প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নাকি লেজুড়বৃত্তি: কী হবে ডাকসু নেতাদের ভূমিকা

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ণ
শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নাকি লেজুড়বৃত্তি: কী হবে ডাকসু নেতাদের ভূমিকা

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

এবার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ভোট গ্রহণের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, উৎসবের আমেজ ততই বাড়ছে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে বাড়ছে নির্বাচনের উত্তাপ। আসছে ৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি শিক্ষার্থীরা রায় দেবেন, কে হবেন ছাত্র সংসদের পরবর্তী এক বছরের কর্ণধার। তাই শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার পারদ আকাশচুম্বী। প্রচারকর্মে সরব প্রার্থীরা। ক্যাম্পাসে সমানতালে জনসংযোগ করছেন ছাত্র সংগঠন-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা। আবার খাবারের মানোন্নয়ন, পরিবহন ও আবাসনসংকট নিরসনসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভোটারদের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেসব পূরণে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।

Manual1 Ad Code

 

তাদের নির্বাচনি ইশতেহারেও গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দমন-পীড়নের মতো ঘৃণিত চর্চা বন্ধ করা, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, র‌্যাগিং, অনলাইন-অফলাইনে ঘৃণা ও মিসইনফরমেশন প্রতিরোধে ডাকসুর অধীনে একটি শিক্ষার্থী সুরক্ষা সেল গঠন করা হবেÑএমন অঙ্গীকারের কথা বলেছেন। তবে এ ইশতেহার কি সত্যিই শিক্ষার্থীদের আশা পূরণ করবে, নাকি নতুন কোনো সংশয় তৈরি করবে? এ প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে। কারণ অতীতে দেখা গেছে, ডাকসুর নির্বাচিতরা দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির প্রতি অনুগত থাকতে বাধ্য করে। ক্ষমতাসীন দলের আনুগত্যকেই অগ্রাধিকার দেয়, তখন তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অনুপস্থিতি থাকে, ব্যক্তিস্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়ে। যদিও এবার প্রার্থীদের ইশতেহারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জায়গা পেয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তব চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচনি ইশতেহারে যেসব সুন্দর সুন্দর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছেÑজয়ী হলে বাস্তবে কতটা পূরণ করতে পারবে, নাকি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে সেটিই দেখার বিষয়।

Manual3 Ad Code

আবার অনেকে বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দমন-পীড়নের মতো ঘৃণিত চর্চা বন্ধ হয়ে গেছে। সেটি আর ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। তবুও অতীতের মতো গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি ফিরে আসার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন প্রার্থীর অভিমত, বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে উন্নীত করতে ডাকসু নেতাদের ভূমিকা সীমিত। তবুও গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের চাহিদা বদলে গেছে। তাই তাদের প্রত্যাশা সব রাজনৈতিক আদর্শের সহাবস্থান নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র বানাবেন ডাকসুর বিজয়ীরা।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ২৯ জুলাই ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। মনোনয়নপত্র বিতরণ করা শুরু হয় ১২ আগস্ট। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ১৯ আগস্ট। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয় ২০ আগস্ট। এরপর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয় ২১ আগস্ট। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২৪ আগস্ট। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয় ২৫ আগস্ট। ৯ সেপ্টেম্বর এ নির্বাচনে ভোট ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। ২৮ বছর পর ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

