প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ডাকসুর নির্বাচন ঘিরে ছাত্ররাজনীতি: অস্থিরতার নেপথ্যে প্রভাব বিস্তার!

editor
প্রকাশিত আগস্ট ১১, ২০২৫, ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ
ডাকসুর নির্বাচন ঘিরে ছাত্ররাজনীতি: অস্থিরতার নেপথ্যে প্রভাব বিস্তার!

Manual5 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার পর মধ্যরাতে আবাসিক হলগুলোতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন করে গত বছরের ১৭ জুলাই আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার জন্যই এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় অংশই কোনো ছাত্রসংগঠনের কাছে জিম্মি থাকতে আগ্রহী নন। তারা হলে সিট বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে রাজনীতি ছিল। হলে সক্রিয় সংগঠনগুলো বিভিন্ন প্যানেলের মাধ্যমে হল সংসদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। বর্তমানে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজনীতি চালু থাকলেও হলে রাজনীতি থাকবে না- সেটি নিয়ে নানা মন্তব্য আসছে। এদিকে গতকাল রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ছাত্রসংগঠনগুলোর রাজনীতি নিয়ে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে নিজেদের মধ্যে চুক্তি বা বোঝাপড়ায় আসা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন।

 

Manual7 Ad Code

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ব্যাপক হামলা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ফলে গত বছরের ১৬ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে ছাত্রলীগের নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। তাদের কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। অন্য ক্যাম্পাসগুলো থেকেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হলছাড়া করা হয়। পাশাপাশি ১৭ জুলাই একের পর এক হলে শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষেদের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।

 

৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আবাসিক হলের পরিস্থিতিও পাল্টে যায়। কখনো ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, কখনো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে সরব হয় ক্যাম্পাস। ছাত্রদলের পোস্টারিং ইস্যুতে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। পরে এসব প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া অনেককে অন্য সংগঠনে সক্রিয় হতে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নামে নতুন ছাত্রসংগঠন গঠিত হয়। যদিও সেই সংগঠনের আত্মপ্রকাশের দিন মধুর ক্যানটিনে কমিটিতে পদ নিয়ে মারামারি হয় দুটি পক্ষের মধ্যে।

 

অন্যদিকে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ধীরে ধীরে নিজস্ব ব্যানারে কর্মসূচি পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছাত্রসংগঠনের সভাকে কেন্দ্র ছাত্রশিবিরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দলটির পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

অন্যদিকে হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিনিধি মনোনয়ন/নির্বাচিত করে হল কর্তৃপক্ষ। যারা হলের বিভিন্ন বিষয়ে ভূমিকা রাখতেন এবং ব্যাচভিত্তিক মতামত দিতেন। অন্যদিকে ছাত্রসংগঠনগুলো সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় মনোযোগী হয়। ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা ব্যক্তি উদ্যোগে মেডিকেল কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কয়েকটি হলে পানির ফিল্টার ব্যবস্থা করেন। ছাত্রশিবিরও সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ইফতার আয়োজন, একাধিক হলে ফিল্টার স্থাপন, মেডিকেল ক্যাম্প ও সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করেন। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) নেতা-কর্মীরাও ব্যক্তি উদ্যোগে সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার চেষ্টা করেন। তবে ছাত্রদল, বাগছাসের নেতা-কর্মীরা হলে ছাত্রশিবিরের কমিটির তালিকা প্রকাশ করতে বললেও তারা সেটি প্রকাশ করেনি। এটিকে ‘গুপ্ত রাজনীতি’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও ‘গুপ্ত ও প্রকাশ্য’ রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা জানিয়েছেন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী, ছাত্রসংগঠন ও প্রশাসনসংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। সেই লক্ষ্যে ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সবাই শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচির দিকে নজর দেন। ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রতিযোগিতা চলে। স্মারকলিপি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো ছিল নিত্যদিনের চিত্র।

