প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বেওয়ারিশ ছয় লাশের কী হবে

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বেওয়ারিশ ছয় লাশের কী হবে

Manual7 Ad Code

 

Manual4 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা হতাহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগেরই নাম-পরিচয় জানা গেছে। এরমধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকেই আন্দোলনে নিহত অনেকের মরদেহ বুঝেও নিয়েছেন স্বজনরা। তবে আন্দোলনে নিহত ছয় জনের মরদেহ ঘটনার ৫ মাস পরও অশনাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরদেহগুলো ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবেই ফ্রিজে রেখে দিয়েছে।

পুলিশ বলছে, ঘটনার পর থেকেই সারা দেশে বেতার বার্তা পাঠিয়ে তাদের পরিচয় খোঁজার চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু এখনও এসব মরদেহের কোনও স্বজনের খোঁজ মেলেনি। বেতার বার্তা থেকে খবর পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢামেক মর্গে অনেকেই ছুটে এসেছিলেন। তবে তাদের কেউই এখনও পর্যন্ত এসব মরদেহ তাদের স্বজনদের বলে দাবি করেননি। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে মর্গে পড়ে থাকা এই ছয় হতভাগা কারা, আর এই লাশগুলোরই এখন কী হবে?

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেলের মাধ্যমে এসব মরদেহের বিষয়টি সামনে আসে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন তারা। ছয় জনের মরদেহ শনাক্তে পুলিশ তাদের ইন্টারনাল কমিটিও গঠন করেছে। তার আগে মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্তে সারা দেশে বেতার বার্তাও পাঠানো হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিদিনই লোকজন আসছেন ঢামেক মর্গে।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমরা তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছি। সারা দেশে বেতার বার্তা পাঠিয়েছি। দেশের সব থানা থেকে লোকজন আসছে। তবে এখনও কেউ দাবি করেননি যে, এই ছয় মরদেহের মধ্যে তাদের স্বজনদের কেউ আছেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা চার জনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। ওই রিপোর্টে দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে চার জনের কেউ গুলিবিদ্ধ হননি। তবে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। বাকি দুটি মরদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও বাকি আছে।

 

Manual7 Ad Code

এই ছয় ৬ মরদেহের একটিরও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন ওসি খালিদ মনসুর। তিনি বলেন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উভয় সংস্থাই চেষ্টা করে আঙুলের ছাপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ছয়টি মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা আছে। যদি কেউ এসে স্বজন বলে দাবি করেন, তাহলে তাদের সঙ্গে ডিএনএ মেলানো হবে।

 

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা সবাই এটা নিয়ে কাজ করেছি। ওই সময় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই মরদেহগুলো ঢামেক আনা হয়েছিল। যেহেতু ঢামেক শাহবাগ থানার অধীনে পড়েছে, সে হিসেবে এ বিষয়টি আমরাই তত্ত্বাবধান করছি। এই ছয় মরদেহের বিষয়ে ইন্টারনাল কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

অশনাক্ত এই ছয় মরদেহের ব্যাপারে তথ্য মানুষের কাছে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে তারাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেলকে অবগত করেছেন বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘তাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) ফেসবুক পেজ অনেক জনপ্রিয়। সেই পেজে দেওয়া হলে মর্গে পড়ে থাকা এই মরদেহগুলো পরিচয় শনাক্তে সাহায্য করবে।’

শেষ পর্যন্ত মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত করা না গেলে কী করা হবে, জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এটা তো আমাদের রেগুলার একটা প্রসেস আছেই, সাধারণত আমরা অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামকে (বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য পরিচিত ইসলামী জনকল্যাণ সংস্থা) দিয়ে দেই। এদের ক্ষেত্রেও তাই করা হবে। তবে ডিএনএ স্যাম্পলগুলো সংরক্ষণ করে রাখা হবে। পরেও যদি কেউ এসে দাবি করেন, তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Manual5 Ad Code

এর আগে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক (দফতর সেল) জাহিদ আহসানের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেল, তাদের অনুসন্ধানে ঢাকা মেডিক্যাল গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছয়টি অশনাক্ত মরদেহ আছে বলে জানতে পারে।

ছয়টি লাশের বিষয়ে জানানো হয়, লাশগুলো হলো অজ্ঞাতনামা পুরুষ (২০), অজ্ঞাতনামা পুরুষ (২৫), অজ্ঞাতনামা পুরুষ (২২), অজ্ঞাতনামা নারী (৩২) ও অজ্ঞাতনামা পুরুষ (৩০)। আরকেজনের নাম এনামুল (২৫), তবে তার নাম ছাড়া আর কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। লাশগুলোর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

এদিন সকালে সেলের একটি টিম এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য শাহবাগ থানায় যায় এবং শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর ছয়টি মরদেহ এখনও হিমাগারে থাকার তথ্য নিশ্চিত করেন। মরদেহগুলো ঢামেকের ফরেনসিক মর্গে আছে বলে তিনি জানান। এরপর বিশেষ সেল টিম ঢামেকের ফরেনসিক মর্গে গিয়ে সরেজমিনে লাশগুলো পরিদর্শন করে। এতে আরও জানায়, মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে পাঁচ জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে ‘আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু’। একজনের (এনামুল) মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ওপর থেকে নিচে পড়ে মৃত্যু’ লেখা হয়েছে।

মৃতদেহগুলোর ডিএনএ সংগ্রহ করার পাশাপাশি পরিহিত আলামতও (পোশাক-পরিচ্ছদ) সংগ্রহ করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সবগুলো মরদেহ ঢামেক ফরেনসিক হিমাগারে রক্ষিত আছে।

Manual6 Ad Code

এতে আরও বলা হয়েছে, শাহবাগ থানার পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়েছে লাশগুলো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের। তবে কবে এবং কয় তারিখে তারা মরদেহগুলো এনেছে সেটা স্পষ্ট করেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বেওয়ারিশ মরদেহগুলো পরিবারের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। এই অবস্থায় উল্লিখিত বয়সের কেউ যদি মিসিং থাকেন, তবে তার পরিবারের সদস্যদের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেলের ০১৬২১৩২৪১৮৭ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code