Manual5 Ad Code

এবার ডাকসুতে ২৮টি পদে নির্বাচন হবে। ৩৯ হাজার ৭৭৫ ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১১টি প্যানেল। চূড়ান্তভাবে ৪৭১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন। যদিও ডাকসুতে মোট ভোটারের ৪৮ শতাংশই ছাত্রী। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ নির্বাচন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। এবার ডাকসু নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থী লড়ছেন। নারীপ্রার্থীও অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেলামেশা ও ইশতেহার প্রচারে। কিছু প্রার্থী প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনের চেয়ে এবারের ডাকসু নির্বাচন হবে একেবারেই ভিন্ন। গতবার ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের আধিপত্যের কারণে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে পারেনি এবং নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগও ওঠে। তবে এবার জনপ্রিয়তার নিরিখে নির্দিষ্ট করে কাউকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। আবাসিক হলগুলোর পাশাপাশি অনাবাসিক ভোটারদের আকৃষ্ট করতে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন হেভিওয়েট থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। কেউ দলগতভাবে আবার কেউ স্বতন্ত্রভাবে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। কষছেন নানা হিসাব-নিকাশ। এরই মধ্যে কেউ রাজনৈতিক কারণে, কেউবা অভিনব প্রচারণা ও সাবলীল বাচনভঙ্গির কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। নির্বাচনের শুরু থেকে তারা অনলাইন ও অফলাইনে বেশ সক্রিয়। আর উৎসবের আমেজের মধ্যেও থেমে নেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। প্রার্থীদের ইশতেহারে রয়েছে আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করা, কারিকুলাম, অবকাঠামো ও গবেষণার মানোন্নয়ন, পরিবহনব্যবস্থা সহজ করা, হয়রানিমুক্ত প্রশাসনিক সেবা নিশ্চিত করা, পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস, কার্যকর ডাকসু এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ঢাবিকে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার মতো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।

তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে কে এগিয়ে আর কে পিছিয়ে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। অনেক প্রার্থী নানা প্রতিশ্রুতির বুলি আওড়াচ্ছেন, আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। সুতরাং কোনো দলীয় প্রার্থী বিবেচনায় অথবা তাদের মুখের কথায় কিংবা হুজুগে বিশ্বাসী না হয়ে জেনে-বুঝে নিশ্চিত হয়েই ভোট দেবেন এমনটাই জানিয়েছেন ভোটারা।

ঢাবির একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতীতে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র সংগঠনগুলোর একক প্রভাব থাকলেও যেহেতু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে নির্বাচনে নেই, আবার ছাত্রদল-শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। একই সঙ্গে নারী ভোট ও আঞ্চলিকতার কারণে জয়-পরাজয়ে প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে উঠে আসা নেতারা এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থীরাও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন এবং তাদের অনেকেরই ক্যাম্পাসে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ভিপি, জিএস, এজিএস পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।

প্রার্থীদের ইশতেহার প্রসঙ্গে ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জিহাদ হাসান বলেন, ভোটার ও প্রার্থীর মধ্যে আস্থার একটি মাধ্যম হলো ইশতেহার। এবার বিভিন্ন প্যানেলের ইশতেহারে গেস্টরুম কালচার চিরতরে বন্ধ হওয়া, আবাসনসংকটের সমাধান, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতাসহ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে অনেক প্রতিশ্রুতিই এমন, যা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার ছাড়া সম্ভব নয়। ডাকসুর সীমিত ক্ষমতায় এগুলো সরাসরি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। সুতরাং এসব নির্বাচনি ইশতেহার অনেকেই বিশ্বাস করে না।

সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দীন বলেন, ছাত্রদলের ১০ দফা ইশতেহারকে শিক্ষার্থীবান্ধব, অগ্রগতিমূলক এবং টেকসই বলা যায়। এ ইশতেহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের নানা সংকট এবং শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন সমস্যাগুলো স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এটি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

এবার নির্বাচনে প্রত্যাশা কীÑএমন প্রশ্নের জবাবে সাফায়েত স্বচ্ছ বলেন, ছয় বছর পর ফ্যাসিবাদমুক্ত ডাকসু হচ্ছে। এমন উৎসবের আমেজ আগে কখনো ক্যাম্পাসে দেখিনি। এবার নিবার্চনে ডান, বাম, মধ্যপন্থা নেতাদের সক্রিয় নেতারা ভোট করছেন এবং ইশতেহারে নানা উন্নয়নমূলক প্রত্যাশার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা এত কিছু চাই না। শুধু অতীতে গেস্টরুমসহ যেসব খারাপ নজির ছিল তা আবার যেন ফিরে না। তাই সত্যিকারের শিক্ষার্থীবান্ধব সংস্কার চাই। এ ছাড়া আবাসন-সমস্যা, পরিবহন, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার বিষয়গুলো খুব বড় ইস্যু। আমরা শুধু কাগজে-কলমে নয়, সমস্যা সমাধানে বাস্তব কার্যকর দেখতে চাই। তাহলেই আমরা সন্তুষ্ট।

