প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডর এখনই হচ্ছে না

editor
প্রকাশিত মে ৪, ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডর এখনই হচ্ছে না

Manual3 Ad Code

 

Manual5 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ-সহায়তা পাঠাতে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ‘মানবিক করিডর’ দিতে জাতিসংঘ যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা আপাতত ভেস্তে গেছে। মানবিক করিডর দিতে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। তার এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আসার পর এ অবস্থান থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে যে প্রতিবাদ এসেছে, তাতে এ বিষয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেওয়া থেকে সরকার আপাতত বিরত থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

 

Manual5 Ad Code

এ ছাড়া মানবিক করিডরের বিষয়ে আলোচনায় জাতিসংঘ ও বাংলাদেশকে রাখাইনের আরাকান আর্মি যে কথা দিয়েছিল, তা রক্ষা করেনি। কাজেই এ বিষয়টি নিয়ে আর সামনে যাওয়া সম্ভব নয় বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র।

সূত্র জানায়, রাখাইনে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডর ব্যবহার করে ত্রাণ পাঠানো নিয়ে কয়েক মাস আগেই আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ। শর্ত ছিল, রাখাইনে চলমান দুর্ভিক্ষ নিরসনে মানবিক করিডর দিয়ে প্রয়োজনীয় ত্রাণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে, বিনিময়ে রাখাইন থেকে কোনো রোহিঙ্গাকে জোর করে অন্য দেশে পাঠানো যাবে না। আরাকান আর্মি জাতিসংঘের এই শর্তে রাজি হলেও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করেনি। বরং প্রতিদিনই শত শত রোহিঙ্গাকে জোর করে বা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখল নেওয়ার পরও নতুন করে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

Manual7 Ad Code

অন্যদিকে রাখাইনে ত্রাণসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানায় বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর কাছ থেকে মানবিক করিডরের বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ আসে। দেশের সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন মহল থেকেও ব্যাপক প্রতিবাদ আসে এবং এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা এখনো বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও মানবিক করিডরের বিষয়ে অনুকূল না থাকায় এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপে যাচ্ছে না সরকার। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও রাখাইনে ত্রাণ পাঠানো নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে নতুন কোনো উপায় নিয়ে আলোচনা করবে সরকার।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মানবিক করিডর ব্যবহার করে রাখাইনে ত্রাণ-সহায়তাসহ সর্বাত্মক সহায়তার প্রস্তাব আরাকান আর্মিকে দিয়েছিল জাতিসংঘ। এই প্রস্তাবে ৪টি শর্ত ছিল। যা আরাকান আর্মি, বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এক. বাংলাদেশের করিডর দিয়ে রাখাইনে যে ত্রাণবাহী পরিবহন যাবে তাতে কেউ বাধা দিতে পারবে না। দুই. রোহিঙ্গা ও রাখাইনের দুর্ভিক্ষকবলিত মানুষকে সমানভাবে সহায়তা দিতে হবে, এ ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। তিন. জাতিসংঘের পাঠানো এই ত্রাণকে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। চার. এই ত্রাণবহরে কোনো ধরনের আক্রমণ বা এ নিয়ে কেউ কোনো সংঘাতে জড়াতে পারবে না। এসব শর্তে মানবিক করিডর চালু নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সম্মতি নিয়ে কাজ চলছে গত কয়েক মাস ধরে।

Manual3 Ad Code

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ, জাতিসংঘ ও আরাকান আর্মির মধ্যে এই বোঝাপড়ার পরই জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ঢাকা সফরে আসেন এবং মানবিক করিডর নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের একটি চেষ্টা হয়। তবে এই মানবিক করিডর নিয়ে জান্তা সরকারের সম্মতি নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, জাতিসংঘের মাধ্যমে এই মানবিক করিডর দিয়ে ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তা অব্যাহত থাকলে রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হয়েছিল। এতে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সখ্য গড়ে তোলার সুযোগ ছিল এবং সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে প্রত্যাবাসন করা সহজ হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ও রাখাইনের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত পরিবেশ না পাওয়ায় মানবিক করিডরের উদ্যোগ থেকে আপাতত সরে আসতে হচ্ছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code