প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলায় জোর

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ
নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলায় জোর

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনকে নির্বিঘ্ন করতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেকোনোভাবে নির্বাচনি পরিবেশ শান্ত-স্বাভাবিক ও উৎসবমুখর রাখার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রার্থীদের প্রটোকল, সমাবেশের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়তি নজরদারি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

Manual2 Ad Code

 

বিশেষ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরের দিনই রাজধানীর পল্টন এলাকায় দিনেদুপুরে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি আততীয়দের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর এমন পদক্ষেপের কথা জানাচ্ছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে রবিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে অধিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ জুলাইযোদ্ধাদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে গতকাল জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

 

এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের সময় সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার। এ বৈঠকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামিনে বাইরে থাকা সন্ত্রাসীদের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া নির্বাচন ঘিরে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কাও করেছে ইসি।

 

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বিরাট একটি পরিবর্তনের পর এবারের জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হতে যাচ্ছে। এটাকে খুব সাধারণভাবে দেখলে চলবে না। অন্য সময়ের চেয়ে এবারের নির্বাচনের পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে থাকবে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য বাহিনীগুলোকে এই সময়ে আরও বেশি তৎপর থাকতে হবে।’

 

Manual5 Ad Code

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনৈতিক নেতা এবং আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী, তাদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা ও সাইবার স্পেসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হবে।

 

এ ছাড়া গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ‘গান পয়েন্টে’ থাকা জুলাইযোদ্ধাদের নিরাপত্তায় ডিএমপি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে– এমন প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে সেখানে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাইযোদ্ধা শুধু হাদি একা নন, হাজারও-লাখ জুলাইযোদ্ধা রয়েছেন। এই লাখো জুলাইযোদ্ধার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। তবে সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের নিরাপদ করতে হবে। রাষ্ট্রকে ও রাজধানীকে নিরাপদ করতে আমরা কাজ করছি। যাদের সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি আছে, তাদের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি। খুব কাছাকাছি সময়ে তাদের জন্য কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, সে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যাদের বেশি ঝুঁকি আছে- মনে করছি, তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’

 

এ প্রসঙ্গে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার তা অবশ্যই করতে হবে। বিশেষ করে প্রার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা জনসংযোগ, সমাবেশসহ নানা ক্ষেত্রে ভীতি বা ঝুঁকি থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা নিরাপত্তা চান বা নিতে চান তাদের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু সবার ঝুঁকি বা সব আসনের পরিস্থিতি এক রকম নয়। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্য, বাস্তব প্রেক্ষাপটসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রধানত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সফলতার সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, পেশাদার অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে।’

 

Manual1 Ad Code

 

সন্ত্রাসীদের চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কায় ইসি

 

গতকাল বিকেলে নির্বাচন ভবনে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হয় নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকেছিলাম। সেখানে আমরা তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। সাম্প্রতিক সময়ে শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা আমাদের সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। সেটা নিয়ে বিশাল আলোচনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা আর বিস্তারিত বলছি না। অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় সম্পর্কে আমরা অবহিত হয়েছি, যেগুলোর সঙ্গে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের স্বার্থ জড়িত।’

 

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘হাদির বিষয়ে এখানে কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে। সন্দেহভাজন হিসেবে যাকে শনাক্ত করা হচ্ছে, তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই সখ্য গড়ে তুলে (হাদির সঙ্গে) অত্যন্ত কাছে গিয়েছেন। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, তার একটা অতীত আছে। পেছনে তার একটা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে এবং অপরাধমূলক রেকর্ড রয়েছে। এ ছাড়া যেসব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে জামিন পেয়ে গেছেন। তারা বাইরে অবস্থান করছেন, এ নিয়ে করণীয় বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। আর তৃতীয় বিষয়টি হলো, এই চোরাগোপ্তা হামলা (হাদি গুলিবিদ্ধ) কি কোনো বড় পরিকল্পনার অংশ, না কি এটি কোনো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা– সেটা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’

 

সানাউল্লাহ বলেন, বৈঠকে বলা হয়েছে– এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে বা এগুলো যেন কঠোর হাতে দমন করা হয়। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তারা যেন ধরা পড়ে। পাশাপাশি একটি বার্তা সব বাহিনীর পক্ষ থেকে সমস্বরে এসেছে–যারা এই নির্বাচন বানচাল করার, প্রতিহত করার বা ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো চেষ্টা করবে, তারা ব্যর্থ হবে। যেখানে যতটুকু দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন, সব বাহিনী ততটুকু দৃঢ় হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই।

 

সানাউল্লাহ আরও বলেন, যেসব সন্ত্রাসী এখন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের গ্রেপ্তার করা এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা, অবৈধ অস্ত্রসহ হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ দ্রুত জব্দ বা উদ্ধারের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। মাঠপর্যায়ে চোরাগোপ্তা হামলার যে ঘটনাগুলো ইতোমধ্যে ঘটেছে, সেগুলোর প্রকৃতি নিরূপণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এগুলো প্রতিহত করার জন্য যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ইসি সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘যারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, আমাদের বন্ধু সেজে, তাদের ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে। হাদির ঘটনাটি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে সহযোগী সেজেই আমাদের ভেতরে নাশকতাকারী, অনুপ্রবেশকারীরা থাকতে পারে। এদের হাতে যদি ঘরের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটে,পরে হয়তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে যাবে। সবারই সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।’

 

 

Manual7 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code