ইশতেহার বাস্তবায়নে সংশয় প্রকাশ করে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী প্রেরণা মহৎ সময়ের আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা সবসময়ই অবহেলিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনসংকট নিরসন, প্রশাসনিক, ডিপার্টমেন্টালসহ নানা সমস্যা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি। মেয়েদের অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু তাদের সাইবার বুলিংসহ নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। নির্বাচনি ইশতেহারে অনেক প্রতিশ্রুতি আছে, যা সীমিত সময়ের মধ্যে কখনোই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবুও যারা জয়ী হবেন তারা যেন রাজনৈতিক অস্থিরতা-বিভেদ দূর করে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের চর্চা নিশ্চিত করেন এমনটাই প্রত্যাশ করি।

ঢাবির মাস্টারদা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী শহীদুল্লাহ আল আরাবী বলেন, আমরা ইশতেহারে কী আছে না আছে সেটি খুব বড় বিষয় নয়। যারা অতীতের মতো গণরুম-গেস্টরুম কালচার চিরতরে করবে, ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া থেকে রাজনৈতিক যেসব অপসংস্কৃতি ছিল, সেগুলোর থেকে বেরিয়ে আসবে। পাস করলেও মিটিং-মিছিল ডাকবে না। যিনি শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিরসনে কাজ করবেন এবং পাশে থাকবেন, অবশ্যই এমন প্রার্থীদের পছন্দের তালিকায় রাখব।

ঢাবির প্রাচ্যকলা বিভাগের প্রগতি চাকমা জানান, ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী সর্বোচ্চ ছাত্র সংসদ, যার মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষা। সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অবশ্যই চাইব, আমাদের এ মৌলিক চাহিদাগুলো যেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পূরণ করেন।

বিজয় একাত্তর হলের রাইসুল ইসলাম। তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। এবার ডাকসুতে সদস্যপদে লড়ছেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে। জুলাই আন্দোলনের দিনগুলোতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন সহপাঠীদের সঙ্গে। তার স্বপ্ন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন অনুভব করে, এ ক্যাম্পাসও তাদের জন্য।

তিনি বলেন, আমরা যখন চলাফেরা করতে যাই তখন আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ক্যাম্পাসে সাইকেল, রিকশা, বাইকনিয়ন্ত্রিত ওয়েতে নিয়ে আসা। তাই যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন রয়েছে। তাদের নিয়ে কাজ করাই মুখ্য বিষয়। আর যেহেতু একটা প্যানেলের হয়ে লড়ছি, তাহলে আমরা একটা কাজ অবশ্যই করতে পারব।

একঝাঁক নারীপ্রার্থীও অংশ নিচ্ছেন ডাকসু নির্বাচনে। তাদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা স্বতন্ত্র প্যানেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনি প্রচারণায় নারী শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনের পাশাপাশি বিভিন্ন হলসহ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। আর যারা ভোটার তারাও যোগ্যপ্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি।

শিবির প্যানেলের ইশতেহার প্রসঙ্গে জিএসপ্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি, নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধ করে নিরাপদ ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তা ১২ দফা ইশতেহারে ৩৬টি সংস্কারের কথা বলেছি। এ ছাড়া ৬টি বিশেষ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি। বিজয়ী হলে গণরুম, গেস্টরুমের সংস্কৃতি দূরীভূতসহ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, আমরা ইতিপূর্বে সব দেখেছি, দলীয় প্যানেলে নির্বাচন করে বিজয়ী হলে দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন হয়। এ জন্য আমরা মনে করছি, দলীয় প্যানেলের চেয়ে ব্যক্তির যোগ্যতা বেশি। সুতরাং আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব এবং দলের ঊর্ধ্বে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আগেও কাজ করেছি এবং ভবিষ্যতেও করব।
শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে আধুনিক, আনন্দময়, বসবাসযোগ্য, ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল।

এ প্রসঙ্গে ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, গবেষণার মানোন্নয়ন, কারিকুলাম, অবকাঠামো ও পরীক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাগ্রহণ ও চলাচল সহজতর করাসহ আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই থাকবে। তবে প্রাধান্য পাবে শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণ।

তিনি বলেন, যথেষ্ট উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এখন পর্যন্ত যে কয়দিন প্রচারণা চালিয়েছি আমরা ভোটাররা অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত আমাদের নিয়ে। সম্ভবত নব্বইয়ের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code