প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

নির্বাচনি মাঠ প্রশাসন সাজাতে চলছে নিবিড় যাচাই-বাছাই

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ণ
নির্বাচনি মাঠ প্রশাসন সাজাতে চলছে নিবিড় যাচাই-বাছাই

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual8 Ad Code

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েকজন সচিবসহ মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করা হবে। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনের শীর্ষ ও মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের আমলনামা যাচাই-বাছাই শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দলীয় পরিচয়ে প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব এবং আচরণ চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পদায়ন, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগ।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের সভাকক্ষে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

Manual4 Ad Code

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রশাসনে বড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা ও নির্বাচন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনে রদবদল হবে বলে জানান তিনি। বিশেষত, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব কর্মকর্তা সরাসরি দায়িত্ব পালন করবেন এবং যেসব কর্মকর্তা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখেন তাদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব, সচিব থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনের এসি ল্যান্ড পর্যন্ত কর্মকর্তাদের দপ্তর বদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর কর্মকর্তা জানান, সংসদ নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও বিতর্কিত মুক্ত করতে এখন থেকেই আন্তরিক রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরাসরি দিকনির্দেশনা ও হস্তক্ষেপে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ থেকে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত ব্যাপক রদবদল হতে যাচ্ছে। প্রশাসনে বিতর্কিত ও দলীয় বিবেচনায় আলোচনায় রয়েছেন এমন কর্মকর্তাদের নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। যাতে এসব কর্মকর্তা কোনোভাবেই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার বা ভোট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে না পারেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দলীয় পরিচয় রয়েছে এবং দায়িত্বে থেকে বিতর্কিত হয়েছেন এমন কর্মকর্তাদের তালিকা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি।

Manual3 Ad Code

সূত্রগুলো আরও জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন তারা যাতে কোনো দলের পক্ষে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না পারেন বা তেমন সুযোগ না পান এ জন্য বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তাদের তৈরি তালিকা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেছে।

বিএনপির আশঙ্কা, আসন্ন নির্বাচনে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ পাওয়া জামায়াতের আদর্শিক কর্মকর্তারা দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ নিতে পারেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী সচিবালয়সহ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তাদের সমর্থিত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে সফল হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিপরীতে জামায়াতে ইসলামীর আশঙ্কা, বিএনপি-সমর্থিত প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেকোনোভাবেই হোক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে বিএনপিকে জয়ী হতে সহায়তা করবেন।

Manual5 Ad Code

আবার এনসিপি ধারণা করছে, বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত কর্মকর্তারা তাদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন। তা ছাড়া এনসিপির বড় আশঙ্কা- এখনো প্রশাসনের সর্বস্তরে যেসব আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা এনসিপির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবিতে সাহায্য করবেন। এমন ধারণা থেকেই দেশের বড় দুই দলের পাশাপাশি নবগঠিত এনসিপিও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের তালিকা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেছে।

জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ধর্ম সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবসহ আরও কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিষয়ে বিএনপি তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। একই সঙ্গে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত জামায়াত-সমর্থিত হিসেবে আলোচনায় থাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং মহানগর ও উপজেলায় নিয়োগ পাওয়া সহকারী কমিশনারদের (এসি ল্যান্ড) নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে দলটি।

এদিকে গত ২১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, ভোটে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবেন তেমন কর্মকর্তাদেরই বাছাই করে নিয়োগ দেওয়া হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি তার তত্ত্বাবধানে হবে। জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের জন্য একাধিক ‘ফিট লিস্ট’ থেকে যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করে ভোটের আগে যথাস্থানে নিয়োগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি আসন্ন ভোট শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করতে যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই করা হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হককে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার এমন নির্দেশনার পরই ব্যস্ত হয়ে পড়েন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে কর্মকর্তাদের নামের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বৈঠক শুরু হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন আরেক কর্মকর্তা জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে সারা দেশের প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনে দলীয় পরিচয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নাম।

এদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে গুঞ্জন রয়েছে, সরাসরি আইনগত সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ না থাকলেও প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং সারা দেশের মাঠ প্রশাসনে অদৃশ্য প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নিতে পারে জামায়াতে ইসলামী। তা ছাড়া স্বরাষ্ট্র সচিবের মাধ্যমে নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিজেদের মতো করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিজেদের আদর্শিক কর্মকর্তা নিয়োগে সাফল্য পাওয়ায় জামায়াত ভোটের আগে সারা দেশের উপাসনালয়গুলো ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে নিজেদের ভোটব্যাংক বৃদ্ধি করতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচন কেন্দ্রে সরাসরি দায়িত্ব পালনের জন্য যেসব শিক্ষককে পোলিং এজেন্ট, প্রিসাইডিং অফিসার বা এ সম্পর্কিত অন্য দায়িত্বের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো বিশেষ দলের পক্ষে ভোটকে প্রভাবিত করতে জামায়াত সমর্থক হিসেবে আলোচিত শিক্ষা সচিব প্রভাব বিস্তার করতে পারেন বলে সচিবালয়ে গুঞ্জন রয়েছে।

তা ছাড়া অনেক আগেই ডিসি পদে দায়িত্ব পালনকারী যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে অন্য ব্যাচের উপসচিব পদের কর্মকর্তাদের পদায়ন করার কথা থাকলেও এখনো তা করতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ডিসি পদে ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা রয়েছেন ২০ জন, ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা রয়েছেন ২১ জন ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা রয়েছেন ২৩ জন।

যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুতই কর্মকর্তাদের পদায়ন ও প্রত্যাহার-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code