প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শুল্ক আরোপ নিয়ে দেশে দেশে টানাপোড়েন, অটল অবস্থানে ট্রাম্প

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ণ
শুল্ক আরোপ নিয়ে দেশে দেশে টানাপোড়েন, অটল অবস্থানে ট্রাম্প

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টারা আমদানির ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের পক্ষে কথা বলেছেন। বাজারের অস্থিরতা এবং বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তারা এই নীতি বজায় রাখার বিষয়ে অনড় মনোভাব দেখিয়েছেন।

টেলিভিশনে একাধিক সাক্ষাৎকারে, ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট সাম্প্রতিক শেয়ারবাজারের পতনকে গুরুত্বহীনভাবে উল্লেখ করেছেন। বাণিজ্য সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিক জোর দিয়ে বলেছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর করা হবে।

Manual4 Ad Code

বেসেন্ট বলেছেন, অস্থিরতার ফলে মন্দা আসবে এমন কোনও কারণ নেই। তিনি বলেছেন, “এটি একটি সমন্বয় প্রক্রিয়া”। এদিকে আরেক শীর্ষ উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট বলেছেন, ৫০টিরও বেশি দেশ একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ট্রাম্পের সাথে যোগাযোগ করেছেন।

Manual2 Ad Code

এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান শেয়ারের সূচক পাঁচ শতাংশেরও বেশি কমেছে, যেখানে এসএন্ডপি ৫০০ প্রায় ছয় শতাংশ কমেছে। যা ২০২০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের জন্য সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ।

বাজারের এই নাজুক অবস্থা চলতি সপ্তাহেও অব্যাহত থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। যেমন সৌদি আরবের শেয়ার বাজারে-যেখানে কি না রোববারও লেনদেন হয়- প্রায় সাত শতাংশ দরপতন হয়েছে – যা মহামারির পর থেকে এ পর্যন্ত একদিনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং জায়ান্ট জেপি মরগান ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ।

এমন অবস্থায় রোববার সন্ধ্যায় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেছেন, ইউরোপীয় এবং এশীয় দেশগুলো “একটি চুক্তি করার জন্য মরিয়া হয়ে আছে”। পণ্যের দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়া এবং বাজারে মন্দার আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে আমেরিকান ভোক্তাদের “সহনসীমা” নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

তিনি রিপোর্টারকে বলেন, “আমি মনে করি আপনি খুব বোকার মতো প্রশ্ন করেছেন। আমি চাই না যে কোনও কিছু খারাপের দিকে যাক কিন্তু কখনও কখনও আপনাকে কিছু ঠিক করার জন্য ওষুধ খেতে হয়।”

এই অস্থিরতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক রোববার সিবিএস নিউজকে জানান, সব ধরনের আমদানির ওপর ১০ শতাংশ “বেসলাইন” শুল্ক, যা একদিন আগে কার্যকর হয়েছে, তা সামনের দিনগুলোতে অবশ্যই বহাল থাকবে।

লুটনিক আরও বলেন, বেশি হারের পারস্পরিক শুল্ক এখনও পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে।

তালিকায় থাকা প্রায় ৬০টি দেশের ওপর উচ্চতর শুল্ক ৯ এপ্রিল বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এই শুল্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে লুটনিক বলেন, “সবকিছুই কার্যকর হবে। তিনি (ট্রাম্প) যা ঘোষণা করেছেন তার সবই বাস্তবায়ন হবে এবং তিনি রসিকতা করে কিছু করেননি।”

লুটনিক পেঙ্গুইন অধ্যুষিত দুটি ছোট অ্যান্টার্কটিক দ্বীপের ওপর আরোপিত শুল্কের পক্ষেও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এটি চীনের মতো দেশগুলোর “লুপহোল” বন্ধ করার জন্য আরোপ করা হয়েছে। যাতে তারা এই জায়গাগুলোর মাধ্যমে মালপত্র পাঠাতে না পারে।

এনবিসিতে মিট দ্য প্রেসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট যুক্তি দিয়েছিলেন, ট্রাম্প “নিজের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করেছেন। ৫০টিরও বেশি দেশ তাদের শুল্কহীন বাণিজ্যে বাধা কমানোর, শুল্ক কমানোর, মুদ্রার কৃত্রিম হেরফের বন্ধ করার বিষয়ে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছে।”

Manual3 Ad Code

ট্রাম্পের আরেক শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেটও দাবি করেছেন, ৫০টিরও বেশি দেশ আলোচনা শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে হ্যাসেট বা বেসেন্ট কেউই কোন দেশগুলো যোগাযোগ করেছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি।

অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া এবং তাইওয়ান গত সপ্তাহে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ওই দুই দেশ থেকে আমদানির ওপর ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার বিপরীতে প্রতিশোধমূলক পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে না তারা।

সংবাদ সংস্থা এএফপি এবং নিউইয়র্ক টাইমসের একটি চিঠি অনুসারে, ভিয়েতনামের নেতা টো ল্যাম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন, যেন যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামী পণ্য রপ্তানির ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরও অন্তত ৪৫ দিন পর আরোপ করা হয়। এক কথায় তিনি শুল্ক আরোপ বিলম্বিত করতে বলেছেন।

তবে চীন শুক্রবার ঘোষণা করেছে, তারা ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে সমস্ত মার্কিন পণ্য আমদানির ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গত শনিবার সতর্ক করে বলেছেন, পৃথিবীকে আমরা আগে যেভাবে চিনতাম এখন তা বদলে গিয়েছে। ব্রিটেনের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি অর্থনৈতিক চুক্তি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে, যাতে কিছু শুল্ক এড়ানো যায়।

 

ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র আরও বলেছেন, স্টারমার এবং কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক ফোনালাপে একমত হয়েছেন যে “একটি সর্বাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধ কারও জন্যই লাভজনক নয়”।

এদিকে সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন ডিসিতে বাণিজ্য আলোচনার জন্য ট্রাম্পের সাথে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে বিমানে ওঠার সময় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় নেতানিয়াহু বলেন, নতুন শুল্ক চালু হওয়ার পর তিনি “প্রথম আন্তর্জাতিক নেতা যিনি ট্রাম্পের সাথে দেখা করছেন”।

তিনি বলেছেন, এ থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইসরায়েলের যেমন ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি দুই দেশের মধ্যেও সম্পর্কও বেশ নিবিড়, যা এই সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Manual2 Ad Code

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শহরগুলোতে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশব্যাপী সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বস্টন, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিভিন্ন শহরে কয়েক লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিবিসি বাংলা

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code