প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সিন্ডিকেটের কবলে ভোজ্যতেল

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ
সিন্ডিকেটের কবলে ভোজ্যতেল

Manual6 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
চট্টগ্রামে ভোজ্যতেলের জন্য হাহাকার চলছে। দুই মাস আগ থেকে শুরু হওয়া সংকট বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। চাহিদার ২৫ শতাংশ ভোজ্যতেলও মিলছে না। শুধু নগরীতে নয়, উপজেলাগুলোতেও পাইকারি কিংবা খুচরা মুদির দোকানে মিলছে না ভোজ্যতেল। আসন্ন রমজানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে একাধিক সিন্ডিকেট ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। মূলত সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরই আমদানিকারক ও মিল মালিকরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। সেই সুযোগে বাড়তি লাভের আশায় মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরাও ভোজ্যতেল বিক্রি কৌশলে বন্ধ রেখেছে; যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ নেই বললেই চলে।

Manual5 Ad Code

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। অর্থাৎ প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৭ থেকে বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খোলা পাম তেল লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না।

খুচরা দোকানে যা মিলছে তাও বাড়তি দামে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, ২ লিটার ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা, ৫ লিটার বোতল ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৬৫-১৭০ টাকায়। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা এবং প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকায় বিক্রি করার কথা।

মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে গিয়ে এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খোলা সয়াবিন তেলের দাম দুই মাসের ব্যবধানে মনপ্রতি ৯০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি বাজারে প্রতিমন (৩৭ দশমিক ৩২ লিটার) ভোজ্যতেল বর্তমানে ৬ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা দুই মাস আগে ছিল ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আমদানিকারকরা মিলগেটে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কারণে পাইকারি বাজারে অতিপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা বোতলজাত সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ পাচ্ছেন না। পণ্যটির সরবরাহ বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই তারা ক্রেতাদের বোতলজাত সয়াবিন তেল দিতে পারছেন না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিরা মাঝে মধ্যে অল্প পরিমাণ তেল সরবরাহ করলেও বাসমতী চাল-আটা-ময়দা নিতে হবে বলে অদ্ভুত শর্ত দিচ্ছেন। ভোক্তাদের জিম্মি করার এটা এক নতুন কৌশল বলে অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। রমজান সামনে রেখে আমদানিকারক তথা মিলাররা সিন্ডিকেট করেই ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির করে তুলেছেন বলে তাদের দাবি। সূত্র জানায়, ১০০ লিটার সয়াবিন তেলের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ লিটার।

Manual5 Ad Code

বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। গত ৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনা থেকে ‘এমটি আরডমোর শায়ানি’ ও ‘এমটি ডাম্বলডোর’ নামের দুটি জাহাজে বন্দরে আনা হয় ২১ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন তেল। ১০ ডিসেম্বর ব্রাজিল থেকে ‘এমটি সানি ভিক্টরি’ ও আর্জেন্টিনা থেকে ‘এমটি জিঙ্গা থ্রেশার’ জাহাজে আনা হয় ৩০ হাজার ৬০০ টন সয়াবিন তেল। এই চার জাহাজে টিকে গ্রুপ ২৫ হাজার টন, সিটি গ্রুপ ২০ হাজার টন ও মেঘনা গ্রুপ ৭ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি করে। আরও তেল পাইপলাইনে রয়েছে। জানা যায়, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়।

Manual7 Ad Code

সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার আমদানির ওপর দুই দফায় শুল্ক-কর কমিয়েছে। এরপরও সুফল মিলছে না। বরং দাম আরও বেড়েছে। কামরুল হুদা নামে খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক বলেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে। তাই আমদানি গত বছরের তুলনায় এ বছর কমেছে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই দামে বিক্রি করলে তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কমলেও খোলা সয়াবিনের সরবরাহ রয়েছে। পাম অয়েলের দামও এবার রেকর্ড গড়েছে। মূলত ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন সংকট, বায়োডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। আবার কিছু ভোজ্যতেল কোম্পানি শর্ত সাপেক্ষে তেল বিক্রি করছে।

Manual3 Ad Code

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের আড়তদার আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমদানিকারকরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। চাহিদার ২৫ শতাংশ তেল সরবরাহ করছেন। এ কারণে বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কারণ আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code