প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

১১ মাসে দুদকের জালে ফেঁসেছেন ৩ হাজার ৫০০ ভিআইপি

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫, ০২:০০ অপরাহ্ণ
১১ মাসে দুদকের জালে ফেঁসেছেন ৩ হাজার ৫০০ ভিআইপি

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual4 Ad Code

গণ অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান দৃশ্যমান অভিযান জোড়দার হয়েছে। ধরপাকড়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধে যেমন রেকর্ড সাফল্য দেখিয়েছে, তেমনি মামলা-চার্জশিটেও অপেক্ষাকৃত বেশি আসামিকে অভিযুক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

Manual8 Ad Code

২০২৩ ও ২০২৪ সালের সঙ্গে তুলনা করলে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মামলাও চার্জশিট যেমন বেড়েছে; তেমনি দুদকের জালে ফেঁসেছেন অনেক রাজনৈতিক ও সরকারি বড় বড় আমলা।

দুদক থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণীর ২ হাজার২৯৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৫৪১টি মামলা বা এজাহার দায়ের করেছে সংস্থাটি। আর একই সময়ে ১ হাজার ২০৩জন আসামির বিরুদ্ধে ৩৪৯টি মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলা ও চার্জশিট মিলিয়ে সাড়ে ৩ হাজার ভিআইপি আসামি দুদকের জালে ফেঁসেছেন বলে জানা গেছে।

 

পিছিয়ে নেই অভিযোগ আমলে নিয়ে নতুন করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তও। এই সময়ে বিভিন্ন শ্রেনীর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নতুন করে ১ হাজার ৬৩টি নতুন অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। আর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ৩৮২টি সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি হয়েছে। অন্যদিকে ১১ মাসে ২৩০ জন ব্যক্তিকে অব্যাহতি দিয়ে ৮২টি এফ.আর (ফাইনাল রিপোর্ট), ৩৯টি পরিসমাপ্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

তুলনামূলক হিসাবে— ২০২৪ সালের ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর পর্যন্ত) বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে মাত্র ৪৩৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ে ৩২৮টি মামলা ও ৩৪৫টি মামলার চার্জশিট দিয়েছিল দুদক। তবে ওই বছরের নভেম্বরে কোনো কমিশন না থাকায় কোনো অনুসন্ধান বা মামলার সিদ্ধান্ত ছিল না বলে জানা গেছে। ওই বছরে ২২৭টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি বা নথিভুক্তি (অভিযোগ থেকে অব্যাহতি) হয় এবং মামলা থেকে অব্যাহতি বা পরিসমাপ্তি দেওয়া হয় ৪৮টি মামলার।

 

যেখানে তার আগের বছর ২০২৩ সালে অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ৮৪৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ে ৪০৪টি মামলা ও চার্জশিট হয় ৩৬৩টি মামলার। কিন্তু তখন পরিসমাপ্তি বা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩ হাজার ৫৭৯টি অভিযোগ। অর্থাৎ ওই সব অভিযোগে দুর্নীতি খুঁজে পায়নি দুদক অনুসন্ধান বিভাগ।

Manual5 Ad Code

এতে দেখা যাচ্ছে তিন বছরের তুলনামূলক পরিসংখ্যানে চলতি বছরে মামলা, চার্জশিট কিংবা অনুসন্ধান প্রতিটি সেক্টরেই বেশি সাফল্য দেখিয়েছে দুদক।

সার্বিক বিষয়ে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, “দুদকের দন্ত ও নখ রয়েছে। যা আরও তীক্ষ্ণ করা হয়ত দরকার আছে। একটা কথা বলতে চাই দুদক যথার্থ আইনী শক্তিতে মহীয়ান। বিচারকাজে গতিশীল করতে দুদকের আরও বিশেষ আদালত প্রয়োজন।”

Manual4 Ad Code

দুদকের সাড়ে ৩ হাজার আসামিরা তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহেনা, ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের সদস্যরা।

আরও আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এস আলম গ্রুপের মালিক শামসুল আলম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, হাসানুল হক ইনু, আনিসুল হক, দীপু মনি, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নাজমুল হাসান পাপন, টিপু মুনশি, গোলাম দস্তগীর গাজী, জাহিদ মালিক, নসরুল হামিদ বিপু, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপিরা।

আসামির তালিকায় রয়েছে এস আলম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, নূরজাহার গ্রুপ, অ্যাননটেক্স গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও জেমকন গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও।

 

সম্পদ অবরুদ্ধ ও ক্রোকেও সাফল্য

গত ১১ মাসে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধে রেকর্ড সাফল্য দেখিয়েছে দুর্নীতি দমন বিষয়ক সংস্থাটি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশে ও বিদেশে দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী, সরকারি লোপাটকারী এবং ঋণখেলাপিসহ তিন শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৬ হাজার ১৩ কোটি টাকার বেশি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

যেখানে ২০২৪ সালের পুরো সময়ে ক্রোক ও অবরুদ্ধের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৬১ কোটি টাকা।

২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ক্রোক ও অবরুদ্ধ সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল ১১ মাসে সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে দুদক।

আদালত ও দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মাসে দেশে ৩ হাজার ৪৫৭ কোটি ৮৩ লাখ ৪৭ হাজার ক্রোক করা হয়েছে। এরমধ্যে দেশে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২২ হাজার ২২৬ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ও বিদেশে ৩২৮ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ফ্রিজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে দেশে-বিদেশে প্রায় ২৬ হাজার ১৩ কোটি ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।

অন্যদিকে ১১ মাসে বিচারাধীন মামলার মধ্যে ২৪৯ টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যেখানে সাজা হয়েছে ১২৬ টির, খালাস ১২৩টি, জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৩২১ কোটি টাকা। ওই সময়ে ১১ হাজার ৬৩০ টি অভিযোগ এলেও মাত্র ৯৬০ টি আিভযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় এনফোর্সমেন্ট হয়েছে ৭৯৮ টি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code