প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

রুফটপ সোলারে ঝুঁকছে সরকার

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ০৭:৪৪ অপরাহ্ণ
রুফটপ সোলারে ঝুঁকছে সরকার

Manual8 Ad Code

 

Manual1 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে রুফটপ সোলারের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ শতাংম এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পূরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’র আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় ২০০০-৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের ৪৬ হাজার ৮৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিসের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৫৪ দশমিক ৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করতে আগ্রহী। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

Manual1 Ad Code

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের অর্থায়নে এর নিজস্ব ভবনের ছাদে (ভাড়া করা স্থাপনা ব্যতীত) সোলার প্যানেল স্থাপন করবে। তবে সরকার নিয়ন্ত্রিত যেসব প্রতিষ্ঠান/কোম্পানির নিজস্ব আয় আছে, তারা নিজ উদ্যোগে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে রুফটপ সোলার সিস্টেম স্থাপন করবে এবং নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন সব স্বাস্থ্য স্থাপনা এবং অন্য কোনো আগ্রহী সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাদে সম্মিলিত (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে একক) দরপত্রের মাধ্যমে রুফটপ সোলার স্থাপন করা যাবে। এ পদ্ধতিতে যেকোনো প্রতিষ্ঠান নিজ ছাদের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে।

প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উৎপাদিত ও ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সমন্বয় করে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা/কোম্পানি বিল দেবে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হবে। চারটি মডেলের মাধ্যমে এ উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে, এ বিষয়ক বিস্তারিত, জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি বাস্তবায়ন গাইডলাইনে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা গত ১৫ অক্টোবর পাঁচ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৪৬ হাজার ৮৫৪টি প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। ডিসেম্বরের আগেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।

Manual8 Ad Code

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে রুফটপ সোলার প্রকল্পে স্বল্পসুদে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে তারা এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন মডেলে অর্থায়ন করবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে মন্ত্রণালণায়গুলো থেকে প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে। এসব প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগ যাচাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান। রুফটপ সোলার সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু ছাদের ক্ষেত্রফল দিলেই একটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা যায়। কোন পণ্যের কী ধরনের মূল্য তাও সেখানে উল্লেখ থাকে। এর ফলে খুব সহজেই প্রাক্কলন প্রস্তুত করা যাচ্ছে এবং একই সঙ্গে পণ্যের যথাযথ মূল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। একজন গ্রাহক খুব সহজেই এ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ধারণা করতে পারবেন, প্রতি মাসে তার কত টাকা বিদ্যুৎ বিল কমবে এবং কত বছরের মধ্যে তার বিনিয়োগ লাভজনক হবে।

এ ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েবসাইটে সংযুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া মালামালের কারিগরি স্পেসিফিকেশন, উপযুক্ত ইপিসি ঠিকাদার নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তালিকা প্রণয়ন, মন্ত্রণালয়ের ফোকাল কর্মকর্তা নির্ধারণ, প্রতি জেলায় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং এদের মাধ্যমে নিজস্ব জনবল এবং ইলেকট্রিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কারিগরি প্রতিষ্ঠানে নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কারিগরি ও সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিসের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ (রুফটপ সোলার) স্থাপন প্রকল্প বাস্তিবায়িত হলে অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। উৎপাদিত বিদ্যুতের আর্থিক মূল্য ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৮ লাখ টন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমার পাশাপাশি অন্তত ৫৪ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অর্থ সাশ্রয় হবে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমবে ২৫ লাখ টন। এ ছাড়া কার্বন ক্রেডিটের মাধ্যমে ২০ মিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। পুরো কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রায় ১৫ হাজার কর্মসংস্থান বাড়বে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত এ সিস্টেমগুলো নেট মিটারিংয়ের আওতায় আসবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকের বিল সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ রুফটপ সোলার থেকে উৎপাদিত গ্রাহকের চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে চলে যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। আবার যখন প্রয়োজন হবে তখন গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নেবে গ্রাহক। প্রতি তিন মাসে বিদ্যুৎ গ্রহণ ও সরবরাহ সমন্বয় করে তার বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করবে। বিশেষত রুফটপ সোলার প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে তার নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ইনভার্টার, সোলার প্যানেল, ব্যাটারির ওপর ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ। এ পদক্ষেপ সোলার রুফটপ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ এবং খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

Manual3 Ad Code

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকায় যে পরিমাণ ভবনের ছাদ রয়েছে তার ১০ শতাংশ ব্যবহার হলেও প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) ৩০ শতাংশ জায়গা ব্যবহার করলে ৩৩৩ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে রুফটপ সোলার নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে বড় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রুফটপ সোলার স্থাপনে মানুষকে আগ্রহী করতে সরকারকে নানা ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি নেট মিটারিং সিস্টেমের অনুমোদন আরও সহজ করতে হবে। বিতরণ কোম্পানির কাছে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রিতে বেশি দর নির্ধারণ এবং বাড়তি সুবিধা দেওয়া দরকার। এ ছাড়া সোলার সিস্টেম স্থাপনে বিনিয়োগে সুবিধা দিতে সরকার একটা ‘ডেডিকেটেড ফান্ড’ রাখতে পারে।

ইডকলের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী র্কমর্কতা আলমগীর মোরশেদ বলেছেন, রুফটপ সোলার উৎস থেকে বাংলাদেশের ৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ইডকল ২০২৬ সাল নাগাদ ৩০০ মেগাওয়াট পিক রুফটপ সোলার প্রকল্পে অর্থায়ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code