প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

তীব্র হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ণ
তীব্র হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ

Manual1 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে একে অপরকে ঘায়েল করার লড়াইয়ে নেমেছে। যদিও লড়াইটা শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে তিনি বিভিন্ন দেশের ওপর যখন পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন, তখন চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেন। এরপর ধাপে ধাপে তা বাড়িয়ে সর্বশেষ ১৪৫ শতাংশ করা হয়। অন্যদিকে চীনও একের পর এক ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে চলছে।

 

Manual8 Ad Code

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে বেইজিং। শনিবার থেকে তা কার্যকর হবে বলে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়। এর মধ্য দিয়ে দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রকৃতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। কারণ ওয়াশিংটন যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, বেইজিং তার পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, শুল্কযুদ্ধে কেউ জিতবে না। তিনি ট্রাম্পের ‘গুন্ডামি’ প্রতিরোধে চীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বেইজিংয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।

 

Manual1 Ad Code

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তবে বিবৃতিতে এটাও বলা হয়েছে, এরপর যুক্তরাষ্ট্র আবার পাল্টা শুল্ক দিলে তারা আর এতে ‘সাড়া দেবে না’। অর্থাৎ চীনের পক্ষ থেকে আর শুল্ক বাড়ানো হবে না। দেশটি আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ শুল্ক আরোপের বিষয়টি আন্তর্জাতিক এবং অর্থনৈতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতি, মৌলিক অর্থনৈতিক আইন এবং সাধারণ জ্ঞানকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে এবং এটি সম্পূর্ণ একতরফা ধমকি ও জবরদস্তি।

 

এ ছাড়া চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য রপ্তানির ওপর আরোপিত শুল্ক অর্থনীতিতে বাস্তবিক কোনো তাৎপর্য ছাড়াই একটি সংখ্যার খেলায় পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, “বারবার শুল্ক বৃদ্ধি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুন্ডামি ও জবরদস্তি’কে আরও উন্মোচিত করবে। এটি একটি রসিকতায় পরিণত হবে।”

 

মাত্র এক সপ্তাহ আগেও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। সেটা এখন বাড়তে বাড়তে ১৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক ধার্য করেন। ওই সময় তিনি চীনের পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এরপর বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর একই হারে (৩৪ শতাংশ) পাল্টা শুল্ক ধার্য করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প গত সোমবার হুমকি দিয়ে বলেন, চীন যদি নতুন ধার্য করা শুল্ক প্রত্যাহার না করে তাহলে চীনা পণ্যে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, নতুন করে আরোপ করা শুল্ক তিনি প্রত্যাহার করবেন না। যদিও পরের দিন তিনি চীন ছাড়া অন্য সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। পাশাপাশি চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে করা হয় ১২৫ শতাংশ।

 

এরপর গত বৃহস্পতিবার সেটি আরও বেড়ে ১৪৫ শতাংশে পৌঁছায়। উচ্চ শুল্কের মাধ্যমে চীনকে ঘায়েলের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতির আরেকটি নতুন উত্তেজনাপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর আগে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ ধার্য করে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

 

Manual4 Ad Code

 

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কাছে চীনের অভিযোগ দায়ের

 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, প্রতিশোধমূলক শুল্ক নিয়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেছে চীন। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প চীনা পণ্যের বর্ডার ট্যাক্স ১০ শতাংশ বাড়ানোর পর ডব্লিউটিওর কাছে একটি অভিযোগ করেছিল বেইজিং। এরপরে গত সপ্তাহে ডব্লিউটিওতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে তারা বিবাদসংক্রান্ত আরেকটি আবেদন দাখিল করে। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে উচ্চ শুল্কের সম্মুখীন দেশগুলো এখন চীনের মতো তাদের অভিযোগও ডব্লিউটিওর বিরোধ নিষ্পত্তি আদালতে নিয়ে যেতে পারে।

 

চীন-যুক্তরাষ্ট্র কী কী পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে

Manual6 Ad Code

 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে গত বছর যেসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার সবচেয়ে বড় অংশ ছিল সয়াবিন। চীনের প্রায় ৪৪ কোটি শূকরকে খাওয়ানোর জন্য মূলত ব্যবহার করা হয় ওই সয়াবিন। এ ছাড়া চীনে ওষুধ ও পেট্রোলিয়ামও পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে চীনে গাড়ি, পেট্রোলিয়াম গ্যাস, ভ্যাকসিন, বিউটি অ্যান্ড স্কিনকেয়ারের পণ্য, তুলা, ভুট্টা, প্লাস্টিকের পণ্য রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

 

অন্যদিকে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রনিকস আইটেম, কম্পিউটার এবং খেলনা রপ্তানি হয়। বিপুল পরিমাণ ব্যাটারিও রপ্তানি করা হয়। বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ওই ব্যাটারি। এ ছাড়া প্লাস্টিক পণ্য, ফার্নিচার, মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট, পোশাক রপ্তানি করে।

 

প্রসঙ্গত, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের বৃহত্তম অংশ হলো স্মার্টফোন। এর পরিমাণ মোট আমদানির ৯ শতাংশ। এসব স্মার্টফোনের একটা বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের জন্য চীনে তৈরি করা হয়।

 

ট্রাম্প প্রশাসন বেইজিংয়ের ওপর শুল্ক আরোপ করার কারণে চীন থেকে আমদানি হওয়া এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য যথেষ্ট ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে চলেছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, বিবিসি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code