প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আপস ও সাক্ষী গায়েবে আটকা শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ১৪, ২০২৫, ০৮:৩০ পূর্বাহ্ণ
আপস ও সাক্ষী গায়েবে আটকা শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার

Manual6 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

গত দুই মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে উচ্চকিত ছিল দেশ। গত ১৫ মাসের মধ্যে মার্চ মাসেই সবচেয়ে বেশি নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জানিয়েছে, এই এক মাসে ৪৪২ জন নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ১৯৪ জন নারী ও ২৪৮ জন কন্যাশিশু। নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আপস, সাক্ষী গায়েব ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় বাড়ছে এ ধরনের অপরাধ, প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

 

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এইড উপপরিষদে সংরক্ষিত ১৫টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সংগঠনটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৪৪২ জনের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২৫ কন্যাশিশুসহ ১৬৩ জন, যা গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৮ কন্যাশিশুসহ ৩৬ জন। ২ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, ২ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া ৫৫ জন কন্যাশিশুসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘ধর্ষণ প্রতিরোধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আছে। আবার আইনের সংশোধন করে খসড়াও পাস হয়েছ; কিন্তু খুব একটা লাভ হবে না। কারণ আমরা মামলার বিচারে দেখেছি দীর্ঘসূত্রতা। ডিএনএ টেস্টের ফল আসতে দেরি হয়। সাক্ষীর অভাব বা সাক্ষী গায়েবও হয়। মামলাটি যদি শিশু ধর্ষণের হয় সে ক্ষেত্রে আরও সাক্ষী পাওয়া যায় না। শিশুটি কিছু বলতেও পারে না। ফলে ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। এমন কী বিবাদীর অনুরোধে কর্তৃপক্ষও বাদীকে আপস করার পরামর্শ দেয়। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী পরিবারটি আপসের দিকে অগ্রসর হয়। এসব মামলার বেশির ভাগই আপস হয়, আসামিরা খালাস পেয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, ধর্ষকের সঙ্গে ভুক্তভোগীকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীর জীবন আরও বিপন্ন হয়। কারণ আসামি ওই মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এই বিয়ে করে। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখি কয়েক বছর যেতে না যেতেই মেয়েটিকে ছেড়ে দেয়। ফলে মেয়েটি একাধারে ধর্ষণের শিকার হলো, বিচার পেল না, জোরপূর্বক বিয়ে এবং শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ। অনেক ক্ষেত্রে বিবাহিত থাকা অবস্থায় সন্তানও জন্ম দেয় ভুক্তভোগী। ফলে মেয়েটি একটি দুর্বিষহ জীবনে পড়ে যায়।’

মহিলা পরিষদের ওই প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, মার্চে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১২ কন্যাশিশুসহ ১৬ জন। উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছে ৮ জন। এর মধ্যে ৬ জন কন্যাশিশু। বিভিন্ন কারণে ৯ কন্যাশিশুসহ ৫৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ২ জনকে। ৯ জন কন্যাশিশুসহ ২৯ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ২ কন্যাশিশুসহ ১৩ জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

Manual1 Ad Code

 

নারী ও কন্যাশিশু পাচারের শিকার হয়েছে ২১ জন। ১ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫ জন, এর মধ্যে ২ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৭ জন, এর মধ্যে ২ জন কন্যাশিশু। পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩ জন। ২ জন গৃহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। পিতৃত্বের দাবি উঠেছে ১টি। ৬ কন্যাশিশুসহ ৮ জন অপহরণ হয়েছে। এ ছাড়া ২ কন্যাশিশুসহ ১৯ জন অপহরণ চেষ্টার শিকার হয়েছে। ৩ জন সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে। বাল্যবিবাহের চেষ্টা হয়েছে ৩টি।

Manual8 Ad Code

নির্যাতনের ঘটনার কারণ বিশ্লেষণে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত নারীদের নিয়ে যে অবমাননাকর মন্তব্য করা হচ্ছে, নারীদের সঙ্গে যা হচ্ছে এবং এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে অবস্থা- সে কারণেই নারী ও কন্যার প্রতি নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটছে। এর আরও বড় করাণ হলো বিচারহীনতা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, নারী নির্যাতনের এসব মামলার বেশির ভাগ আসামির নামে আগে নানা অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। এমনকি একই ধরনের আরও মামলা তাদের বিরুদ্ধে থাকার রেকর্ডও আছে। ফলে এখান থেকে বোঝা যায়, তারা একটি মামলা থেকে জামিনে বেরিয়ে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। কারণ তারা জানে, এই মামলার বিচার হয়তো ঠিকঠাক হবে না অথবা অনেক সময় লাগবে। এ জন্য তারা আরও বেপরোয়া হয়ে যায়, যা মামলার বাদীর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’

Manual5 Ad Code

আদালতের এই একই চিত্রের কথা জানান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না। তিনি বলেন, বিচারের দীর্ঘ সময়ের কারণে অপরাধীরা যেমন বেপরোয়া হয়, তেমনি মামলাকেও আপসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, যা একজন ভিকটিমের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। তাই এই চর্চা থেকে বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করার পাশাপাশি এমন কোনো প্রশ্ন বা কথা বলা যাবে না, যাতে বাদীর মানহানি বা তিনি নিরুৎসাহিত হন এবং বিচার নিয়ে শঙ্কায় পড়েন।

অন্যদিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মামলার বিচার দ্রুত করতে ফওজিয়া মোসলেম ডিএনএ টেস্ট বা সাক্ষীর বদলে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা ও মেডিকেল রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বিচার করার দাবি জানান।

Manual2 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code