প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ডিবিতে দিনবদলের হাওয়া

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২০, ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ণ
ডিবিতে দিনবদলের হাওয়া

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

দিনবদলের হাওয়া লেগেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি)। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ পুলিশে যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে; তার প্রভাব পড়েছে বহুল আলোচিত এই শাখায়।

Manual4 Ad Code

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশে ডিবিকে জনবান্ধব করে গড়ে তুলে সব বিতর্কের বাইরে থেকে কর্মকাণ্ড চালাতে বলা হয়েছে।

Manual5 Ad Code

সূত্রগুলো জানাচ্ছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে ধরে এনে নির্যাতন না করার জন্য কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘গুম’ করা হয়েছে এমন ধারণা যাতে জনমনে বাসা না বাঁধে সেদিকে লক্ষ রেখে ডিবিকে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আসামিকে আটক বা গ্রেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে জানাতে হবে। আর তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করতে হবে বিদ্যমান বিধিবিধান মেনে। কোনো স্থানে অভিযান চালানোর আগে ডিবির সদস্যরা যাতে তাদের পরিচয়পত্র দেখান, এ নিয়ম ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

Manual6 Ad Code

সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে ডিবি। কেউ অসুস্থ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদে আসামির সব তথ্য তারা বিশ্বাস না করে মাঠপর্যায়ে তা তদন্ত করে এর সত্যতা নিশ্চিত করছে।

এ ছাড়া ‘ঘুষ’ লেনদেনের বিষয়ে সদর দপ্তরের কঠোর নির্দেশের কথা অধীনে থাকা ফোর্সদের জানিয়ে দিয়েছেন ডিবি প্রধান রেজাউল হক মল্লিক।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আলোচিত-সমালোচিত সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সময়কার কথিত ভাতের হোটেলটিকে এখন গেস্টরুম বানানো হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করার পাশাপাশি কথিত এই হোটেলে ভাত খাওয়ানোর পর তাদের ছবি তুলে গণমাধ্যমে প্রচার করতেন হারুন। এ ছাড়া ডিবিতে টর্চার সেলও ছিল। অনেককে গুম করার সঙ্গে অভিযোগও আছে ডিবির বিরুদ্ধে। কিন্তু গত ৮ আগস্ট অন্তর্বতী সরকার ক্ষমতায় বসার পর ডিবির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কাউকে গুম বা টর্চার করার অভিযোগ নেই।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘আমরা ডিবিকে ঢাকাবাসীর আস্থার জায়গা হিসেবে তৈরি করতে চাই। ডিবি হবে বিপদগ্রস্ত মানুষের আস্থার ঠিকানা।’ তিনি বলেন, ‘ডিবির বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ যাতে না ওঠে সে দিকে লক্ষ্য রেখেই ডিবির সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

সরকার পতনের পর ডিএমপিতে ৩০টির বেশি বদলির আদেশ জারি হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের সময় ডিএমপিতে প্রায় ৩২ হাজার পুলিশের সদস্য কর্মরত ছিলেন। তাদের সবাইকে ঢাকার বাইরে বদলির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের মনোবল চাঙা ও মাঠপর্যায়ের পুলিশের গতি বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে ডিএমপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ডিবিতে এসেছে বড় পরিবর্তন। গত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ডিবির কর্মকাণ্ড নিয়ে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অনেককেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ডিএমপির দুই ডজন কর্মকর্তা পলাতক আছেন। তাদের নামে মামলা হয়েছে। কেউ কেউ আবার জনরোষের ভয়ে বদলি হওয়া কর্মস্থলে যোগ দেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের পলাতক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ডিবির বিরুদ্ধে কম-বেশি অভিযোগ সব সরকারের সময়েই ছিল। তবে গত ১৫ বছরে এই অভিযোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর পুলিশের এই শাখার ভাবমূর্তি সবচেয়ে বেশি ক্ষুণ্ন হয় অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের সময়ে। হারুনের কর্মকাণ্ড ডিবিকে প্রচণ্ড বিতর্কিত করে তোলে। আলোচিত ভাতের হোটেল খোলা, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীকে ধরে এনে টাকা আদায়, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের উদ্ধার হওয়া টাকার বড় অংশ আত্মসাৎ করা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সমন্বয়কদের ধরে এনে জোর করে বিবৃতি আদায় করার ঘটনা গোটা ডিবিকে বিতর্কিত করে তোলে এবং বাহিনীটির মর্যাদা শূন্যের কোঠায় নিয়ে যায়। বেশ কয়েকজন অতি-উৎসাহী কর্মকর্তা এই কাজে হারুনকে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ আছে। হারুন প্রথমে ভারতে পালিয়ে যান। পরে নেপাল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ডিবির ভেতরের সব বিভাগকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে একঝাঁক দক্ষ অফিসার এই শাখায় যোগদান করেছেন। এসব কর্মকর্তা গত ১৫ বছরে বিভিন্ন অভিযোগে পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে পদায়ন থেকে বঞ্চিত ছিলেন। বস্তুত তাদের ‘ভিন্নমতের’ কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে ডিবির অপারেশনের ধরনও বদলেছে।

ডিবিতে যেসব নতুন কর্মকর্তা যোগদান করেছেন তারা ঢাকার বাইরের জেলা এবং কেউ আবার সার্কেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব কর্মকর্তা নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। নতুন কর্মকর্তারা ঢাকার অপরাধের ধরন, ক্রাইম ডেটাবেজের হোম ওয়ার্ক, সুনির্দিষ্ট এলাকা ধরে অপরাধীদের চিহ্নিতকরণসহ নানা কাজে ব্যস্ত আছেন। ডিবি জানিয়েছে, তারা আইনের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করবেন না। মানুষের আস্থা অর্জন করতে চান তারা।

গত সোমবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বিভাগে যোগদান করেছেন নতুন নতুন মুখ। লোকবলসংকটের কারণে দুই বিভাগে একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা। দ্রুতই এসব বিভাগে নতুন পুলিশের কর্মকর্তারা যোগদান করবেন। যোগদান করা নতুন কর্মকর্তারা ঢাকার ক্রাইম জোনের অপরাধের ধরন বোঝার চেষ্টা করছেন। এসব কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট এলাকায় নতুন সোর্স সৃষ্টি করা এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। এ জন্য সরেজমিনে এলাকায় যাচ্ছেন।

Manual6 Ad Code

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির রমনা জোনের একজন কর্মকর্তা জানান, তিনি দীর্ঘদিন খুলনা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। চাকরি জীবনের প্রথমে তিনি ঢাকায় কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দীর্ঘ ১২ বছর পর আবার ডিএমপিতে বদলি হয়েছেন। জেলাগুলোতে অপরাধের ধরন এক রকম। আর ঢাকা সিটিতে অপরাধের ধরন আরেক রকম। এ ছাড়াও ঢাকায় অনেক ভাসমান লোকজন বসবাস করেন। অনেকে ঢাকায় অপরাধ করে বাইরের জেলাগুলোতে আশ্রয় নিয়ে থাকেন, যে বিষয়টি ডিবিকে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হয়। এ ছাড়াও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। এসব বিষয় মাথায় রেখে তারা গুছিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন স্থানে ডিবি অভিযান চালিয়ে আসামি ধরে মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নিয়ে আসত। দিনের পর দিন তাদের কার্যালয়ে রাখা হতো। কাউকে-কাউকে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। পরিবারের লোকজনকে তাদের আটকের বিষয়ে জানানো হতো না বলে ভূরি-ভূরি অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় স্বজনদের ডিবি অফিসের সামনে এসে কান্নাকাটি করার ঘটনা দৃশ্যমান ছিল।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code