প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহুমুখী সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ১২:০৩ অপরাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহুমুখী সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ

Manual3 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বব্যাপী হইচই ফেলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। সামনের পরিস্থিতি কৌশলের সঙ্গে মোকাবিলা করে বর্তমানে ওয়াশিংটনের সঙ্গে যে বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে তা আরও এগিয়ে নিতে চায় ঢাকা। অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে ট্রাম্পের নতুন এনার্জি এক্সপোর্ট ম্যান্ডেটের ওপর ভিত্তি করে একটি চুক্তি সই করেছে। আর এর মধ্য দিয়ে আমেরিকা ফার্স্টের সঙ্গে ফার্স্ট হয়েছে বাংলাদেশও।

Manual3 Ad Code

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে প্যারিস চুক্তি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে তহবিল প্রত্যাহার, অভিবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে-এমন ধারণা আগে থেকেই ছিল। শুধু তা-ই নয়, এসব সমস্যা মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যাবে সে বিষয়েও চিন্তাভাবনা করছে ঢাকা। ট্রাম্প প্রশাসনে কারা আসছেন, তারা কোন বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তাদের সঙ্গে কীভাবে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা যাবে-ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই এসব নিয়ে কাজ শুরু করেন ঢাকার কূটনীতিকরা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের তৈরি রফতানি পণ্যের বিশেষ করে পোশাকের বৃহত্তম বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর বাংলাদেশ ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন তাদের বোয়িং কেনার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশকে। এ জন্য তারা ৮৫ শতাংশ ঋণের ব্যবস্থা করে দিতেও আগ্রহী। ট্রাম্প প্রশাসনও বোয়িং কেনার জন্য চাপ দিতে পারে, ঢাকা এ বিষয়ে সতর্ক আছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিরাপদ এবং আন্তর্জাতিকমানের শ্রম পরিবেশ দেখতে চায়। এ জন্য বাইডেন প্রশাসন ঢাকাকে ১১ দফা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনও শ্রম ইস্যুতে চাপ দিতে পারে। এরই মধ্যে ঢাকা ওয়াশিংটনকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম ইস্যুতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে কাজ করছে এবং সংস্থার সুপারিশে ১৮ দফা বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে ওয়াশিংটনের দেওয়া ১১ দফাও রয়েছে। ঢাকা যদি শ্রম ইস্যুতে ওয়াশিংটনকে সন্তুষ্ট করতে পারে তবে তাদের কাছ থেকে সহজে ডিএফসি (ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন) ঋণ পাবে। ডিএফসি ক্যাটাগরিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ মুদ্রা সফট লোন হিসেবে পাওয়ার সুযোগ আছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডিএফসি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।

Manual1 Ad Code

 

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী তার ফেসবুক পেজে গত শনিবার বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার আজ ট্রাম্পের নতুন এনার্জি এক্সপোর্ট ম্যান্ডেটের ওপর ভিত্তি করে একটা ল্যান্ডমার্ক এগ্রিমেন্ট সাইন করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমরাই প্রথম দেশ কোনো ডিল সাইন করলাম। ট্রাম্পের ইলেকশন প্রমিজের মধ্যে ‘ড্রিল, বেবি ড্রিল’ এই স্লোগানটা বেশ পপুলার ছিল। সেটা এই এনার্জি এক্সপোর্টকে ঘিরেই। আমাদের দেশে গ্যাসের বিশাল সংকট।

Manual6 Ad Code

ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ, কর্মসংস্থান ইত্যাদির জন্য আমাদের লং টার্ম গ্যাস সাপ্লাই সলিউশন বের করতেই হবে। মিডল ইস্টের বাইরে আমেরিকা একটা ইন্টারেস্টিং অলটারনেটিভ। কিন্তু এই সাইনিংয়ের গুরুত্ব অন্য জায়গায়। ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির অ্যাঙ্গেল থেকে। ট্রাম্প সরকারের স্টাইল খুবই ডিফারেন্ট। তারা জাত ব্যবসায়ী। আঁতেল টাইপের কথাবার্তায় নেই। স্ট্রেট অ্যাকশন দেখতে চায়। লুইজিয়ানার সিনেটর বিল ক্যাসিডি সাইনিংয়ের কথা শুনে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল! আগামী বছরগুলোতে আমরা যখনই বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে যাব, আমরা বলতে পারব যে বাংলাদেশ কিন্তু তার প্রথম পার্টনার ছিল। তার আমেরিকা ফার্স্টের সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ ফার্স্ট। আর আমাদের জন্য বাংলাদেশের ইন্টারেস্ট ফার্স্ট! অনেকের কাছে শুনি ট্রাম্প আসার পর নাকি সব শেষ হয়ে যাবে আমাদের। প্রথমত, আমেরিকার ফরেন পলিসি খুব স্টেবল। তারা হঠাৎ ১৮০ ডিগ্রি টার্ন করে না। আর দ্বিতীয়ত, আমরা সৎ হতে পারি, কিন্তু এত্ত গাধা না।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে বাংলাদেশ মূলত দুটি ইস্যুতে ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এর একটি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, অন্যটি তাদের এইড (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএইডের মাধ্যমে অর্থায়ন) বন্ধ হওয়া। অভিবাসনের ক্ষেত্রে ভারত এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার রাষ্ট্রগুলো বেশি সমস্যায় পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশেরও কিছু অনিয়মিত অভিবাসী রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকার উচিত ওয়াশিংটনকে সহযোগিতা করা। সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ তাদের অনিয়মিতদের দেশে ফিরিয়ে আনলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক উষ্ণ রাখার পথ ঠিক থাকবে। মুষ্টিমেয় লোকের কারণে পুরো দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া ঠিক হবে না। বাংলাদেশের উচিত কৌশলী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাকা। আর এইড বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তি ব্যবহার করতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার ভাবমূর্তি কাজে লাগালে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এবং প্রশাসনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হবে।

Manual8 Ad Code

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন টানাপড়েন সৃষ্টি করতে পারে। এমনটা হলে তা হবে অপ্রত্যাশিত এবং তা মোকাবিলা করা কঠিন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এমনটা হবে না। হবে মূলত ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণেই। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করলে পাঁচটি ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে।

যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি, ক্রমবর্ধমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক, চীন ফ্যাক্টর, আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য এবং অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি, যা নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এ অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন, বিশেষ করে এশিয়া ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায়। তাই কোয়াড, অকাসসহ একাধিক বিভিন্ন সংযোগ কিংবা কাঠামোর মাধ্যমে এ অঞ্চলের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জড়িত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে, নতুন ট্রাম্প প্রশাসন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আগের মতো একই নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি জারি রাখবেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে চীনের উত্থান রোধ করার জন্য শক্তিশালী কৌশল নেবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, কোয়াড, অকাস কিংবা একাধিক কৌশলগত অংশীদারত্বে মিলিত হয়ে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে পশ্চিমা স্বার্থের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চাপ দেবে, যা বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের যেকোনো প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলবে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে দক্ষিণ এশিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চেক-অ্যান্ড-ব্যালেন্স সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ নিবদ্ধ থাকবে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের গতিশীলতা ঠিক রাখতে অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code