প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

স্বস্তি ফিরছে আইনশৃঙ্খলায়

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৭:১৩ অপরাহ্ণ
স্বস্তি ফিরছে আইনশৃঙ্খলায়

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাসে আইনশৃঙ্খলায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা বর্তমানে অনেকটাই কমে এসেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অনেকটাই কমে এসেছে খুন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও মব সন্ত্রাসের মতো ঘটনা। এ ছাড়া এ বছর রমজান ও ঈদের ছুটিতেও জনমনে ছিল স্বস্তি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক থাকলেও দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উল্লেখ করার মতো অপরাধমূলক কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে। অন্যান্য সময় রোজা ও ঈদকে ঘিরে কমবেশি আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। মৌসুমি অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

ঈদের বাজারে বড় বড় শপিং মল, বিপণিবিতানসহ ব্যস্ততম মার্কেট ঘিরে তৎপর হয় অজ্ঞান ও মলম পার্টি। ছিনতাইকারী, পকেটমার ও থুথু পার্টির সদস্যরা টার্গেট করে মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেয়। চাঁদাবাজিতে নামে নানা গ্রুপের সন্ত্রাসী বাহিনী।

এ সময় ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন কিংবা বড় অঙ্কের টাকা পরিবহনেও বাড়ে ঝুঁকি। গুলি করে ছিনতাই ও ডাকাতির মতো দুর্ধর্ষ ঘটনা কমবেশি হয়েছে অতীতের ঈদ উৎসবকে ঘিরে।

তবে এ বছর ছিল ব্যতিক্রম। সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক।

ঈদ বাজারে কেনাকাটা থেকে শুরু করে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা, মার্কেট-শপিং মল ও বাসাবাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে অন্যবারের তুলনায় এবারে নগরীতে স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে তাদের দাবি, জনমনে স্বস্তি ও নগরবাসীর নিরাপত্তায় আরও সক্রিয় হতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

জানা গেছে, পুরো রমজান মাস আইনশৃঙ্খলা ভালো থাকলেও শেষের দিকে এসে রাজধানীতে র‌্যাব-পুলিশ পরিচয়ে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মানুষ নির্বিঘ্নে যে যার গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে।

কিন্তু পুরো রমজান ও ঈদকে ঘিরে এবারের আইনশৃঙ্খলা ভালো থাকার কারণ সম্পর্কে র‌্যাব ও পুলিশ বলছে-মানুষের সচেতনতা এবং পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকার কথা। রমজানের শুরুতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

সেগুলো বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া অপারেশন ডেভিল হান্ট, রাজধানীজুড়ে পুলিশের কম্বাইন্ড পেট্রলিং ও ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের শুরু হয় অলআউট অ্যাকশন।

এর বাইরে সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদারকিতে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সব ইউনিট সক্রিয় হয়। রাজধানীসহ সারা দেশের পরিস্থিতির উন্নতি করতে অপরাধপ্রবণ এলাকায় জোরদার অপারেশন চালায় যৌথ বাহিনী।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ব্যাপক জনরোষের শিকার হয় পুলিশ।

ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুলিশের ৪৬০টি থানা ও স্থাপনা। আইনশৃঙ্খলায় ব্যাপক অবনতি ঘটে। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে পুলিশ বাহিনী। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় থানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক করে তোলার কাজ শুরু হয়।

কাজে ফিরে আসে পুলিশও। এরপর গত ছয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো এলাকাগুলোয় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের ঘটনা বেড়ে যায়। এরপর নড়েচড়ে ওঠে প্রশাসন। ফলে গত এক মাস ধরে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলায়।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে খুন, অপহরণ, চুরি, ছিনতাই ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে মোট ৫ হাজার ৮৬২টি।

এর মধ্যে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৩২৯টি। খুনের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৫৪৫টি। সেই সঙ্গে ছিনতাই ও চুরির মতো অপরাধও বেড়েছে এ সময়ে। এ সময়ের মধ্যে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ৩ হাজার ১৫৩ ও ৬২৩টি। আর দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের হামলার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১৯২টি।

Manual8 Ad Code

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের পরিচালক ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য নাসির উদ্দিন এলান সাংবাদিকদের জানান, গণঅভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ।

এতে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। তবে এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। পুলিশকে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ যদি এটা না পাওে, তাহলে দেশে একের পর এক বিশৃঙ্খলা ঘটবে। তবে পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাহিনীটির সদস্যরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

গত কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল গাড়ি। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে গ্রিন রোড (পান্থপথ) সিগন্যালের পশ্চিম পাশেই দেখা যায় সেনাবাহিনীর লম্বা চেকপোস্ট। নিরাপত্তা তল্লাশি চৌকির পাশেই ছিল সেনাবাহিনীর একটি কোস্টার (মিনিবাস), তিনটি জিপ ও তিনটি টহল গাড়ি। সেখানে অর্ধশতাধিক সেনা সদস্যকে চেকপোস্ট ও টহলে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

একইভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকার বাইরেও মহাসড়কে ও দেশের বড় বড় শহরেও এবারে অপরাধচিত্র তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, মহানগরীতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ডিএমপির চলমান টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫০টির বেশি টহল দল মোতায়েন থাকে।

৭৫টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোয় ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সব জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এ ছাড়া পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করে। ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে র‌্যাব গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা তৎপর থাকেন।

জননিরাপত্তায় গোয়েন্দা, ফুট পেট্রল, মোবাইল পেট্রল, সাইবার ওয়ার্ল্ডের নজরদারি বাড়ায় র‌্যাব। ঢাকায় ১০০টি এবং ঢাকার বাইরে ২৫২টিসহ মোট ৩৫২টি টিম ঈদের ছুটিতে ৯ দিন ধরে কার্যক্রম চালায়।

রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আনোয়ারুল হক বলেন, এ বছর রোজা ও ঈদে মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে অনেকটাই শঙ্কিত ছিল। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তিতে কেটেছে মানুষের।

Manual6 Ad Code

আমরা চাই বাজারে এবং আইনশৃঙ্খলায় এই অবস্থা বিরাজমান থাকুক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও তৎপর হোক। তাহলেই জুলাই অভ্যুত্থান সফল হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক জানান, অপরাধ দমনে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সম্প্রতি দেখা গেছে, সরকার এসব বিষয়ে কঠোর হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর হয়েছে। তবে পুলিশি ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে চোখ-কান খোলা রেখে সরকারকে বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি দেশের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। তাহলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

Manual5 Ad Code

সরকারের আট মাসে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে দাবি করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

Manual7 Ad Code

তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা মোটামুটি ‘স্যাটিসফাইড’। কিন্তু আরও উন্নতির অবকাশ রয়েছে। আস্তে আস্তে আরও ভালোর দিকে নিয়ে যেতে হবে। এ জন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশের অনেক থানায় লুট হয়েছে। লুট হওয়া সব অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে বাহিনীগুলোর সরঞ্জাম ও সক্ষমতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা সংঘবদ্ধভাবে মব পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করছে, যারা ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে, বা ঘটানোর চেষ্টা করবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code