স্পোর্টস রিপোর্টার :
কলকাতায় সল্ট লেক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ জয়ী তারকা মেসিকে দেখা নিয়ে তাণ্ডব ঘটেছে। মেসিকে দেখতে না পেয়ে গ্যালারি থেকে উত্তেজিত দর্শক ভাঙচুর করেছে। গ্যালারির চেয়ার ভেঙে মাঠে ছুড়ে মেরেছে। গ্যালারির ফেন্সিং উপকে হাজার হাজার দর্শক মাঠে ঢুকে পড়ে। উত্তেজিত দর্শক সাজসজ্জা সব ভেঙে ফেলে। কার্পেট খুলে নিয়ে যায়। ব্যানার, ফেস্টুন পদদলিত করেন। সোফায় আগুন লাগিয়ে দেয়। গোলপোস্টের জাল চিড়ে ফেলেছে। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে তরুণ ভক্তরা সাউন্ড সিস্টেম ভেঙে ফেলেন। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়।
এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এক্স হ্যান্ডেলে এক বার্তায় মেসির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, দেশের আপামর ফুটবল দর্শকের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং অব্যবস্থাপনার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন তিনি। মেসি তার ব্যক্তিগত বিমানে কলকাতার আকাশে ওঠার পরই বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয় আয়োজক শতদ্রু দত্তকে। মেসি উৎসবের রং ছড়িয়েছিল কলকাতার আকাশে-বাতাসে। কিন্তু দিন শেষে যা ঘাটে গেছে তা কলকাতার ফুটবলে লজ্জাজনক এক দিন গেছে কলকাতার ঘটনায় হায়দরাবাদে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। খবর কলকাতার গণমাধ্যমের।
মেসির আগমন ঘিরে কলকাতা ফুটবল উৎসবে মেতে ছিল। লিওনেল মেসি পরশু রাত আড়াইটায় কলকাতায় পা রাখেন। সঙ্গে ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী তারকা ডি পল এবং লুইস সুয়ারেজ। নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য ছিলেন বাউন্সার। রাত থেকেই কলকাতা ঘুমহীন কাটিয়ে দেয়। যুব ভারতীর কাছেই একটি হোটেলে ছিলেন মেসি। সেখানেও মেসি মেসি করে আকাশ কাঁপিয়ে দিয়েছেন ভক্তরা। গতকাল দিনের প্রথম ভাগে সল্ট লেকে যাবেন। তার আগে লেক টাউনে স্থাপিত মেসি নিজের ৭০ ফুট উঁচু ভাস্কর্য সুইচ টিপে উন্মোচন করেন। আর্জেন্টিনার ভাষায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মেসি।
ফুটবল জাদুকর মেসিকে দেখার জন্য কাক-ডাকা ভোরে কলকাতার সল্ট লেকে যুব ভারতী স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ। মেসি ৩৫ মিনিট মাঠে থাকবেন, তাকে নিয়ে নানা অনুষ্ঠান হবে, ঢাকঢোল পিটিয়ে মেসিকে বরণ করা হবে, মেসি খেলবেন খুদে ফুটবলারদের সঙ্গে। পেনাল্টি শুটআউটে অংশ নেবেন, স্টেডিয়ামের সব দর্শক ফুটবল জাদুকরকে দেখবেন জীবন জীবন ধন্য করবেন।
গ্যালারি থেকে দেখা গেল মেসিকে সবাই এমনভাবে ঘিরে ধরেছেন তাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয়। ৫ হাজার টাকায় টিকিট কিনেও মেসিকে দেখতে পাচ্ছিলেন না দর্শক। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কাছের মানুষরা এমনভাবে মেসিকে ঘিরে ধরে সেলফি তুলছিলেন তাতে মেসিকে দেখাই যাচ্ছিল না। আয়োজক কর্তা শতদ্রু দত্ত বারবার বলছিলেন সবাই সরে যান প্লিজ। কিন্তু কেউ কারো কথাই শুনছেন না। সল্ট লেকের সবুজ মাঠে মেসি। সবার উদ্দেশ্যে হাত উঁচু করে নাড়লেন। এ যেন অন্যরকম এক অনুভূতি। গ্যালারির সাধারণ দর্শক মেসি মেসি বলে গগনবিদারি চিৎকার করলেন। অনেকেই ভিড়ের এ ধরে মধ্যে মেসিকে না দেখতে পেয়ে গ্যালারি হতে বোতল ছুড়লেন দর্শক। মেসিও এই পরিবেশে বিরক্ত, পুরো প্রদফিল করলেন না।
অনুষ্ঠানের শুরু না হতেই চোখের পলকে উধাও হয়ে গেলেন, মেসি নেই। চলে গেছেন। ১০ মিনিটেই মেসি নেই। তখনই শুরু হয় তাত্তক। এত টাকা খরচ করে সাধারণ দর্শক মাঠে এসেছেন তারা কেউ ফুটবলের স্বপ্নের নায়ককে দেখতে পারলেন না। হাজার হাজার দর্শক গ্যালারি থেকে মাঠে ঢুকে যায় তাণ্ডব চালায়। লুটপাট হওয়ার কথা জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠান শেষ করে হোটেলে মেসিকে নিয়ে নানা আয়োজন ছিল যেখানে তার সঙ্গে ছবি তোলা, খাওয়া, জার্সিতে অটোগ্রাফ, সব কার্যক্রমে একজন হলে একরকম দাম দিতে হবে, দুই জন হলে কাড়বে। পুরো পরিবার রো পরিবার হলে ১২ ১২ লাখ টাকা গুনতে হবে। সব ফেলে রেখে চলে যান মেসি। বিমানবন্দরে মেসিকে তুলে দেওয়ার পর আয়োজক শতদ্রু দত্তকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। মাঝপথ থেকে ফিরে যান মমতা ব্যানার্জি, শাহরুখ সিকে নিয়ে খানসহ অনেক নামিদামি তারকারা।
পরে মমতা ব্যানার্জি যুব ভারতীর ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন। চরম বিশৃঙ্খলার জন্য মেসির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এই সঙ্গে তিনি কলকাতার হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই কমিটিতে মুখ্যসচিব এবং অতিরিক্ত মুখ্যসচিবও কয়েছেন। গোটা ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে এক্স হ্যান্ডলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘সল্টলেক স্টেডিয়াম আজ যে অব্যবস্থার সাক্ষী রইল, তার জন্য আমি অত্যন্ত বিরক্ত ও মর্মাহত। হাজার ক্রীড়াপ্রেমীর মতো আমিও স্টেডিয়ামে যাচ্ছিলাম লিওনেল মেসিকে দেখতে। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য মেসি ও তার ভক্তদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করেছি। সেই কমিটি ঘটনার বিস্তারিত খতিয়ে দেখবে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তা-ও দেখবে। আমি আরও একবার সমগ্র ক্রীড়াপ্রেমীদের ঝছে ক্ষমাপ্রার্থী।’
Sharing is caring!