প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রমজানে কৃত্রিমসংকটের পাঁয়তারা পণ্যবাহী ৩৬০ জাহাজ ভাসছে বঙ্গোপসাগরে

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ
রমজানে কৃত্রিমসংকটের পাঁয়তারা পণ্যবাহী ৩৬০ জাহাজ ভাসছে বঙ্গোপসাগরে

Manual3 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ভোগ্যপণ্য নিয়ে ৩৬০টি লাইটার জাহাজ বঙ্গোপসাগরে ভাসছে। লাইটার জাহাজগুলো পণ্য রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন আমদানিকারকরা। এভাবে রমজানকে ঘিরে দেশে ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিমসংকট তৈরির পাঁয়তারা চলছে।

এদিকে মাদার ভেসেলগুলো (বড় জাহাজ) থেকে যথাসময়ে ভোগ্যপণ্য খালাস না করায় বহির্নোঙরে বাড়ছে বড় জাহাজের সারি। অন্যদিকে লাইটার জাহাজে পণ্য রাখায় প্রতিদিন আমদানিকারকরা মাশুল গুনতে হচ্ছে। এ কারণে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Manual8 Ad Code

লাইটার জাহাজ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৮০০ লাইটার জাহাজ পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। আমদানিকারকরা পণ্য খালাস না করে প্রায় ২০ শতাংশ লাইটার জাহাজকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। সেই হিসাবে, প্রায় ৩৬০ লাইটার জাহাজ তাদের দখলে রাখায় নৌপথে সিমেন্ট, বালু, ক্লিংকারসহ অন্য পণ্য পরিবহনে গতি কমেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জাহাজ জড়ো হয় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে। মাদার ভেসেলের ড্রাফট বেশি হওয়ায় এসব জাহাজ সরাসরি বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না। এ কারণে ৩০ ভাগ ফিডার জাহাজের সাহায্যে কনটেইনার আনা হয় বন্দর জেটিতে। সেখানে চলে খালাস প্রক্রিয়া। বাকি ৭০ ভাগ পণ্য বাল্ক জাহাজ থেকে ছোট ছোট লাইটার জাহাজে খালাস করে ৩৮টি নৌরুটে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। লাইটার জাহাজের ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টন পর্যন্ত। এভাবে বন্দরের বহির্নোঙর থেকে বছরে প্রায় ৯ থেকে ১০ কোটি টন পণ্য পরিবহন হয়।

Manual6 Ad Code

বাংলাদেশ লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মোহাম্মদ নবী আলম বলেন, ‘আমদানিকারকরা ভোগ্যপণ্যে কৃত্রিমসংকট তৈরির জন্য লাইটার জাহাজগুলো গুদাম বানিয়েছেন। বছরের অন্যান্য সময় সীমিত পরিমাণে ভোগ্যপণ্যের আমদানি হওয়ায় আমদানিকারকেরা দ্রুত পণ্য খালাস করতেন। এখন রমজান মাস আসছে, পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, পাশাপাশি আমদানিও অনেক বেড়েছে। তাই লাইটার জাহাজের চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু জাহাজেই পণ্য মজুত করে রাখায় অন্যান্য পণ্য পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে বহির্নোঙরে বড় জাহাজগুলোর অপেক্ষমাণ সময় বেড়েছে। ডব্লিউটিসিসহ সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে। যে যেভাবে পারছে, সেভাবে অনিয়ম করে যাচ্ছে।’

লাইটারেজ জাহাজ কাদিরিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক হাজী শফি বলেন, ‘মাসখানেকের বেশি সময় ধরে লাইটার জাহাজগুলোতে পণ্য রেখে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছিলেন আমদানিকারকরা। এটা নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই আমদানিকারকরা এমনটা করে। নৌ-অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি দেখভাল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে।’

ওয়েটিং টাইম বাড়লে মাদার ভেসেলগুলোকে (বড় জাহাজ) মাশুল দিতে হয় (প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ডলার)। লাইটার জাহাজগুলোতেও পণ্য রাখলে প্রতিদিন মাশুল নেন মালিকরা। পরে এর প্রভাব পড়ে ভোগ্যপণ্যের ওপর। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত ফি না থাকায় লাইটার জাহাজ মালিকরা যে যেভাবে পারছেন, মাশুল আদায় করছেন। তাই দৈনিক মাশুল ফির সংখ্যাটা জানাতে রাজি হননি লাইটার জাহাজ মালিকরা।

Manual5 Ad Code

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, দেড় মাস আগেও বন্দরের আলফা, ব্র্যাভা ও চার্লি এই তিন বহির্নোঙরে গড়ে ৪০টি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) পণ্য খালাসে লাইটার জাহাজের অপেক্ষায় ছিল। গত ৩১ জানুয়ারি বহির্নোঙরে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬টিতে। জাহাজের সংখ্যা আরও বেড়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪টিতে। বর্তমানেও অপেক্ষমাণ জাহাজের একই সংখ্যা বিরাজ করছে।

সরকার ভোগ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ায় এবার আমদানিকারক ও ভোগ্যপণ্যের আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। গত বছর রমজানকে ঘিরে ২১৪ আমদানিকারক ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছিলেন। এবার আমদানি করেছেন ৩৬৫ জন। বর্তমানে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোতে গম, ডাল, সরিষা, লবণ, কয়লা, পাথর, স্ল্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।

চট্টগ্রামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘কোনো ধরনের অসৎ উদ্দেশ্যে আমদানিকারকরা লাইটার জাহাজে পণ্য রাখে না। পণ্য খালাস করে গুদামে নেওয়া, আবার গুদাম থেকে বাজারজাত করা, এসব কাজে ঝামেলা বেশি। তাই ঝামেলা এড়াতে অনেক সময় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমলে আমদানিকারক এসব পণ্য জাহাজে রেখে দেন।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য নেওয়া, সেখান থেকে ধীরে ধীরে গুদামে নেওয়া, এভাবে যদি ১৫ দিন সময় পার করতে পারে, তাহলে বাজারে স্বাভাবিকভাবে একটা সংকট তৈরি হবে। এ সুযোগে তারা একটা বিশাল অঙ্ক পকেটে ঢোকাতে পারবে। কাজেই ভোগ্যপণ্যের আমদানি হলেই তো হবে না, সেটা পুরোটাই বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পণ্যের দাম বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের টার্গেট পূর্ণ করবে এবং সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে থাকবে।’

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code