প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির দুই ধরনের বক্তব্য

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ণ
শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির দুই ধরনের বক্তব্য

Manual7 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার প্রায় তিন মাস হতে চলেছে। তাকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা এখনো চলমান। তার পদত্যাগ নিয়ে ধোঁয়াশা যেন কাটছেই না। এর কারণ শেখ হাসিনা নিজেই।

তিনি কিছুদিন আগে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন যে তিনি পদত্যাগ করেননি। যেকোনো সময় চট করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারেন। এরপর মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী কি সত্যিই পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করে থাকলে তার পদত্যাগপত্রই বা কার কাছে রয়েছে?

Manual8 Ad Code

গত ১৯ অক্টোবর সাপ্তাহিক রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ ও দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লেখেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই বলে তিনি অস্বীকার করেছেন।

তবে শেখ হাসিনা ভারত চলে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানদের সামনে রেখে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি’। রাষ্ট্রপ্রধানের এই দ্বিমুখী বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজালের। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। দেখা যাচ্ছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া।

মতিউর রহমান চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি যা বলেছেন:
শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারো কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের মুখোমুখি হলাম।

Manual6 Ad Code

মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার জমানায় বঙ্গভবন ছিল আমার জন্য নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ পেয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করি স্যার, আপনি কেমন আছেন? ভাই, আপনি আমাকে স্যার বলবেন না। আমরা তো দুজনই একসঙ্গে সাংবাদিকতায় এসেছিলাম। আমি পাবনায় আর আপনি ঢাকায়। বাংলার বাণীতে দুজনই কাজ করেছি। পুরনো স্মৃতি স্মরণ করে আবেগ জায়গা করে নিল অনেকক্ষণ। স্বাভাবিক হতেই প্রশ্ন করলাম আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে?

আমি শুনেছি, তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়ত সময় পাননি। ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না।

Manual5 Ad Code

প্রেসিডেন্ট বললেন, চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি।

টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। এক পর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না। যা সত্য তাই আপনাকে বললাম। যাই হোক, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি, তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় সে সময় পাননি জানানোর। সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদসচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে।

Manual2 Ad Code

তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট বললেন, এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এটাই সত্য। তার পরও কখনো যাতে এ প্রশ্ন না উঠে সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়েছি।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি যা বলেছিলেন: আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা হয়। আলোচনা একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ভাষণে সংসদ বিলুপ্তির ঘোষণাও দেন রাষ্ট্রপতি।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির অবস্থান পরিবর্তন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতার। তার দুই ধরনের বক্তব্য নিয়ে সঠিক কোনো ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত সরকার বা বঙ্গভবন থেকে দেওয়া হয়নি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code