প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

এক টাকায় রোগী দেখেন তিন ডাক্তার বোন

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০১:১০ অপরাহ্ণ
এক টাকায় রোগী দেখেন তিন ডাক্তার বোন

Manual6 Ad Code

 

রাজশাহী প্রতিনিধি:

Manual4 Ad Code

তিন বোনই ডাক্তার। চিকিৎসা সেবা দেন তবে ভিজিট হিসেবে নেন মাত্র এক টাকা। এমন দৃষ্টান্ত তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল, আয়েশা সিদ্দিকা, ফারজানা মোজাম্মেল নামের তিন বোন।

Manual7 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

২০২৩ সাল থেকে ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল এক টাকায় রোগী দেখা শুরু করেন। বিষয়টি রাজশাহীতে বেশ সাড়া ফেলে। একই বছর থেকে অন্য বোনেরা এক টাকায় রোগী দেখা শুরু করেন। তাদের দাবি- ‘এক টাকায় রোগী দেখার উদ্যোগটা তাদের বাবা মীর মোজাম্মেল আলীর। বাবার ইচ্ছেতেই তারা এক টাকায় রোগী দেখেন।’

Manual7 Ad Code

জানা গেছে, ডা. সুমাইয়া ২০২০ সালে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ডা. আয়েশা সিদ্দিকা জেনারেল ফিজিশিয়ান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস করেছেন। ডা. ফারজানা মোজাম্মেল ডেনটিস্ট। ২০২৩ সাল থেকে নগরীর সাহেববাজার এলাকায় নিজ বাসার নিচে চেম্বার তৈরি করে দুস্থ-অসহায় রোগীদের মাত্র এক টাকা ভিজিটে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিন ডাক্তার বোন। তারা পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা সেবা দেন। যা শুধু রাজশাহীতে নয়, পুরো বাংলাদেশেই অনন্য!

২০২৩ সালে মাত্র এক টাকা ভিজিট নিয়ে রোগী দেখা শুরু করেন এমবিবিএস চিকিৎসক সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল। চিকিৎসক মেয়ের জন্য শিক্ষক বাবা মীর মোজাম্মেল আলী প্রচারপত্র বানিয়ে ছিলেন। এই প্রচারপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়। এরপর অসহায় দুস্থ রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসতে শুরু করেন সুমাইয়ার চেম্বারে।

রাজশাহীর চিকিৎসক সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল বলেন, এক টাকায় রোগী দেখার উদ্যোগটা বাবার। তার ইচ্ছেতেই রোগী দেখা শুরু করি। এটা এতোটা ভাইরাল হবে ভাবিনি। আমাদের তিন বোনকে এভাবেই গড়ে তুলেছেন বাবা। আমরা তিন বোনই ডাক্তার। এর মধ্যে ডা. আয়েশা সিদ্দিকা জেনারেল ফিজিশিয়ান। উনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস করেছেন অনেক আগে। আরেকজন ডা. ফারজানা মোজাম্মেল। উনি ডেনটিস্ট। আমরা তিন বোন একেক দিন একেক বোন সময় দিয়ে থাকি। আর আমার বাবা একদম বিনামূল্যে রোগী দেখতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি একটা প্রতীকি মূল্য রাখতে চেয়েছি।

ডা. সুমাইয়া বলেন, আমি ২০২০ সালে ইসলাম ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করি। ২০২৩ সালে এই উদ্যোগটা শুরু করি। কিন্তু আমি রোগী দেখতে পারবো কি না? এমন প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন। যা খুবই দুঃখজনক। অথচ আমি এখানে প্রাইমারি ট্রিটমেন্টটা দেই। জটিল কোন সমস্যা হলে সে অনুযায়ী ডাক্তারদের কাছে রেফার্ড করি। আমি ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন নিয়মিতই চেম্বার করছি। সাধারণ মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা কোন কিছুর বিনিময়ে কেনা সম্ভব না।

বিনামূল্যে রোগী না দেখার কারণ হিসেবে সুমাইয়া বলেন, তার উদ্যোগে কয়েকজন মিলে করোনার সময় থেকে ‘দ্য ফাইভ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করছেন। সংগঠনের উদ্যোক্তা সদস্যদের নিজেদের আর্থিক সহায়তায় মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছে এ সংগঠন। তবে অনুদান না পাওয়ায় সবটাই তাদের নিজেদের ব্যয় বহন করতে হচ্ছে।

তিন চিকিৎসকের বাবা মীর মোজাম্মেল আলী বলেন, আমার তিনটা মেয়ে। মেয়েদেরকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পেরেছি। তারা আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে। আমি মানুষের জন্য কাজ করি। আমার মেয়েরাও কর্মজীবনে যাই করুক না কেন, তারা যেন অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে।

চিকিৎসা নিতে আসা শামীমা খাতুন (৩৫) নামের একজন রোগী বলেন, সাত মাস ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি। ভালোই চিকিৎসা দেন আপা। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো দিলে সেগুলো বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করাই। এরপর সে রিপোর্ট দেখে ঔষুধ দেন। তিনি চিকিৎসা দিয়ে এক টাকা করে নেন।

দাঁতের চিকিৎসা নিতে আসা কলেজ ছাত্র রফিকুল ইসলাম (১৮) বলেন, কিছু খেলে চোয়ালের দাঁতে আটকে যেত। ঠান্ডা কোন কিছু খেলে দাঁত শিরশির করতে। এখানে চিকিৎসা চলছে। এই সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে। দুই সপ্তাহ পর পর এখনে চিকিৎসার জন্য আসি। অনেকেই আসেন চিকিৎসা নিতে।

৪৫ বছর বয়সী নূর নাহার নামের এক নারী বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে কোমরে ব্যাথা। এখানে এক সপ্তাহ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। কিছুটা কমছে। অনেকগুলো ব্যায়াম দিয়েছে। একই সঙ্গে ওষুধ দিয়েছে, সেগুলো খাচ্ছি। দেখা যাক আল্লাহ ভরসা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code