ডাকসুতে এবার কয়েকটি ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্র হিসেবে শীর্ষ পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী প্রার্থীদের নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। যার কারণে অন্যদের অবস্থান ব্যাকফুটে। সেই সব প্রার্থী ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণা করে সেই বিষয়টি কাজে লাগিয়েছেন। ফলে রাজনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকা প্রার্থীরা ব্যাকফুটে চলে যান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা নিজে বাম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছাত্রদলের কমিটি বাতিল ও শিবিরের কমিটি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

Manual1 Ad Code

 

সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিম্মি হতে চান না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে মূলত রাজনৈতিকভাবে দখলদারত্ব শুরু হয় সিটসংকটকে পুঁজি করে। শিক্ষার্থী অনুপাতে সিট না থাকায় ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হলে গণরুম বানিয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। ফলে তাদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। মধ্যরাতের বিক্ষোভেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নিতে বাধ্য হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও অমর একুশে হলের আবাসিক ছাত্র মো. বায়েজিদ বোস্তামী বলেন, ‘হল রাজনীতির উদ্দেশ্য মূলত ম্যান-পাওয়ার বাড়ানো যাতে বিভিন্ন প্রোগ্রামে বা নেতাদের প্রটোকল দেওয়ার জন্য লোকবল সরবরাহ করা যায়। কিন্তু গণরুম-গেস্টরুম ছাড়া স্বেচ্ছায় এসব প্রোগ্রামে কেউ যেতে চাইবে না। এ জন্য ধীরে ধীরে হল রাজনীতি গণরুম-গেস্টরুমকেন্দ্রিক হয়ে যাবে, যা আমরা কখনো চাই না।’

রোকেয়া হলের চতুর্থ বর্ষের আবাসিক ছাত্রী নুসরাত জাহান রিজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, মুক্তচিন্তা ও সৃজনশীলতা চর্চার জায়গা। কিন্তু রাজনৈতিক শিকল শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে দাসে পরিণত করে, স্বাধীন মতপ্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি কখনোই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে না; বরং শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে দলীয় স্বার্থে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষমতা দেওয়া মানে সিট বাণিজ্য ও দখলদারত্বকে বৈধতা দেওয়া, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সজিব ইসলাম বলেন, ‘আমার সিটে আমি ঘুমাইতে চাই। রাত দুইটায় গেস্টরুমে বাবা-মারে গালি খাওয়াইতে চাই না।’

২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মো. জামিউল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্রথম বর্ষেই লিগ্যাল সিট পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। হলে রাজনীতি থাকলে, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ভবিষ্যতেও এই গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনবে না তার নিশ্চয়তা কী? আমরা যেই কষ্ট পেয়েছি তা যেন নতুনরা না পায়, সেটাই চাওয়া।’

 

বন্ধ থাকার সুবিধা-অসুবিধা, যখন ছিল তখন কেমন ছিল চিত্র

হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকার সুবিধা-অসুবিধা দুটিই রয়েছে। হলে রাজনীতি বন্ধ থাকলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে না। ছাত্রসংগঠনগুলোর তখন কক্ষ দখল করা নিয়ে আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ থাকবে না। শুধু ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন থাকলেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও দেখা যায়। এখন এসব থেকে মুক্ত। অন্যদিকে বন্ধ থাকলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বেড়ে যায়, যা সহজে বোঝা যায় না। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগের হাতেই নিয়ন্ত্রণ ছিল হলের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের মধ্যে ছাত্রীদের হলে হল প্রশাসনের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ছিল। ছাত্রদের হলের মধ্যে খুব কম হলেই হল কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওঠাত। অধিকাংশ ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গণরুম তৈরি করে (যেখানে ছোট কক্ষে অধিক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকেন) শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা হতো। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর চলত গণরুম ও গেস্টরুমে মানসিক নির্যাতন। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ করতে হতো। ফলে উচ্চশিক্ষা অর্জনে এসে অনেক শিক্ষার্থী তাদের গতিপথ হারিয়ে ফেলেন। সেসব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে হলের রাজনীতির বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী যোবায়ের হোসেন বলেন, হলে আমরা রাজনীতি চাই না। এখন তো ছাত্রসংগঠনের নেতারা যাদের বৈধ সিট আছে, তারা হলে অবস্থান করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রোগ্রাম এখানে হচ্ছে না।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রশ্ন

জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রাখা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও ছাত্রশিবিরেও সাবেক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাউকে কাউকে যুক্ত হতে দেখা গেছে। সর্বশেষ ছাত্রদলের হল কমিটির পদপ্রাপ্তদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের রাজনীতি করার অভিযোগ ওঠে। এই ইস্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা। অনেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলার কথা বলেছেন। অনেকে নিরপরাধ থাকলে তাদের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পক্ষে মত দেন। গত শুক্রবার মধ্যরাতে বিক্ষোভের সময় সূর্যসেন হলে পানির ফিল্টার ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুরে ভূমিকা রাখা এক শিক্ষার্থীকে আগে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। তার সক্রিয় থাকার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে।

সেবাভিত্তিক রাজনীতি কী বিকল্প

হল ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিকল্প হিসেবে অনেকে সেবাভিত্তিক রাজনীতির কথা বলেছেন, যা ইতোমধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলো করে দেখিয়েছে। আবার অনেকে ছাত্রসংগঠন, সাধারণ শিক্ষার্থী সবাই মিলে একটা ছাত্ররাজনীতির রূপরেখা তৈরির কথা বলেছেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রেখে সবাই ক্যাম্পাসে রাজনীতি করবেন।

Manual1 Ad Code

ছাত্রসংগঠনের নেতারা যা বলছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, আগস্ট-পরবর্তী সময় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন বিভিন্ন নামে-বেনামে এবং তাদের নিজেদের নামেও কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছেন। টার্গেট করে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ছাত্রদলকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে এবং আমরা সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে কোনো উসকানিতে পা দিইনি।

তিনি বলেন, ‘যারা নিপীড়নমূলক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তারা এখনো হলে অবস্থান করছে। হল প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তারা ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। তার প্রথম ধাপ আমরা আমাদের হল কমিটি ঘোষণার পরই দেখেছি।’

ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘হলে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি, থাকবে না এটি এক ধরনের পলিসি ডিসকাশন। সে জন্য সব স্টেকহোল্ডার বসে আলাপ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই কল্যাণকর। আমাদের কমিটমেন্ট হলো আমরা হলে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্র্যাকটিস করিনি, সামনেও করার চিন্তা নেই। আমরা যেসব সেবামূলক কর্মসূচি করে চালিয়ে নিয়ে গেছি এবং পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম আমরা বাইরে করেছি।’

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একাংশের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি থাকতে পারবে, কিন্তু অ্যাকাডেমিক এরিয়া এবং হলে রাজনীতি থাকতে পারবে না, এটা খুবই সাংঘর্ষিক এবং হাস্যকর কথা।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলে ছাত্ররাজনীতি চান না। আমাদের মনে হয় ২৪-পরবর্তী শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট বুঝে রাজনীতি সাজাতে হবে এবং এখানে কেউ একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তাই শিক্ষার্থী-ছাত্রসংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে এই তিন পক্ষের আলাপ-আলোচনা করতে হবে- হলে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি, থাকবে না? যদি থাকে সেটি কেমন হবে, এটি নিয়ে লিখিত একটি কমিটমেন্ট থাকবে।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা চান না, হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতির কাঠামো থাক। ছাত্রসংগঠন একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ছাত্রলীগ যেভাবে কমিটি দেয় একইভাবে ছাত্রদলও কমিটি দেয়। তারা পরিকল্পিতভাবে ডাকসু বানচাল করতে এই কাজ করেছে।’ বলা চলে, তারা পাতানো একটি ম্যাচ খেলল।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code