প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

২৬ দিনেও অপূর্ণাঙ্গ ৫ সংস্কার কমিশন

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ০২:০৮ অপরাহ্ণ
২৬ দিনেও অপূর্ণাঙ্গ ৫ সংস্কার কমিশন

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

প্রথম দফায় ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অপূর্ণাঙ্গ রয়ে গেছে পাঁচটি কমিশন। কারণ এই পাঁচটিতে এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি শিক্ষার্থী প্রতিনিধি। তবে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তিসহ সংবিধান সংস্কার কমিশন পুরোপুরি কাজ করছে। আর ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত হয়নি নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন ও দুদক সংস্কার কমিশনে।

Manual4 Ad Code

অন্যদিকে দ্বিতীয় দফায় গঠিত চার কমিশনের মধ্যে একটিও এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করেনি। শুধু কমিশনপ্রধান নিয়োগের পাশাপাশি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে নবগঠিত চার কমিশনের সব সদস্য নিয়োগসহ সব সংস্কার কমিশনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তারা চূড়ান্ত করবেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দেশে বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার আনার লক্ষ্যে গত ১১ সেপ্টেম্বর সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঘোষণা অনুযায়ী এ পর্যন্ত রাষ্ট্র সংস্কারে দুই দফায় ১০টি কমিশন গঠন করেছে সরকার। প্রথম দফায় গত ৩ অক্টোবর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় সংস্কার কমিশন। সেগুলো হলো- সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন ও দুদক সংস্কার কমিশন।

 

এ ছাড়া দ্বিতীয় দফায় গত ১৭ অক্টোবর গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রমিক অধিকার ও নারীবিষয়ক চারটি নতুন সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। তবে এসব কমিশনে এ পর্যন্ত শুধু প্রধানকে নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে এখনো শুরু হয়নি কার্যক্রম। এই চার কমিশনের মধ্যে শুধু গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে প্রধানের পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

Manual1 Ad Code

 

সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে এসব কমিশনে বিচারপতি, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার পাশাপাশি শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হয়েছে।

Manual6 Ad Code

গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ছয় সেক্টর সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে ওই সব কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশের ছয় বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তাতে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্র ও সংস্থাপন সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের প্রধান হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আইনজীবী শাহদীন মালিককে দায়িত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টা।

পরে ১৮ সেপ্টেম্বর অপর একটি প্রজ্ঞাপনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিকের পরিবর্তে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আলী রীয়াজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে সরকার।

 

গত ৩ অক্টোবর এসব সংস্কার কমিশনের বাকি সদস্যদের নামসহ পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এই ছয় কমিশনের মোট সদস্য ৫০ জন। এর মধ্যে সাবেক আমলা ১৫, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ২, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ৮, বিচারপতি ও বিচারক ৫, আইনজীবী ৬, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ৬ এবং অন্যান্য পেশার (এনজিও, মানবাধিকারকর্মী, বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি) ৮ জন। এসব পেশাজীবীর মধ্যে নারী পাঁচজন। শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ছয়জনের মধ্যে শুধু একজনের নাম (সংবিধান সংস্কার কমিশনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম) জানানো হয়।

 

এরপর গত ১৭ অক্টোবর গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রমিক অধিকার ও নারীবিষয়ক আরও চারটি নতুন সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। এতে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বিশিষ্ট কলামিস্ট কামাল আহমেদ ও একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ খান, শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশনের প্রধান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতানউদ্দিন আহমেদ ও নারীবিষয়ক কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নারী পক্ষের শিরিন পারভীন হককে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এখনো আমরা শিক্ষার্থী প্রতিনিধি পাইনি। তাকে তো সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অপেক্ষায় আছি। পেলে (শিক্ষার্থী প্রতিনিধি) তাকে আমরা স্বাগত জানাব। এ পর্যন্ত আমরা সাতটি মিটিং করেছি। রাষ্ট্রের সংস্কারে শিক্ষার্থী প্রতিনিধির মতামত খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। কারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলেই রাষ্ট্র সংস্কারের এই সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে আন্দোলনে সক্রিয় শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের মতামত জানতে আমরা তাদের একটি দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের চিন্তাভাবনা, পরামর্শও আমরা শুনব, গুরুত্ব দেব।’

 

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আমরা এখনো পাইনি। তবে সপ্তাহে তিন দিন কমিশনের মিটিং হচ্ছে। নির্বাচনিব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে আমরা নাগরিকদের মতামত পেতে ই-মেইল, ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ওপেন করেছি। সেখানে তারা মতামত দিচ্ছেন। সংস্কার পরিকল্পনায় আমরা নির্বাচন কমিশন বিটের অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের মতামত জানারও উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা সরকার নিয়োজিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধির মতামত নিতে আগ্রহী। শুনেছি শিগগিরই দেওয়া হবে।’

 

কমিশন গঠনের পর প্রায় এক মাস পেরিয়েছে। এখনো সব কমিশনে কেন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়নি? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এ পর্যন্ত দুই দফায় ১০টি সংস্কার কমিশন করা হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা (সংবিধান সংস্কার ও গণমাধ্যম সংস্কার) দুটি কমিশনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি চূড়ান্ত করেছি। চলতি সপ্তাহে নবগঠিত চার কমিশনের সব সদস্য নিয়োগসহ সব সংস্কার কমিশনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। প্রথম দফায় গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম চলমান। সেগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি নিয়মিত কমিশন মিটিংয়েও যোগ দিচ্ছেন। কার্যক্রম চলমান বাকি পাঁচ কমিশনের জন্য শিগগিরই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দেওয়া হবে। দ্বিতীয় দফায় যে চার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেগুলো এখনো কার্যকর হয়নি। পরে গঠিত ওই কমিশনগুলোর প্রধানকে নিয়োগ দেওয়া হলেও পুরো কমিশন এখনো গঠিত হয়নি। একই সঙ্গে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে প্রধান হিসেবে বিশিষ্ট কলামিস্ট কামাল আহমেদ এবং একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধির নাম দেওয়া হয়েছে।’

 

Manual2 Ad Code

সংস্কার কমিশন ঘোষণা করে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত হওয়া দুই দফায় গঠিত ১০ কমিশনকে কার্যক্রম শুরুর তিন মাসের (৯০ দিন) মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের সংস্কার প্রস্তাব প্রতিবেদন আকারে হস্তান্তর করতে হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code