প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পোশাক পাল্টাল, স্বভাব পাল্টানোর দাবী সাধারনের

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ
পোশাক পাল্টাল, স্বভাব পাল্টানোর দাবী সাধারনের

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রাণ ঝরার পর থেকেই ইমেজ সংকটে রয়েছে এ বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংস্কারের পাশাপাশি পুলিশের পোশাক (ইউনিফর্ম) পরিবর্তনের দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠন করা হয় পুলিশ সংস্কার কমিশন। সোমবার পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তবে পোশাক পাল্টালেই পুলিশের স্বভাব পাল্টাবে কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

 

বিশিষ্টজনরা বলছেন, শুধু পোশাক নয়, সবার আগে পরিবর্তন আনতে হবে বাহিনীর স্বভাব, চরিত্র ও মানসিকতায়। সাধারণ মানুষের প্রতি বদলাতে হবে পুলিশের আচরণ। তা না হলে কেবল অর্থের অপচয় হবে। অবশ্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সবার মন-মানসিকতা পরিবর্তন করা জরুরি। সে জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, পোশাক পরিবর্তন হলেই যে পুলিশ, র‌্যাবসহ যেকোনো বাহিনীর আচরণ পরিবর্তন হয়ে যাবে, চরিত্রের বিবর্তন ঘটবে, জনবান্ধব হয়ে উঠবে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। পরিবর্তনটা জরুরি মনে-মগজে। বরং পোশাকের পাশাপাশি খোলনলচে পাল্টাতে হবে। তাদের মূল্যবোধ, মানসিকতা, নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের মানদণ্ডের জায়গা থেকে কতটুকু তাদের মধ্যে পরিবর্তন আনা গেল সেটিই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ।

 

Manual6 Ad Code

এসব পরিবর্তন করা না গেলে শুধু পোশাক পরিবর্তন হলে তা আইওয়াশ মনে হবে। তাই পোশাক পরিবর্তনের মাধ্যমে গুণগত মানের কোনো পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন না। এম আবদুল্লাহ বলেন, পতিত সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিরোধী দল নির্মূলে ভয়ংকর ও বেপরোয়া রূপ নিয়েছিল পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনী। যখন-তখন যাকে-তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে অনির্দিষ্টকাল আটকে রাখা হয়েছে। খুন, গুম হয়ে উঠেছিল ডাল-ভাত। তাই পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার চ্যালেঞ্জটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দলবাজ, দুর্বিনীতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সাধারণ নাগরিকের জীবনও যে পুলিশের জীবনের মতোই মূল্যবান তা অনুধাবনের মতো মানসিকতা তৈরি করতে হবে। তবেই সফল ও সার্থক হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ।

Manual2 Ad Code

 

তিন বাহিনীর পোশাক পরিবর্তনের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম লিখেছেন স্বভাব, চরিত্র, খাসলত পরিবর্তন না করে পোশাক পরিবর্তনে কোনো লাভ নেই। সমস্যা পোশাকে নয়, সিস্টেমে। সোমবার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টে এ কথা লেখেন তিনি।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, পোশাক পরিবর্তন করলে পুলিশের সবাই যে ভালো হয়ে যাবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই যে জায়গা থেকে প্রত্যাশিত পুলিশিং ব্যবস্থার সৃষ্টি হতে পারে সেটি প্রশিক্ষণ দিতে হবে। একই সঙ্গে তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা এবং তার কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

Manual8 Ad Code

 

কোন বাহিনীর পোশাকের সঙ্গে পারফরম্যান্সের সম্পর্ক কতটুকু তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা গণমাধ্যমকে বলেন, ইউনিফর্ম পরিবর্তন করলে স্বভাবের কী পরিবর্তন হতে পারে তা তিনি নিশ্চিত নন। যারা করছেন তারা বলতে পারবেন। ইউনিফর্ম পরার জন্য ওই ব্যক্তির কার্যকলাপ সম্পর্কযুক্ত মনে হয় না। তিনি যে কাপড় পরিধান করেন, সেই কাপড় তাকে নির্দিষ্ট করে দেয় না তার ব্যবহার-আচরণ কেমন হবে। এ ছাড়া সদস্যদের পোশাক বাহিনীর পক্ষ থেকেই সরবরাহ বা অর্থায়ন করা হয়। ফলে বিপুলসংখ্যক সদস্যের পোশাক পরিবর্তন বাবদ একটা বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হবে। এটি আমাদের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কতখানি ঠিক হবে সেটি যারা দেশের ফাইন্যান্স সম্বন্ধে ভালো জানেন তারা ভালো বলতে পারবেন। যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য হয়তো ভালো কিন্তু ব্যয়টা অনুৎপাদনশীল খাতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন লোকজন। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন অনেকে। কামাল হোসেন নামে একজন উন্নয়নকর্মী বলেন, আগেও অনেকবার পোশাক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু পুলিশ বাহিনীর মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ ছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাধারণ মানুষ আশা করেছিল পুলিশ বাহিনী হয়তো তাদের আচরণ পরিবর্তন করবে। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা বিশেষ করে আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের মারমুখি আচরণ প্রমাণ করে তাদের চরিত্র এখনও বদলায়নি।

 

তাই প্রশ্ন, এ মুহূর্তে পোশাক পরিবর্তন করা অগ্রাধিকার কি না। পোশাক পরিবর্তন করে পুলিশের ভেতর পরিষ্কার করতে পারবে কি না সেই প্রশ্ন থেকেই যাবে। এম. মোয়াজ্জেম হোসেন নামে একজন লিখেছেন, পুলিশের পোশাক পরিবর্তনে কি চরিত্র বদলাবে। পুলিশের পরিবর্তন দরকার মানসিকতায়, এ জন্য দরকার যথাযথ কাউন্সেলিং ও ধর্মীয় জ্ঞান। পোশাক পরিবর্তন করে লাভ নেই। মানুষ পরিবর্তন না হলে পোশাক পরিবর্তন কোনো কাজে আসবে না।

 

তবে সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের জন্য নতুন পোশাক নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে। তবে একসঙ্গে সবকিছু করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, পোশাক পরিবর্তনের পাশাপাশি মনোভাব এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য সবার মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। নতুন পোশাকে বড় ধরনের অর্থ সংকুলান হবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের কিছু হবে না। নিয়মিত এসব বাহিনীর সদস্যদের নতুন পোশাক তৈরি হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে পরিবর্তিত পোশাক তৈরি হবে। এটির জন্য বাড়তি অর্থের খুব একটা দরকার হবে না।

Manual2 Ad Code

 

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করে মহানগরগুলোতে হালকা জলপাই রঙের করা হয়। জেলা পুলিশকে দেওয়া হয় গাঢ় নীল রঙের পোশাক। র‌্যাবের কালো ও এপিবিএনের পোশাক তৈরি করা হয় খাকি, বেগুনি আর নীল রঙের মিশ্রণে। এসপিবিএনের পোশাকের জামার রং করা হয় ধূসর।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code