প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যে অবস্থানে

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যে অবস্থানে

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো ও মার্কিন শিল্প সুরক্ষা দিতে শতাধিক দেশের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ক আরোপের হার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশের ওপর আরোপ হয়েছে ৩৭ শতাংশ। বিশ্ব তোলপাড় করা এ শুল্ক আরোপের পর বাংলাদেশে আলোচনায় এসেছে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি।

বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। যদিও চীন, ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো বড় অর্থনীতির তুলনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ খুব বেশি নয়, তবে বাংলাদেশের জন্য এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

বাড়তি এ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণের চেষ্টা। এই শুল্ক থেকে মুক্তি, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, ব্যবসায়িক ক্ষতি থেকে পরিত্রাণের উপায় প্রভৃতি বিষয় রয়েছে আলোচনায়।

 

Manual6 Ad Code

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি আমদানির চেয়ে অনেক বেশি। রপ্তানি তৈরি পোশাকের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, যার মধ্যে বেশিরভাগ মৌলিক আইটেম। অন্যদিকে, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি লোহা, ইস্পাত, খনিজ জ্বালানি, তুলা, তেলবীজ ও নিউক্লিয়ার রেক্টরসহ পাঁচটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।

 

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং দেশ থেকে আমদানি ছিল ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

 

Manual5 Ad Code

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬০১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের লোহার ইস্পাত আমদানি করেছে, তারপরে খনিজ জ্বালানি ৫৯৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, তুলা ৩৬১ মিলিয়ন ডলার, তেলবীজ ৩৪১ মিলিয়ন ডলার ও নিউক্লিয়ার রেক্টর আমদানি করেছে ১১১ মিলিয়ন ডলারের।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেশিরভাগ আসে তৈরি পোশাক থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের ৭ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। বাকিটা এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিভিন্ন কৃষিপণ্য থেকে।

 

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ছিল ৯৭০১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আমদানি ২৩৪৪ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ১০৪১৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২৮২৫ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ৬৯৭৪ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২২৬৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৮৩২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২১২৬ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৬৮৭৬ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭৭৩ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৯৮৩ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭০৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

 

এ অবস্থায় ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আকর্ষণ ও রপ্তানিপণ্যের বহুমুখীকরণের প্রতি জোর দিতে বলছেন। শুল্কের যৌক্তিকীকরণ ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির নতুন পণ্য খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মার্কিন সরকার শুল্কের হার কমাতে চায়। বর্তমানে তারা ৭৪ শতাংশ কর দিচ্ছে। আমি মনে করি, এটা ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনলে তা আমাদের রপ্তানিকারকদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।’

Manual7 Ad Code

 

তিনি বলেন, ‘আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করার ফলে ভলিউম বাড়বে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ব্যবধান কমবে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুল্ক কমানোর আহ্বান জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারকে নীতিগত সংস্কার আনতে হবে। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবে এখানে রপ্তানি করবে কি না?’

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলাম তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলার ফিউমেগেশন সহজতর করে দিয়েছি। ফলে এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আনেক সহজ হয়েছে বাংলাদেশে তুলা রপ্তানি করা। এতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বেড়েছে।’

হাসান বলেন, ‘সরকার যদি মার্কিন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে তাহলে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি তুলা ও সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি করতে পারবো। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।’

 

Manual3 Ad Code

পাশাপাশি নতুন পণ্য খুঁজে বের করা এবং ব্যবসার নতুন নতুন ক্ষেত্র বের করার জন্য উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে মেলা আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code