প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজার: ‘বাজার এখন হস্তা হইছে’

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০১:১৭ অপরাহ্ণ
বিয়ানীবাজার: ‘বাজার এখন হস্তা হইছে’

Manual3 Ad Code

 

স্টাফ রিপোর্টার;

 

দিনমজুর স্বপন মিয়া। স্ত্রী ছাড়াও চার ছেলে-মেয়ের ভরণ-পোষণের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। প্রতিদিন যে টাকা রোজগার করেন, তা দিয়ে কোনোরকমে দু’বেলার খাবার জোটে। যদি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়, তাহলে চিন্তার ভাঁজ পড়ে স্বপন মিয়ার চোখে মুখে।

 

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কলেজ রোড মোড়ে ব্যাগ হাতে সবজি কিনছিলেন স্বপন মিয়া। এসময় কথা হয় তার সঙ্গে।

 

তিনি বলেন, ‘কয়দিন (কয়েকদিন) আগেও দাম বাড়াইল আছিল। এখন হস্তা (সস্তা) হইছে। এরলাগি (এজন্য) বেশি করি কিনছি। হিসাবে খরচ করি সংসার চালানো লাগে। দাম বাড়লে আমরার মতো গরিব মানুষের খুব কষ্ট করি চলা লাগে। দাম সবসময় কম থাক ওখানউ চাই। ’

 

বেসরকারি চাকরি করেন আমিনুল ইসলাম। বিভিন্ন নিত্যপণ্য কেনা শেষে বাজার থেকে বের হচ্ছিলেন তিনি। এসময় আমিনুল বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে নিত্যপণ্য কিছু কিছু করে কমছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে সবজির দাম। যে সবজি কয়েকদিন আগে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই সবজির দাম এখন ২০ টাকা। সারা বছর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজন প্রশান্তি পাবে।

 

Manual1 Ad Code

বাজার ঘুরে জানা যায়, সম্প্রতি কাঁচামরিচের দামে ক্রেতারা অসন্তুষ্ট থাকলেও এখন স্বস্তি ফিরেছে। মাত্র ২৫ টাকা কেজিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাঁধাকপি ২০ টাকা, ফুলকপি ১৫, পেঁয়াজ পাতা ২০, টমেটো ২০, বেগুন ২০, শিম ২০, করলা ৪০, মটরশুঁটি ৭০, গাঁজর ৪০, মুলা ১৫, বরবটি ৫০, পুলতা ৪০ ও শসা ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। লেবু ১৫ টাকা হালি ও লাউ ৪০ টাকা পিস হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বড় আলু ২২ টাকা ও দেশি ছোট আলু ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

 

বিয়ানীবাজারে কমেছে মাছের দামও। মাছভেদে কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমেছে। প্রতি কেজি সিলভার কার্প ১৫০-১৭০ টাকা, মৃগেল ১৯০-২০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৬০, টেংরা ৩০০, রুই ২২০-২৫০, কাতল ২৭০-২৯০, বাউশ ২৮০, মাঝারি পাঙাশ ১১০ টাকা, শোল ৪৫০-৪৮০ টাকা, রাজপুঁটি ১৬০ টাকা, দেশি পুঁটি ১৯০ টাকা, চান্দা ২৭০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা, টাকি ৩৬০, শিং ২৯০ টাকা ও মলা ৩৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

অন্য নিত্যপণ্যের দাম ২ টাকা-৮ টাকা পর্যন্ত কমেছে। প্রতি কেজি বুটের ডাল ১২২ টাকা, দেশি মসুর ১২৫, মোটা মসুর ১০৮, মুগডাল ১৬৫, ভাঙা মাসকলাই ৮৫, মাসকলাই ১৩০, ছোলা বুট ১১৫, খেসারি ১১৮, চিনি ১২০, খোলা আটা ৪০ টাকা, প্যাকেট ৫০, মটর ৬৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫০, দেশি রসুন ২৩৫, চায়না রসুন ২০০ ও ভারতীয় আদা ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অপরিবর্তিত অবস্থায় বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৫, খোলা সয়াবিন তেল ১৮৪ ও পাম ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা ও দেশি মুরগির দাম কমেছে ৩০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অপরিবর্তিত অবস্থায় সোনালি ৩২০ টাকা, লাল কক ৩২০ টাকা, সাদা কক ৩০০ ও লেয়ার ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

 

এছাড়া প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম ৪৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৮০ টাকা, কোয়েল পাখির ডিম ১৫ টাকা ও হাঁসের ডিম ৭০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।

 

কথা হয় সবজি বিক্রেতা শাহজাহান আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোরে ট্রাক ভর্তি করে প্রচুর সবজি বাজারে আসছে। পাইকাররা কম দামে সবজি কিনতে পারছে। তাই খুচরা বিক্রেতারা পাইকারদের কাছ থেকে কম দামে কিনতে পেরে ক্রেতাদের কাছে ন্যায্যদামে বিক্রি করতে পারছেন। ফলে দামে স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা।

 

মাছ বিক্রেতা মোরশেদ মিয়া বলেন, মাছের সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে। তাই দাম কিছুটা কমেছে। তবে আড়তদাররা সিন্ডিকেট করলে দাম বেড়ে যেতে পারে। তখন খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়াতে বাধ্য হবে।

Manual6 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হেকিম বলেন, সবজির ঘাটতি না থাকায় দাম কমেছে। দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

Manual2 Ad Code

এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, যে কোনো অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তাই বাজারগুলোতে অভিযান চলমান রয়েছে। অহেতুক দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটার চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code