদের কাছ থেকে কম হারে কর আদায়ও দেশের আয়বৈষম্য বাড়ার অন্যতম কারণ। এসব কারণে একশ্রেণির মানুষের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আয় বাড়ছে। তবে আয় কমেছে, এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

 

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে সেখানেও আয়বৈষম্য কমানোর কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোরও কোনো পদক্ষেপ নেই। এই অবস্থায় আয়বৈষম্য কমাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, একদিকে দেশে সরকার পরিবর্তনের পরও দুর্নীতি কমছে না, অন্যদিকে আয়বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে। তিনি বলেন, বিগত সরকারের মন্ত্রী, এমপি এবং আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তাদের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করা হলেও দুর্নীতি কমছে না। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থও তারা ব্যাংকেই রাখছেন। ফলে ব্যাংকে বাড়ছে কোটিপতির আমানতকারীর সংখ্যা।

 

তিনি আরও বলেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতির গতি কমেছে। দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেকারত্ব, বিশেষ করে ছদ্ম বেকারত্ব মহামারি আকারে বেড়েছে। এমন অবস্থায় কোটিপতির হিসাব বাড়ার অর্থই হচ্ছে দেশে আয়বৈষম্য বাড়ছে।

Manual4 Ad Code

 

দেশে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার কারণেই এই আয়বৈষম্য বাড়ছে। তাই বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানো না গেলে সামনে এটি আরও বাড়তেই থাকবে।

Manual5 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে হিসাব ও আমানতের সংখ্যা বেড়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে মোট ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টি, যা আগের প্রান্তিক জুন শেষে ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। আর মার্চ শেষে ছিল ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮২১টি।

 

সেপ্টেম্বর শেষে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিক জুন শেষে ছিল ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। আর মার্চ শেষে ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোটি টাকার ওপরে হিসাব মানেই তা সব সময় ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়। এসব হিসাবের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং একজন ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। ফলে হিসাবের সংখ্যা বাড়া মানেই ব্যক্তি কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে, তা বলা যায় না।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code