প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নারীদের যেভাবে সম্মানিত করেছে ইসলাম

editor
প্রকাশিত মার্চ ৮, ২০২৫, ০৬:৩২ পূর্বাহ্ণ
নারীদের যেভাবে সম্মানিত করেছে ইসলাম

Manual4 Ad Code

আলেমা উম্মে হাবিবা:
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা বিশ্বজুড়ে দিনটি পালিত হচ্ছে নারী দিবস হিসাবে। পৃথিবীর কোনো অংশে এটি উদযাপনের দিন, কোথাও বা প্রতিবাদের। দিবসটির পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের ইতিহাস। বহু দেশে তাই দিনটি পরিচিত আন্তর্জাতিক নারী শ্রমিক দিবস হিসেবেই।

এ বছর ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

বিশ্বব্যাপী নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের কথা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। বিভিন্ন সভাও দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচিও পালিত হয় অধিকার আদায়ে। অজ্ঞতাবশত কেউ কেউ নারীর অধিকার হরণে ইসলামকে দায়ী করে থাকেন।

Manual6 Ad Code

অথচ পবিত্র কুরআনে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অধিকার নিশ্চিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নারীর অধিকার রক্ষায় পুরুষকেই নির্দেশনা ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।নারীর অধিকার রক্ষায় পুরুষকেই নির্দেশনা ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইসলামের আবির্ভাবের আগে নারীর মর্যাদা কিরূপ ছিল; তাদের অধিকার বলতে কিছু ছিল না। কিন্তু মানবতার মুক্তির দূত, নবিকূল শিরোমণি হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.)-এর আবির্ভাবে নারীরা তাদের যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা লাভ করে।

ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটির ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ‘নিসা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে।

এ ছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।

আর নারীর অধিকারের কথা উল্লেখপূর্বক আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন :‘নারীদের (পুরুষদের উপর) তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে যেমনি রয়েছে নারীদের উপর পুরুষদের’ (সুরা আল বাকারা :২২৮) এ আয়াতে যেমনি সুস্পষ্টভাবে নারীদের অধিকারের কথা বলা হয়েছে, অন্য কোনো ধর্মে এভাবে নারীর অধিকারের কথা বলা হয়নি।

ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান। নারীদের প্রতি উত্তম আচরণের ব্যাপারে মহানবী (সা) বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতেন। তিনিই (সা.) পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

দিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত হাকিম ইবনে মুয়াবিয়া (রা.) তার পিতা মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হে আল্লাহর রাসুল! স্বামীর ওপর স্ত্রীর কি কি অধিকার রয়েছে?

তিনি (সা.) বললেন, তার অধিকার হলো যখন তুমি খাবে তখন তাকেও খাওয়াবে, তুমি যে মানের কাপড় পরবে, তাকেও সে মানের কাপড় পরাবে। তার মুখে আঘাত করবে না। অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করবে না’ (আবু দাউদ)। এই হলো ইসলাম ও রাসুল করিম (সা.)-এর আদর্শ।

বর্তমানে আমরা মুসলমান এবং শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার দাবি করছি ঠিকই, তবে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা এবং শ্রেষ্ঠ নবীর আদর্শ আমাদের মাঝে দেখা যায় না।

ইসলাম ও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বব্যাপী নারী সমাজের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক জীবন্ত আদর্শ স্থাপন করেছেন। মানব মন ও মানব সমাজে নারী প্রগতির গোড়াপত্তন করে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। ইসলামে নারীর স্বাধীন মত প্রকাশের মৌলিক বাক-স্বাধীনতা আছে। নর-নারী উভয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে স্বীকৃত এবং কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গ লাভের সম অধিকার প্রাপ্য।

যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করছেন, ‘তিনি তোমাদের একই সত্তা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার জীবনসঙ্গিণীকে একই উপাদান হতে সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১)।

Manual1 Ad Code

অপর এক স্থানে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘যে ব্যক্তি মোমেন অবস্থায় সৎকর্ম করবে সে পুরুষ হোক বা নারী সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (সুরা মোমেন, আয়াত: ৪০)।

Manual4 Ad Code

ইসলামের কষ্টিপাথরে নারী পুরুষের মর্যাদা ও অধিকার তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলাম নারীকে শুধু পুরুষের সম-অধিকার নয় বরং কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষ থেকে নারীকে অধিক মর্যাদা দিয়েছে।

মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত ঘোষণা করে ইসলাম নারী জাতিকে সর্বোত্তম মর্যাদায় ভূষিত করেছে। যে মর্যাদা পুরুষকে দেয়া হয় নি। ইসলামে একজন নারী একজন পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ও মর্যাদার অধিকারী।

পারিবারিক জীবনে সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে নারীর ওপর পুরুষের প্রাধান্য থাকলেও সার্বিক মূল্যায়নে ইসলাম নারী জাতিকে পুরুষের অধিক মান-মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, যা অন্য কোন ধর্ম বা জাতিতে করেনি।

সভ্যতা বিনির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবদান ইসলাম কখনো খাটো করে দেখেনি। বরং উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়ে নারীকে সাহস জুগিয়েছে। নারীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত নয়।

এমনকি মুসলিম অধ্যুষিত সমাজ ও রাষ্ট্রে পর্যন্ত নারীদের অধিকার আরও বেশি উপেক্ষিত হচ্ছে। মূলত ইসলামি সভ্যতার পতনের কারণেই আজ নারী অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

Manual1 Ad Code

লেখক: আরবি ভাষার শিক্ষিকা ও হিফজ বিভাগীয় প্রধান, ভিশন একাডেমি, উত্তরা, ঢাকা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code