প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিটি মুহূর্ত পরীক্ষার

editor
প্রকাশিত আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ
রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিটি মুহূর্ত পরীক্ষার

Manual1 Ad Code

সম্পাদকীয় :
কোনো একটি দেশের শাসকের আসনে কে বসিবেন, ইহা একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন। কিন্তু শাসকের দায়িত্ব কী-ইহা মূলত একটি কর্তব্যের প্রশ্ন। যেই মুহূর্তে কাহারো হাতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব অর্পিত হয়, সেই মুহূর্ত হইতেই তাহার এক ও অদ্বিতীয় দায়িত্ব হইবে-নাগরিকের জীবনে ন্যূনতম নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা দেওয়া। কারণ রাষ্ট্র নামক ধারণাটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি নহে। রাষ্ট্র কোনো দলের, কোনো মতের কিংবা কোনো গোষ্ঠীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকিবার বিষয়সম্পদ নহে। রাষ্ট্র এমন একটি সত্তা-যাহার মালিক তাহার জনগণ। জনগণের করের অর্থে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, এবং রাষ্ট্রের প্রশাসকগণ আদতে কর্মচারী, তথা জনগণের সেবক মাত্র। শাসন মানে সেবা, নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব।

এই নৈতিক উপলব্ধিটি যেইখানে মুছিয়া যায়, সেইখানেই রাষ্ট্রের ভিতর দিয়া গজাইয়া উঠে এক নিষ্ঠুর কৌতুক-ক্ষমতা আছে, কিন্তু কাজ নাই; বাহিনী আছে, কিন্তু শৃঙ্খলা নাই; নয়ন আছে, কিন্তু দৃষ্টি নাই। তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশে এইরূপ অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। সেইখানে সরকার আছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা তথা জনগণের নিরাপত্তা নাই। প্রশাসন আছে, কিন্তু নাগরিক-জীবনে স্বস্তি নাই। কাজের জায়গা আছে, কিন্তু কাজের পরিবেশ নাই। ইহা কেবল শাসনদুর্বলতা নহে; ইহা একপ্রকার নৈতিক ব্যর্থতা। ধাতু-দুর্বলতার মতো ইহা নৈতিক দুর্বলতাও বটে। কোনো সরকার যদি এই প্রাথমিক দায়িত্বও পালন করিতে অক্ষম হয়-তাহা হইলে তাহাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের প্রয়োজন কী? একটু দূরের কিছু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির দিকে তাকাইলে ইহার স্পষ্ট দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। নাইজেরিয়া, কঙ্গো, সোমালিয়া-এই সকল দেশের কতিপয় সরকার বাহ্যত নির্বাচিত হইলেও কার্যত অপদার্থতায় নিমজ্জিত। নাইজেরিয়াতে, যেমন দেখা যায়, দেশটির বিশাল তেলসম্পদ থাকিলেও জনজীবনে চরম দুর্ভোগ বিদ্যমান। বিদ্যুৎ নাই, পানীয় জল নাই, সড়কপথে নিরাপত্তা নাই। অথচ রাজনীতিবিদগণ দিব্যি সানন্দে ক্ষমতার অলিন্দে বিচরণ করিতেছেন, ক্ষমতা উপভোগ করিতেছেন। আবার কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে, যেইখানে খনিজসম্পদের প্রাচুর্য, সেইখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীই ব্যর্থ হইতেছে সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা করিতে। সরকারের কার্যক্ষমতা যেন কেবল শপথ গ্রহণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটি সরকার ক্ষমতায় আসিবার পর নিজের অক্ষমতা লুকাইবার জন্য এই অজুহাত দেয়-তাহারা অল্প সময়ের জন্য দায়িত্বে রহিয়াছে, অতএব এই স্বল্প সময়ে ত্রুটিবিচ্যুতি হইতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে-এই ‘স্বল্প সময়’ দিয়া যদি কোনো সরকার নাগরিককে ন্যূনতম নিরাপত্তাও দিতে না পারে, কাজের পরিবেশ রক্ষা করিতে না পারে-তবে সেই ‘সময়’ ব্যয় হইল কোথায়? কাহার জন্য? রাষ্ট্রক্ষমতা এক অতীব গম্ভীর দায়িত্ব, যাহার প্রতিটি মুহূর্ত পরীক্ষার। সেই পরীক্ষায় ফেল করিলে ‘আমরা অল্প সময় পাইয়াছি’ বলিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করা যায় না। যে কোনো সরকার-সেটা স্বল্পমেয়াদি হউক, কিংবা মধ্য অথবা দীর্ঘমেয়াদি-তাহারা যদি অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তবে তাহাদের দায়িত্ব গ্রহণ করাটাই রাষ্ট্রের জন্য এক অনর্থক ব্যয়।

Manual4 Ad Code

উপমহাদেশেও এমন চিত্র প্রায়শই দেখা যায়। আবার, যখন কোনো রাজনৈতিক দল মনে করে, ফাঁকা মাঠে তাহারাই সর্বাধিক গোল দিবে এবং জয়লাভ করিবেই, সুতরাং তাহারা যেন এখনই ক্ষমতায় আসীন হইয়া গিয়াছে। এই অবস্থায় এই ধরনের রাজনৈতিক দলের কতিপয় কর্মী এমন আচরণ করিয়া থাকে, যেন তাহারা ক্ষমতার রেস্তোরাঁয় ঢুকিয়া স্টার্টার খাইতেছেন! খাবার এখনো চুলায়, কিন্তু তাহারা থালা লইয়া কাড়াকাড়ি শুরু করিয়া দিয়াছেন। এমন দুর্ভাগ্যজনক সংস্কৃতি রাজনীতিকে সেবামূলক দায়িত্ব হইতে সরাইয়া একপ্রকার আত্মসেবী ক্লাবের পর্যায়ে লইয়া যায়। আজকের বিশ্বে সফল রাষ্ট্রব্যবস্থার মাপকাঠি হইতেছে-কতটুকু নিরাপদ নাগরিক-জীবন, কতটুকু কর্মপরিবেশ, কতটুকু ন্যায়বিচার প্রদান করা সম্ভবপর হইতেছে। রাষ্ট্র মানে নাগরিকের আস্থা। আর সেই আস্থা রক্ষা করিবার শতভাগ দায়িত্ব শাসকের। তাহা যদি না পারা যায়-তবে শাসন কেন? দায়িত্ব কেন? ক্ষমতা কেন? ইহা তো ছেলেখেলা নহে।

Manual7 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code