প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘দৃষ্টিকটু’ পোশাক, নিন্দার ঝড়

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:৫৫ অপরাহ্ণ
অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘দৃষ্টিকটু’ পোশাক, নিন্দার ঝড়

Manual6 Ad Code

 

বিনোদন ডেস্ক:

Manual8 Ad Code

দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে অশ্লীলতা নিয়ে প্রতিবাদের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। নব্বইয়ের দশক থেকে দুই হাজার সালের শুরুর দিকে যখন বাংলা সিনেমায় অশ্লীল দৃশ্য, সংলাপ এবং বিদেশি গানের আদলে তৈরি নাচ-গান ঢুকতে শুরু করে, তখনই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। চলচ্চিত্র পরিবার, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রকাশ্যে এ প্রবণতার বিরুদ্ধে সরব হয়।

সেই সময় জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী শাবানা, আলমগীর, সালমান শাহ, রোজিনা থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে মৌসুমী, ফেরদৌস, জয়া আহসান কিংবা শাকিব খান, আরিফিন শুভসহ অনেকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, অশ্লীল কনটেন্টের কারণে পারিবারিক দর্শকরা সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে জনমতের চাপে সেন্সর বোর্ডও কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়।

২০০৭ সালে একসঙ্গে কয়েক ডজন চলচ্চিত্র শুধু অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় যে, চলচ্চিত্র শিল্পের ভেতরের মানুষ থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠন, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে আন্দোলন সবসময়ই সমান্তরালে চলেছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে অশ্লীলতা নিয়ে নতুন করে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে তা সিনেমা বা নাটকে নয়, কথিত অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান ঘিরে। পুরস্কার বিতরণী আসরে অংশ নেয়া কথিত মডেল-অভিনেত্রীদের পোশাক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাংস্কৃতিক মহলে মহাবিতর্ক জন্ম দিয়েছে।

অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, এসব অনুষ্ঠানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে খোলামেলা ও অশ্লীল পোশাক প্রদর্শন করা হচ্ছে, যা দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ও পারিবারিক দর্শকদের জন্য অস্বস্তিকর। গত কয়েক মাস ধরে টানা এমন দৃশ্য চলমান থাকায় শোবিজ অঙ্গনের ভেতর থেকেই প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে।

সম্প্রতি এক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে কথিত মডেল তানজুমা আফরোজ আঁখির পোশাককে কেন্দ্র করে আবারও অশ্লীলতা বিতর্ক চরমে পৌঁছেছে। ফলে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, দেশের বিনোদন জগৎ কি আবারও এক অশ্লীলতার সঙ্কটে জড়িয়ে পড়ছে?

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী রুমানা ইসলাম মুক্তি কথিত মডেল আঁখির অশ্লীলতার প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

Manual6 Ad Code

তিনি লিখেছেন, ‘জানি না এদেরকে অ্যাওয়ার্ড কেন দেওয়া হয়, জানার ইচ্ছেও নেই। শুধু এতটুকুই জানি, এই হলো অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের অবস্থা। আমি অবশ্যই সব মহলের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, সমাজ এবং পরিবেশ রক্ষা করতে এগিয়ে আসার অনুরোধ রইল।’

মুক্তির এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং অনেকেই তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।
এই নায়িকার ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য ঘরে বহু গুণী শিল্পী, সাংবাদিক, ভক্ত এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

Manual1 Ad Code

মন্তব্য ঘরে চিত্রনায়িকা রত্না কবির বলেছেন, ‘খুবই দুঃখজনক! এগুলো দেখলে লজ্জা লাগে। এরপর তিনি নিজের ফেসবুকে প্রশ্ন রেখে লিখেন, ‘কাজ নাই, কাম নাই কীসের অ্যাওয়ার্ড পায় তাহারা? এই বেটিরা কীসের সেলিব্রেটি? ডাক দিলেই চলে যায় উলঙ্গ হয়ে! কী একটা অবস্থা!’

আরেকজন লিখেছেন, ‘এখন তো অ্যাওয়ার্ড জিনিসটা একেবারে সস্তা হয়ে গেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান আছে এসব অখাদ্য স্বঘোষিত তারকাদের কাছ থেকে ভালো পরিমাণের একটা অ্যামাউন্ট নিয়ে ওদের পুরস্কৃত করছে। এটাও এক ধরনের বিজনেস। আর ঘুরেফিরে দেখি এরাই প্রতিটি অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত হচ্ছে।’

পাশাপাশি মুক্তির মতো আরও অনেক অভিনেত্রী, শিল্পী ও বিনোদন সাংবাদিকরা এই বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন।

কথিত মডেল আঁখি খোলামেলা পোশাকের কারণে আগেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তবে সম্প্রতি যে আপত্তিকর পোশাকে তিনি প্রকাশ্যে হাজির হয়েছেন, তা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

শুধু আঁখি নয়, এ ধরনের অশ্লীলতার তালিকায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকজন মডেল। তার মধ্যে অন্যতম শীর্ষে রয়েছেন মারিয়া মিম। যিনি ‘সেলিব্রিটি ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি- ২০২৫’ কেন্দ্র করে অশ্লীলতার অভিযোগে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাকির হোসেন মডেল মারিয়া মিমের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।

