প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

স্টারমারকে গাজায় ‘গণহত্যা’ থামিয়ে ‘আইনি দায়িত্ব’ পালনের আহ্বান গ্রেটা থুনবার্গের

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ণ
স্টারমারকে গাজায় ‘গণহত্যা’ থামিয়ে ‘আইনি দায়িত্ব’ পালনের আহ্বান গ্রেটা থুনবার্গের

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
ফিলিস্তিনের গাজায় সহায়তা মিশনে যোগ দিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। তিনি গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে এই ‘গণহত্যা’ প্রতিরোধে তার ‘আইনি দায়িত্ব’ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। থুনবার্গ এই বক্তব্য দেন গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া একটি নৌবহর থেকে, যার লক্ষ্য খাদ্য, শিশুদের দুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া।

দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে থুনবার্গ বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে যেসব রাষ্ট্রনেতার পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাদের মধ্যে বড় ধরনের অনুপস্থিতি চোখে পড়ছে। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ ও স্টারমারের সম্ভাব্য বৈঠকের আগে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধ সমর্থন করছে কিংবা সংঘটিত করছে, ইতিহাস তাদের বিচার করবে। ভবিষ্যতে আমরা স্টারমারের মতো নেতাদের বর্ণনা করতে উপযুক্ত শব্দ খুঁজে নেব।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে মানুষ এখন ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান নির্যাতন সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে। তার ভাষায়, ‘আমরা লাইভস্ট্রিমে গণহত্যা দেখতে অস্বীকার করি। সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসছে, অথচ যাদের আইনি দায়িত্ব রয়েছে, সেই সরকার ও ক্ষমতাসীনরা নীরব রয়েছেন। তাদের আইনি দায়িত্ব হলো গণহত্যা প্রতিরোধ করা এবং বর্ণবাদী শাসনকে সমর্থন না করা।’

Manual3 Ad Code

যদিও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হেরজগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি, তবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত সম্প্রতি হেরজগকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। কারণ তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জন্য গোটা ফিলিস্তিনি জাতিকে দায়ী করেছিলেন।

থুনবার্গ বর্তমানে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের একটি সহায়তা নৌবহরে রয়েছেন। এ বহরের শত শত কর্মী গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দিতে অংশ নিচ্ছেন। জাতিসংঘ গত মাসে সতর্ক করে জানিয়েছিল, গাজার সাধারণ মানুষ পূর্ণাঙ্গ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। এটি থুনবার্গের দ্বিতীয় সহায়তা অভিযান। এর আগে জুন মাসে তিনি আন্তর্জাতিক জলসীমায় গাজার উদ্দেশে যাওয়া অবস্থায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হয়েছিলেন।

Manual3 Ad Code

নৌবহরটি ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’-এর অংশ, যা ২০০৮ সাল থেকে গাজায় সাহায্য পাঠাচ্ছে। তবে এতে অংশগ্রহণকারীদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। অতীতে অন্তত ১০ জন কর্মী নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জার্মান কর্মী ইয়াসেমিন আকার বলেন, ‘অনেকে এটিকে আত্মঘাতী মিশন বলতে পারেন। হয়তো সেটাই সত্যি। তবে প্রশ্ন হলো—আমরা কেন ভয় পাব, যখন দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য কেবল মানবিক সহায়তা বহন করছি?’

থুনবার্গও স্বীকার করেন, তাদের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার কারণে ইসরায়েল অবৈধভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন, সাধারণ জ্ঞান ও মানবিক মূল্যবোধের দিক থেকে আমাদের ওপর আক্রমণের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবুও ইসরায়েল মনে করে তারা আইনের ঊর্ধ্বে, আর বিশ্ব তাদের এই সুযোগ করে দিচ্ছে।’

Manual2 Ad Code

ব্রাজিলিয়ান কর্মী থিয়াগো আভিলা বলেন, আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের কারণেই তারা কিছুটা নিরাপদ থাকছেন। তার ভাষায়, ‘আমরা মানুষকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই মিশনের খবর শেয়ার করতে বলি, কারণ এটি আমাদের দৃশ্যমান করে তোলে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের মতো আমাদেরও হত্যা করতে চাইতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক মূল্য দিতে না চাওয়ায় তারা দ্বিধায় থাকে।’

২০১৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে বর্ষসেরা কনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। জলবায়ু আন্দোলনে অবদানের জন্য পাঁচবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত থুনবার্গ বলেন, ‘এখন বিশ্বের মানুষ কথায় ও কাজে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছে, এই আন্দোলনের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে বিশ্বের মানুষ নেই।’

Manual8 Ad Code

তিনি আরও যোগ করেন, গাজায় সাংবাদিকরা জীবন ঝুঁকিতে ফেলে প্রতিদিন নৃশংসতার প্রমাণ তুলে ধরছেন। এখন আর কেউ অজানা থাকার সুযোগ পাচ্ছে না। তার ভাষায়, ‘আমরা প্রতিদিন দেখি, শিশুরা অনাহারে আছে, বাবা-মায়েরা সন্তানদের দেহাবশেষ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ইসরায়েল যতই হাস্যকর যুক্তি দিক না কেন, এই পরিস্থিতির কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই।’

গাজার সাংবাদিকদের প্রাণহানির ঘটনাও ভয়াবহ। গত ২২ মাসে অন্তত ২৪৮ জন সাংবাদিক সেখানে নিহত হয়েছেন। থুনবার্গ বলেন, ‘যতই গণহত্যা বাড়ানো হবে, ততই আমাদের প্রতিরোধও বাড়বে। আমরা বসে বসে লাইভস্ট্রিম গণহত্যা দেখতে পারি না।’

ইসরায়েল অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা কেবল হামাসকে ধ্বংস এবং জিম্মি উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে নয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code