প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সিলেট-৪ আসন: আলোচনায় বিএনপির ৭, জামায়াতের ১ নেতা

editor
প্রকাশিত মার্চ ১০, ২০২৫, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ
সিলেট-৪ আসন: আলোচনায় বিএনপির ৭, জামায়াতের ১ নেতা

Manual3 Ad Code

গোয়াইনঘাট সংবাদদাতা:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হয়নি। কবে নির্বাচন হবে সেটিও চূড়ান্ত নয়। তবুও নির্বাচনের হাওয়া বইছে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে। বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিএনপির ৭ মনোনয়নপ্রত্যাশীর বিপরীতে মাঠে রয়েছেন জামায়াতের একক প্রার্থী।

বিএনপিতে দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘিরে তৃণমূলে বিভেদ রয়েছে। ফলে দলীয় কোন্দল বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মাঠে নেই। ৫ আগস্টের পর মাঠে সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের।

জানা যায়, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন নিয়ে সিলেট-৪ আসন গঠিত। দেশের অন্যতম স্থলবন্দর তামাবিল এই আসনে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সম্পদের আধার দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দি ও শ্রীপুর এই আসনে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে দেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। তাই সব রাজনৈতিক দলের কাছেই আসনটির গুরুত্ব বেশি।

বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ ৭ বার, বিএনপি ৩ বার, স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টি একবার করে বিজয়ী হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বদলে গেছে রাজনীতির মাঠের হালচাল। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা ভোটের মাঠে নেই। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো।

ভোটাররা মনে করছেন আগামী নির্বাচনে দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এমন সমীকরণ সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে দল দুটি। এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ৭ নেতা মাঠে রয়েছেন।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি প্রয়াত দিলদার হোসেন সেলিমের সহধর্মিণী এডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন আহমদ ও বিএনপি নেতা আব্দুল হক।

প্রত্যেকেই দলের বার্তা ও নিজের ইশতেহার, প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় যাচ্ছেন। সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সাংগঠনিক নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির চ্যালেঞ্জ দলীয় কোন্দল। বিএনপির রাজনীতিতে কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর।

Manual4 Ad Code

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হেলাল উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর থেকে সিলেট-৪ আসনে স্থানীয় নেতৃত্ব শূণ্য। যার কারণে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। এ আসনের তৃনমূলের দাবির প্রেক্ষিতে আমি দেশে ও প্রবাসে থেকে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাড়িয়েছি। আন্দোলন সংগ্রামেও সক্রিয় ছিলাম। দেশে অবস্থান করে তিন উপজেলায় বন্যা, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি ও শীতার্ত মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছি। দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করছি।’

বিএনপি নেতা আব্দুল হক বলেন, ‘দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে সিলেট-৪ আসনে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছি। আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

Manual2 Ad Code

ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে কোনো বিভেদ থাকবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।’

Manual1 Ad Code

আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একাধিক বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। পাশাপাশি দলের নির্দেশনা মেনে আরো দুটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে ওই দুটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আমি চারবারই উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতাম। এছাড়া জুলুম নির্যাতন ভোগ করে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এলাকায় আরও সক্রিয় হয়েছি। কোথাও যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে আছি। পুজোর সময় প্রত্যেক মণ্ডপে গিয়েছি, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাহস দিয়েছি। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখলবাজির প্রশ্রয় দিইনি। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। তবে আদর্শিক বিরোধ নেই। বিএনপি যাকে মনোনয়ন দেবে, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবে।’

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক একাধিক বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন।

Manual6 Ad Code

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনের সাড়ে ১৫ বছরে আমরা প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারিনি। কিন্তু পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অগোচরে জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। জামায়াতের প্রতি সমর্থনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি অতীতের চেয়ে মানুষের ভালোবাসা বেড়েছে। মানুষ চায়, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। এজন্য জামায়াতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।’

এদিকে, সিলেট-৪ আসনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আরিফুল হক দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলে পিছিয়ে পড়া তিন উপজেলার চিত্র পাল্টে দিতে পারবেন এমনটা মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। সিলেটের রাজনীতিতে ‘ম্যাজিক ম্যান’ হিসেবে পরিচিত আরিফুল হক চৌধুরী শেষমেশ কি খেলা দেখান সেদিকেও তাকিয়ে আছেন দলের নেতাকর্মীরা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code