দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বিরলে পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন।
অপরদিকে ঘটনার দুই দিন অতিবাহিত হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো কোনো অভিযোগ করা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাতে ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যু ঘটে। তিনি বিরল উপজেলার শহরগ্রাম ইউপির বাসুদেবপুর গ্রামের মৃত তারকানন্দ রায়ের ছেলে।
ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যু ঘটনা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় ‘সংখ্যালঘু বা হিন্দু হত্যা’ সংবাদ প্রচারিত বিষয়টি নিয়েও কথা বলতে চাননি তার পরিবার।
পরিবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার দিকে ভবেশ চন্দ্র রায়ের মোবাইলে একটি ফোন আসে। এরপর তিনি বাড়িতে আছে জানালে কিছুক্ষণ পর দুটি মোটরসাইকেলে চারজন এসে তাকে নিয়ে যায়। তবে এ সময় তাকে কোনো জোরজবরদস্তি করা হয়নি।
স্বেচ্ছায় মোটরসাইকেলে করে গেছেন তিনি।
রাত ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে পরিবারকে জানানো হয় পান-বিড়ি খাওয়ার পর ভবেশ চন্দ্র রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে একটি ভ্যানযোগে বাড়ির পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী হাটে পাঠানো হয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যরা ফুলবাড়ি হাটে গিয়ে ভবেশ চন্দ্র রায়কে অচেতন অবস্থায় পান।
নিহতের ছেলে স্বপন রায় ভবেশ চন্দ্র রায়কে যখন অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক কৃষ্ণ কান্ত তার বিপি মাপেন। এরপর তাকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র রায়কে মৃত ঘোষণা করেন।
রাতেই পুলিশ নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ভবেশ চন্দ্র রায়ের মরদেহ দাহ করা হয়। আজ রবিবার তার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান।
এটাকে এখনো হত্যা বলতে চাননা তার পরিবার। তারা ময়নাতদন্তের জন্য অপেক্ষা করবেন।
নিহত ভবেশের স্ত্রী সান্ত্বনা রাণী জানান, রতন ও আতিক সহ আরও ৪ জনের সঙ্গে তার স্বামী মোটরসাইকেলে যান। কীভাবে তার স্বামী মারা গেছে এখনও সঠিকভাবে বলতে পারছেন না তিনি। তার মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে নেই।
বিরল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবল চন্দ্র রায় জানান, ভবেশ চন্দ্র রায় বিরল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। তার মৃত্যুর বিষয় নিয়ে পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি।
বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সবুর জানান, এই ঘটনায় নিহতের পরিবারকে অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি স্পষ্ট করে জানা যাবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন বলেন, বৃহস্পতিবার ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার দিকে প্রতিবেশী যুবক রতন, আখতারুল ইসলাম, রুবেল ইসলাম ও মুন্নার সঙ্গে দুটি মোটরসাইকেলে করে ভবেশ নাড়াবাড়ি হাটে যান। তাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য থাকলেও তারা নিয়মিত একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। তারা একত্রে মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করতেন। মাদকের কারণে ভিকটিম ভবেশের অনেক সম্পত্তি খোয়া গেছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাজারে চা খেয়ে পান ও সিগারেট খান। এরপর মাথা ঘুরে ভবেশ বসে পড়েন। খয়ের, চুন ও কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেয়েছিলেন তিনি। এ সময় দোকানের একটি খুঁটি ধরে হেলান দিয়ে বসে পড়েন। পরে সেখান থেকে ধরাধরি করে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, এই নিহতের ঘটনায় কেউ কোনো মামলা করতে আসেনি, অভিযোগও দেয়নি। ময়নাতদন্ত হয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে বোঝা যাবে। আমাদের ওপরে কোনো চাপ নেই। সঠিক তথ্য যেটি আপনাদের জানালাম। যাদের সঙ্গে গিয়েছে তাদের সঙ্গে থাকা অবস্থাতেই সে অসুস্থ হয়েছে। এরপর তারাই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেছে, পরিবারকে জানিয়েছে। এরপর অবস্থা গুরুতর হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। পরিবার অভিযোগ তুলেছে, এজন্য আমরা সুরতহাল প্রতিবেদন করেছি, ময়নাতদন্ত করেছি। আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু তার মৃত্যু নিয়ে একটি বিষয় এসেছে। আমাদের কর্মকর্তারা এবং থানা পুলিশ তদন্ত করছে যে কোনো ঘটনা আছে কি না। কোনো ঘটনা থাকলে আমাদের কাছে আসবে এবং আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে অন্য কোনো ঘটনার তথ্য নাই, তদন্তেও আসেনি। আমি থানাকে বলে রেখেছি, পরিবার যদি মামলা করতে চায় তাহলে মামলা করবে। যদি তদন্তে হত্যার ঘটনা থাকে তাহলে সেভাবেই তদন্ত করে হত্যাকারীদের বের করব।
ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা বিব্রতকর। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। যদি কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, ঘটনা যদি প্রকৃত না ঘটে থাকে সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কোনো কিছু মিডিয়াতে বলা ঠিক না।
Sharing is caring!