প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতকে নিয়ে প্রতিবেশীদের কেন এত সন্দেহ

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ১২:২৪ অপরাহ্ণ
ভারতকে নিয়ে প্রতিবেশীদের কেন এত সন্দেহ

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশেই ভারতবিরোধী মনোভাবের মূল কারণ হলো, দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় দেশ হিসেবে ভারতের ঐতিহাসিক আধিপত্য। কারণ, এ বিষয়টি ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে একটি অসম সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং সব ছোট দেশই এ ধরনের আধিপত্যকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে। তবে এই সমস্যার সমাধান হলো ‘বিচক্ষণ কূটনীতি।’

ভারতের রাজস্থানের জয়পুরে জয়পুর লিটারেরি ফেস্টিভ্যালে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ : এই দিকে ওই দিকে’ শীর্ষক এক প্যানেল ডিসকাশনে তিনি এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন লেখিকা ও গবেষক শ্রীরাধা দত্ত এবং লেখক সুদীপ চক্রবর্তী। তারা আগস্টে ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন।

হরিয়ানার ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘ভারত ইস্যুতে বাংলাদেশের সন্দেহের মূল কারণ হলো, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠতা।’ হাসিনা গণবিক্ষোভের মুখে দিল্লিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তবে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করতে বাধ্য। তাই যত দ্রুত তা শুরু করা যায়, ততই মঙ্গল।’

Manual1 Ad Code

আলোচনায় বক্তারা উল্লেখ করেন, গত বছর বাংলাদেশে ‘আগস্ট বিপ্লবের’ পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে কিছুটা ‘মোহভঙ্গ’ হয়েছে বাংলাদেশিদের। তারা একদিকে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছেন। অন্যদিকে বড় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। একই সময়ে হাসিনার আমলে নিষিদ্ধ (পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়) জামায়াতে ইসলামী আবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

Manual2 Ad Code

জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ও দলটির বিষয়ে ভারতের ঐতিহাসিক ন্যারেটিভ বা বয়ানের সূত্র ধরে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘জামায়াত বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় সাংগঠনিক কাঠামো বজায় রাখলেও আমার মনে হয় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো তারা জাতীয় নির্বাচনে ১২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে।’

Manual5 Ad Code

সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তিনি বাংলাদেশে রক্ষণশীলতার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে লক্ষ করেছেন। তবে তিনি এটিও স্বীকার করেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ বিশ্বব্যাপী রক্ষণশীলতা বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘রক্ষণশীলতা বাড়ছে। সুতরাং, আমাদের শুরুতেই এটিকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে, তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে যে, বাংলাদেশে রক্ষণশীলতা নিয়ে আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক বা কূটনৈতিকভাবে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত কি না।’

হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রসঙ্গে সুদীপ বলেন, ‘এই আন্দোলনে জামায়াতের ভূমিকা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করা দরকার।’ তিনি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাসিনা সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং প্রশাসনে দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করেন।

সুদীপ চক্রবর্তী জোর দিয়ে বলেন, ভারত যেন বাংলাদেশকে শুধু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট থেকে না দেখে। কারণ, বাংলাদেশ এরই মধ্যে সেই অধ্যায় পেরিয়ে এসেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারতের কিছু ভুল পদক্ষেপ আছে। যেমন তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে চীন বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেওয়ার আগে ভারত প্রস্তাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

আলোচনায় পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য দেশটির বিভক্ত রাজনৈতিক কাঠামোকে দায়ী করেন। তার মতে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল এবং এসব প্রতিষ্ঠানের শিকড় গভীরে প্রোথিত হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে বাস্তবতার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে, যা হাসিনার সরকারের পতনের অন্যতম কারণ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশটির অর্থনীতির পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

Manual2 Ad Code

ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে পিনাক রঞ্জন বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশে যা কিছু ঘটেছে, তাতে ভারত সাধারণভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকার পরও ঢাকার মধ্যে যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কৃতজ্ঞতার স্থায়িত্ব স্বল্পমেয়াদি।’ তাই তিনি ‘বিচক্ষণ কূটনীতি’ অনুসরণের পক্ষে মত দেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক এই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ভূগোলের দিকে তাকান, আমরা একপ্রকার সংযুক্ত। তাদের আমাদের প্রয়োজন, আমাদেরও তাদের প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি জনগণের ভোগান্তি চায় না এ বার্তা দিতে ভারত ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া চলছে এবং ‘সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ চাল ও গম পাঠানো হয়েছে।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code