প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন!

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ণ
জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন!

Manual1 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হতে পারে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির ধারা বন্ধের পক্ষে জনমত বাড়ছে। বিপরীতে কার্যকর ছাত্র সংসদের দাবি জানাচ্ছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সংশ্লিষ্টরা এই ইস্যুতে নানা পরিকল্পনা করছেন বলে জানা যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রুটিন ওয়ার্ক করছে। আগামী বছরের প্রথমার্ধে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে পারে। নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্র সংসদের ভূমিকা থাকায় বিষয়টিকে ক্যালেন্ডার ইভেন্টে (বছরের নির্দিষ্ট দিনে নির্বাচন) রূপ দেওয়ার কথা বলছেন তারা। তবে স্বাধীনতা-পরবর্তী নির্বাচিত সরকারগুলোর অনীহায় এই নির্বাচন অনিয়মিত বলে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে।

Manual6 Ad Code

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনের শীর্ষ পদে পরিবর্তন এসেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক উপাচার্যসহ অন্যরা পদত্যাগ করেছেন। নতুন দায়িত্ব পেয়ে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের ভাবনা থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন উপাচার্যরা। ছাত্রদের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়া দুই উপদেষ্টাও জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে করা কমিটির মতামতের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক সময়ে একটা কমিটি করেছি। বিশেষজ্ঞরা মতামত দেবেন। ছাত্ররাজনীতি, ছাত্র সংসদ, ডাকসু এসব বিষয় নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে তারা বসবেন। ছাত্ররাজনীতির ধরন, গঠন, প্রকৃতি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। আলাপ-আলোচনার পর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আমাদের কাছে মতামত দেবেন। সেই মতামতের ভিত্তিতে আমরা এগোব।’

অন্যদিকে যাদের নির্বাচন দেওয়ার আইনি কাঠামো নেই, তারাও এ বিষয়ে বিধান তৈরি করার চেষ্টায় রয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে আইন নেই। তাই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। একটা কমিটি করেছি। ভালো অগ্রগতি আছে। কমিটির সদস্যরা মতামত নিচ্ছেন, পর্যালোচনা করছেন। তবে যাদের আইন আছে তাদের এখনো শুরু হয়নি। আমাদের যতদ্রুত সম্ভব (নির্বাচন) দেওয়ার আগ্রহ আছে।’

 

Manual8 Ad Code

২৯ বছর সচল হওয়া ডাকসু আবার অচল

২০১৯ সালে দীর্ঘ ২৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নির্বাচন দিয়ে রেকর্ড করলেও ক্যালেন্ডার ইভেন্ট (নির্বাচনকে) হিসেবে রূপ দিতে পারেননি। ফলে আবারও পুরোনো ধারায় ফিরে যায়। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগও সংকুচিত হয়ে যায়। জুলাই বিপ্লবের পর দায়িত্ব নেওয়া নতুন প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতি ব্যাচ থেকে হল প্রতিনিধি ঠিক করেছে। তারা শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে। তবে এ নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো প্রশ্নও তুলেছে। তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। তাই ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে প্রশাসনও। সম্প্রতি রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সরকারের অনীহায় অনিয়মিত নির্বাচন

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনেকটা নিয়মিত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই ধারা ছিল না। গত ৫০ বছরের ইতিহাসে মাত্র পাঁচ-ছয়বার ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। নির্বাচন না হওয়ার পেছনে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের পরাজয়কে চিহ্নিত করা হয় অধিকাংশ সময়। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনেও সহসভাপতি (ভিপি) পদে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক নুরের কাছে পরাজিত হন। শোভনের সমর্থকরা ফলাফল বাতিলের দাবিতে উপাচার্যের বাংলো ঘিরে কর্মসূচি পালন করেন।

Manual5 Ad Code

ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির আহ্বায়ক এম এ আলীম সরকার বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল ইউনিয়নগুলোর নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচন ভালোভাবেই হয়েছিল। ডাকসুর এবং হল ইউনিয়নগুলোর ফলাফল গণনার সময় দেখা গেল, ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ছাত্রলীগ ভোট খুব কম পেয়েছে। আর জাসদ অনুসারী ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়ন অনেক বেশি ভোট পেয়েছে। হলগুলোতে এবং ডাকসুতে নির্বাচনের ফল যখন ঘোষণা করা হবে তার কয়েক মিনিট আগে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগ ট্রাক নিয়ে এসে ডাকসুর এবং সব হল ইউনিয়নের ব্যালট বাক্স, ভোটপত্র ও ফলাফলের কাগজপত্র ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়। নির্বাচন বানচাল হয়ে যায়।’

Manual2 Ad Code

২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্বাচনের দাবি ওঠে। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। একই অবস্থা ঢাকা কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজসহ ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলোতেও। সরকার থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে এবার দায়িত্বে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের পরিকল্পনায় ছাত্র সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচন দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানা গেছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code