প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

টিউলিপের পতনের কারণ আওয়ামী লীগ?

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ১২:১৬ অপরাহ্ণ
টিউলিপের পতনের কারণ আওয়ামী লীগ?

Manual1 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠের থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগের মুখে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাকে নিয়ে সমালোচনা চলছে। এখন অনেকেই বলছেন আওয়ামী লীগের কারণেই বিলেতে ডুবেছেন টিউলিপ।

অথচ বাংলাদেশে শেখ পরিবারে টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে গর্ব ও গৌরবের শেষ ছিল না। গত ৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে টিউলিপ সিদ্দিক ছিলেন বড় বিজ্ঞাপন।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে টিউলিপের কী সম্পর্ক:-
টিউলিপ সিদ্দিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার আসামি শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে পালিয়ে রয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির একাধিক মামলা এখন তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

যে কারণে বিলেতে ফাঁসলেন টিউলিপ?
টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রী হিসেবে যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে ছিলেন। শেখ হাসিনার পতনের পর তার পরিবারের প্রায় সব সদস্যই এখন দুর্নীতির তদন্তজালে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট উপহার নেন টিউলিপ। লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড এলাকায় একটি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা ফ্ল্যাটে কয়েক বছর বসবাস করেন টিউলিপ। ওই সময় নিজের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ওই ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

Manual1 Ad Code

গত আগস্টে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তাতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে টিউলিপেরও নাম আসে। গত মাসে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

আদালতে দাখিল অভিযোগের নথির বরাতে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাড়তি ব্যয় দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। রাশিয়ার সঙ্গে সেই চুক্তি করতে টিউলিপ সিদ্দিক সহযোগিতা করেন। চুক্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যয় ১০০ কোটি ডলার বেশি দেখানো হয়। দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যের দ্য সানডে টাইমসকে বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লন্ডনের সম্পত্তিতে টিউলিপের বসবাস করার খবর আসার পর তার (টিউলিপ) ক্ষমা চাওয়া উচিত। টিউলিপের ব্যবহার করা সম্পত্তিগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং ‘ডাহা ডাকাতির’ মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকলে তা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া উচিত।

Manual1 Ad Code

এরই মধ্যে গত সোমবার দুদক জানায়, তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপের মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। তিন মামলাতেই টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়েছে।

বিলেতে টিউলিপের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির সদস্য হন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ২০১৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড আসন থেকে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হন। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ওই আসনে চার বার প্রার্থী হয়েছেন টিউলিপ, প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাকে যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি ও নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার।

লন্ডনের ফ্ল্যাটের উৎস নিয়ে যা বলেছেন টিউলিপ
লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় যে ফ্ল্যাটের মালিকানার কারণে তোপের মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের এমপি এবং সাবেক ট্রেজারি ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক, সেটির উৎস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না তিনি।

Manual6 Ad Code

কিংস ক্রস এলাকার ফ্ল্যাট ইস্যুতে টিউলিপ কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন কী না— তা তদন্তের জন্য যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিত্বের মানদণ্ডবিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাসকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। সেই তদন্ত শেষে তার ফলাফল জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন ম্যাগনাস।

চিঠিতে ম্যাগনাস বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন যে কিংস ক্রস এলাকায় তার ফ্ল্যাটটি কোন উৎস থেকে এসেছে, তা জানতেন না তিনি। এতদিন টিউলিপ সিদ্দিকের ধারণা ছিল, তার বাবা-মা পূর্ববর্তী মালিকের কাছ থেকে ফ্ল্যাটি ক্রয় করে তাকে দিয়েছেন। তিনি আরও স্বীকার করেছেন যে এই ২০২২ সালে সম্পদের যে বিবরণী দিয়েছিলেন তিনি, সেখানে ফ্ল্যাটটির মালিকানা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছিল এবং এজন্যও দায়ী সেটির উৎস সম্পর্কিত অজ্ঞতা।

যে পরিস্থিতিতে মন্ত্রিত্ব ছাড়েন টিউলিপ
লন্ডনে হাসিনা ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে উপহার নেওয়া ছাড়াও; সাবেক এক বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি টিকিট নিয়েছিলেন টিউলিপ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য আরও আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এসবের মধ্যে দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছিল। তারা বলছিল, টিউলিপের ওপর ব্রিটেনের দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারই নাম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। এতে তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনের নৈতিকতা হারিয়েছেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত ১৪ জানুয়ারি টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code