তারপরও তিনি অশ্লীল পোশাক ছাড়তে পারেনি। বরং দিনদিন আরও খোলামেলাভাবেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন, যা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। তার উল্লেখযোগ্য কাজ না থাকলেও প্রতিদিন বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অশ্লীলতার অভিযোগে সমালোচনার শীর্ষে থাকা মডেল তানজুমা আফরোজ আঁখির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বাইরে আছেন, পরে কল দেবেন। তবে অপেক্ষা করেও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

অশ্লীলতার অভিযোগে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মডেল মারিয়া মিমের সঙ্গে কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও তার কোনো উত্তর মেলেনি।

অশ্লীল পোশাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার তালিকায় রয়েছেন একাধিক অভিনেত্রী ও কথিত মডেল। তাদের মধ্যে কেউ নিয়মিত, আবার কেউ অনিয়মিতভাবে মাঝে মাঝে এ ধরনের পোশাক পরে আলোচনায় আসেন। তালিকায় আছেন অভিনেত্রী সেমন্তী সৌমি, জেবা জান্নাত, নবাগত কথিত মডেল আবারিকা আকবর, মারিয়া কিসপট্রা, চিত্রনায়িকা শিমলা, ডা. মিয়ামি, মৌ রহমান, কথিত মডেল সোনিয়া পারভিন, সুমাইয়া সুমি প্রমূখ।

এ ছাড়া অনিয়মিত দেখা যায় মন্দিরা চক্রবর্তী, কুসুম শিকদার, অভিনেত্রী রুনা খান, আশনা হাবিব ভাবনা, মডেল বারিশা হক ও সৈয়দা রুমাকে।

এ নিয়ে দেশের জনপ্রিয় নাট্যকার ও নির্দেশক জিনাত হাকিম বলেন, ‘এখনকার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে গেলে বিব্রত হতে হয় কিছু মানুষের জন্য। গুটি কয়েক মানুষের জন্য পুরো মিডিয়ার বদনাম হচ্ছে। একজন নায়িকাও এভাবে চলাফেরা করে না। কিন্তু নামধারী কয়েকজন মডেলের কারণে পুরো মিডিয়ার বদনাম হচ্ছে। বিদেশের মাটিতেও এমন চিত্র দেখি না। যেটা আমাদের দেশে কিছু অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ইদানিং দেখছি। এর প্রতিকার দরকার।’

Manual5 Ad Code

এক সাক্ষাৎকারে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন সবচেয়ে বেশি অসামাজিক। অনেকেই মনে করছেন, নাটক-সিনেমার বাইরেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে খোলামেলা কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ার ফলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে, আর সেই বাস্তবতাই মোশাররফ করিমের বক্তব্যকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।

বর্তমান প্রজন্মের টিভি অভিনেত্রী সেমন্তী সৌমিকে মাঝে মাঝে খোলামেলা পোশাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে বলে অভিযোগ উঠলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কে বলছে আপনাকে, আমাকে খোলামেলা পোশাকে দেখা যায়? এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি খোলামেলা পোশাক পরি না। আমি সব ধরনের পোশাক ক্যারি করি। আমাকে যে পোশাকে ভালো লাগে, যে পোশাকে আমি কমফোর্টেবল, ওই ধরনের পোশাকই পরি। এমন নয় যে খোলামেলা পোশাক পরে কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।’

বড় পর্দার অভিনেত্রী মন্দিরা চক্রবর্তী। সম্প্রতি প্রায় সব অ্যাওয়ার্ড শোতেই তার নাম দেখা যাচ্ছে। সেসব অনুষ্ঠানে তিনি বেশিরভাগ সময় খোলামেলা শাড়ি পরে উপস্থিত হন। এ নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

 

এ প্রসঙ্গে মন্দিরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনি যে প্রসঙ্গ তুলছেন, সত্যি বলতে আমি নিজ চোখে এমন কিছু দেখিনি। যেহেতু আপনি সাংবাদিক, আপনার আগে যাচাই করা উচিত ছিল যে আমি কোন কারণে এত অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছি। আমি একজন নায়িকা, আমার পোশাক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দুটোই হতেই পারে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যখন আমার পোশাক নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়, তখন আপনারা দেখছেন না কেন? যখন আমি পাতলা শাড়ি পরে যাচ্ছি তখনই আপনাদের চোখে এটাই কেন পড়ছে? যখন আলোচনার মাধ্যমে আমাকে ভালো বলে তখন অবশ্যই আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন আমার অনুভূতি কেমন। আমার পোশাক নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।’

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অ্যাওয়ার্ডের পরিমাণ বেড়েছে। কে অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছেন আর কে পাচ্ছেন এ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। আর এসব নামধারী অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘অর্ধ উলঙ্গ’ হয়ে ছুটে যাচ্ছেন কথিত মডেল আঁখি-মিমরা। আর এসব কথিত অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘দৃষ্টিকটু’ পোশাক নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code