প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজারের এক ভাষাসংগ্রামীর স্মৃতিমন্থন

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজারের এক ভাষাসংগ্রামীর স্মৃতিমন্থন

Manual4 Ad Code

 

স্টাফ রিপোর্টার:

 

বাঙালি হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র জাতি, যারা নিজের ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। ১৯৫২’র সেই উত্তাল ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বাংলাদেশে। ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল সিলেট। এই আন্দালনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে বিয়ানীবাজার উপজেলায়। এখানকার এক ভাষাসংগ্রামী হচ্ছেন অধ্যক্ষ মাসউদ খান। সেই উত্তাল ভাষা আন্দোলন কাছ থেকে দেখেছেন তিনি, আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন সক্রিয়ভাবে। আন্দোলনের স্মৃতিমন্থন করেন বিয়ানীবাজারের গর্বিত এই ভাষাসংগ্রামী।

 

বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের কাকরদিয়া গ্রামে জন্ম মাসউদ খানের। ১৯৪৪ সালে সিলেটে শহরের মানিকপীর রোডস্থ বাসায় চলে আসেন তিনি। কাজী জালালউদ্দিন বালক মক্তব, সিলেট হাই মাদরাসা, এমসি কলেজ পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করেন তিনি। একইসাথে ঢাকার সিটি ল’ কলেজ থেকে এলএলবিও সম্পন্ন করেন। সিলেট মদন মোহন কলেজে যুক্তিবিদ্যা বিভাগের লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু। পাশাপাশি সিলেট বারেও প্র্যাকটিস শুরু করেন। একপর্যায়ে মদন মোহন কলেজের প্রিন্সিপালও হন তিনি।

Manual1 Ad Code

 

এ ছাড়া মাওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষও ছিলেন তিনি। খোদ ভাসানীই তাকে এ পদে নিয়োগ করেন। ৩১ বছর বয়সেই তিনি শেওলা ইউপির চেয়ারম্যান এবং সিলেট জেলা কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। অধ্যক্ষ মাসউদ ছাত্র ইউনিয়ন, তমদ্দুন মজলিস, ছাত্রশক্তি, প্রগতিশীল ছাত্রদল, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি খেলাফত মজলিসের রাজনীতিতে জড়িত।

 

১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনে অধ্যক্ষ মাসউদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধেও ভূমিকা রাখেন মাসউদ খান।

 

Manual5 Ad Code

ভাষা আন্দোলনে জড়িত হওয়ার বিষয়ে অধ্যক্ষ মাসউদ খান বলেন, “পারিবারিকভাবে আমি রাজনীতি সচেতন ছিলাম। আমার বড় ভাই সা’দত খান ছিলেন রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত। ১৯৫১তে ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সা’দত খান। আমাদের বাসায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের যাতায়াত ছিল। বাসায় বৈঠকে সার্বজনীন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার আলোচনা হতো। আমিও এ ব্যাপারে উৎসাহী ছিলাম। ছাত্র ইউনিয়নে থাকাকালেই ভাষা আন্দোলন শুরু হলো।

 

সিলেটে এ ধারার রাজনৈতিক নেতৃবর্গ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তরুণ কর্মী হিসেবে আমিও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ি।”

 

বলে চলেন অধ্যক্ষ মাসউদ, ‘আন্দোলন চলাকালে আমরা প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় ধর্মঘট পালন করে মিছিল, শোভাযাত্রা নিয়ে গোবিন্ধচরণ পার্কে গিয়ে সমাবেশ করতাম। প্রতিদিন বিকেলে পার্কে জনসভায় অংশ নিতাম। সিলেটের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট মনিটরিংয়ে দায়িত্ব ছিল আমার। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ক্রমেই তীব্র হয়। আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখি। ফলে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা দাবির মধ্যে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিও অন্তর্ভূক্ত হয়।’

 

Manual1 Ad Code

পরবর্তীতে বিভিন্ন ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িত থেকে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে ভূমিকা রাখেন অধ্যক্ষ মাসউদ। তিনি বলেন, “ছেষট্টিতে পশ্চিম পাকিস্তানে যাই আমি। ওই সময় সেখানকার উন্নত অবস্থা আর পূর্ব পাকিস্তানের দুর্দশার বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্দি করতে সক্ষম হই। পূর্ব-পশ্চিমের বৈষম্য আমাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমি আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম। পাকিস্তান সরকারের অধস্থন হিসেবে আমাকে পাক বাহিনীর সহযোগি হওয়ার কথা। কিন্তু আমি তাদের কোনো সাহায্য করিনি। ক্ষুব্ধ পাকিরা আমাদের গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দিল। পালিয়ে এখানে-সেখানে থাকলাম আমরা। পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ ছিল না। আমার ভাই সা’দত খান ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।”

 

বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থান নিয়ে অধ্যক্ষ মাসউদ বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বাংলা ভাষা বর্তমানে অবহেলিত। অথচ দেশ-জাতির উন্নয়নে মাতৃভাষাকে সর্বাাধিক গুরুত্ব দেওয়ার কথা। উন্নত জাতিরাষ্ট্রগুলো তাদের নিজ ভাষাকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়েছে। আমরা হাঁটছি উল্টোপথে।’

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code