প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কয়লার দাম ৩০০০ কোটি টাকা বেশি নিয়েছে আদানি

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৮, ২০২৪, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ
কয়লার দাম ৩০০০ কোটি টাকা বেশি নিয়েছে আদানি

Manual5 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৫ মাসে শুধু কয়লার দাম বাবদ বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়েছে ভারতের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ আদানি। রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা কেনার সময় সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ডিসকাউন্ট (মূল্যছাড়) পাওয়া গেলেও আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে তা পায়নি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। নিজের খনি থেকে কয়লা সরবরাহ করা আদানি এ ক্ষেত্রে কোনো ডিসকাউন্ট দেয়নি। কেবল তা-ই নয়, খারাপ মানের কয়লা দেওয়ার পরও চড়া দাম নিচ্ছে আদানি। চুক্তির দুর্বলতার কারণে এসব নিয়ে আদানির সঙ্গে আলোচনায়ও পেরে উঠছে না পিডিবি।

 

পিডিবির একাধিক প্রকৌশলী ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা বাবদ গড় খরচ ছিল ৮ টাকা ১৭ পয়সা। একই সময়ে ইউনিটপ্রতি কয়লার খরচ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছিল ৯ টাকা ৮৬ পয়সা এবং আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছিল ৮ টাকা ৫৩ পয়সা। কিন্তু এরপরেই আদানির কেন্দ্রে জ্বালানি খরচ রামপালকেও পেছনে ফেলে যায়। ২০২৩ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য কয়লার দাম নিয়েছে গড়ে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা। একই সময়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েছে গড়ে ৭ টাকা ৯২ পয়সা, আর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েছে গড়ে ৮ টাকা ১৫ পয়সা। সেই হিসাবে পায়রার তুলনায় ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৪১ পয়সা, আর রামপালের তুলনায় ২৩ পয়সা বেশি নিয়েছে আদানি।

 

আদানির চুক্তি ও আদানির কয়লা কেনার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি টন ৪৬০০ কিলো ক্যালরির কয়লা ৯০ ডলারে কিনছে আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার টাকা দিচ্ছে পিডিবি।

 

অন্যদিকে একই মানের কয়লা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কিনছে ৬৮ ডলারে। সে হিসাবে প্রতি টনে ২০ থেকে ২২ ডলার বেশি নিচ্ছে আদানি। আদানি আবার এই কয়লা নিজের খনি থেকে কিনছে। আদানির কয়লায় ডিসকাউন্ট না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি টনপ্রতি বাড়তি ২০ থেকে ২২ ডলার নিচ্ছে। আর বছর শেষে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাচ্ছে শুধু কয়লা বিক্রি করে।

 

কেন কয়লার দাম বেশি নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে আদানি

 

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য পিডিবির ‘পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ)’ করে থাকে। এসব চুক্তিতে জ্বালানি ব্যয় বা জ্বালানির দাম, কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্রভাড়া, বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালন ব্যয়, ব্যাংকের সুদ, মুনাফা, জ্বালানির দাম, বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবচয় ব্যয়সহ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়। চুক্তিতে জ্বালানির মূল্য কী পদ্ধতিতে ঠিক করা হবে, তারও একটি ফর্মুলা থাকে। এতে প্রধান শর্ত থাকে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম যখন যে দামে কেনা হবে, সেই দাম দেওয়া হবে। কেন্দ্র পর্যন্ত জ্বালানি আনতে যত ব্যয় হবে, সেটাও ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের মূল্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

Manual8 Ad Code

 

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যখন ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কেনার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তি করে, তখন তারা সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পাবে—এমন শর্তে চুক্তিটি করে। রামপালও বছরব্যাপী কয়লা কেনার ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট রাখার শর্তেই চুক্তি করে। কিন্তু আদানির কেন্দ্রের জন্য কয়লা কেনার চুক্তিতে ডিসকাউন্টের বিষয়টি নেই। এই সুযোগটিই নিচ্ছে আদানি গ্রুপ।

 

কয়লার সমাধান যেভাবে হতে পারে

Manual6 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, যেহেতু জ্বালানির সংস্থান করার কথা পিডিবির। সে কারণে পিডিবি এখন আদানিকে কয়লা কিনে দিতে পারে। পিডিবি যদি নিজে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কেনার কাজটি হাতে নেয়, তাহলে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট নিতে পারবে, সে ক্ষেত্রে আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে আনা কয়লার বাড়তি দাম নিতে পারবে না।

 

Manual4 Ad Code

অবশ্য কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধিসহ দেশের অনেকে আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই। তাঁরা বলছেন, আদানির সঙ্গে চুক্তিটি অন্যায্য ও অন্যায়ভাবে হয়েছে। এমন ধরনের অন্যায্য চুক্তি কোনোভাবেই থাকতে পারে না। এটি দ্রুত বাতিল করতে হবে।

 

এ বিষয়ে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম  বলেন, ‘আদানির সঙ্গে চুক্তিতে আমরা সবখানে ঠকেছি, সবগুলো পয়েন্টে আদানি জিতেছে। এই চুক্তিটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কোনো রীতি অনুসরণ করেনি। আদানির চুক্তি অন্যায়, অসাম্য ও অবৈধ। এই চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’

 

শামসুল আলম আরও বলেন, ‘আদানির চুক্তি গত সরকারকে বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলাম, তারা করেনি। এই সরকারও বাতিলের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code