প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর-এমপিরা

editor
প্রকাশিত মে ২১, ২০২৫, ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ
নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর-এমপিরা

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের ৪৩ জন সিনেটর ও এমপি আজ বুধবার এক চিঠি দিয়েছেন।

এতে তিনটি বিশেষ বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে—জরুরি ভিত্তিতে স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ভেঙে ফেলার দাবি। তারা সতর্ক করেছেন, এসব কার্যক্রমে বিলম্ব বা অস্পষ্টতা দেশের জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যত ঝুঁকির মুখে পড়বে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশবাসী নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে, তাই তারা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. রাশেদুল হক এই চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কালবেলার হাতেও এই চিঠি পৌঁছেছে।

 

Manual1 Ad Code

চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর ও সংসদ সদস্যরা লেখেন, ‘আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পক্ষে আমাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। এজন্য অবিলম্বে একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ, জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার এবং র‍্যাবের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

Manual2 Ad Code

তারা আরও বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসের অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের জনগণের সাহসিকতা ও দৃঢ় সংকল্পের প্রশংসা জানাই। এটি আপনার প্রশাসনের জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার রক্ষা এবং শাসন ব্যবস্থায় জনসাধারণের আস্থা পুনর্নির্মাণের এক ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’

অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের এই সদস্যরা বলছেন, ‘বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করা প্রয়োজন। গত তিনটি নির্বাচনে বৈধতা অভাবের কারণে জনগণের ভোটাধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগ সম্ভব হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এটি সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি নির্বাহী কর্তৃপক্ষের অযাচিত হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করবে।’

 

চিঠিতে ড. ইউনূসের উদ্দেশ্যে আরও লেখা হয়েছে, ‘আমরা আশা করি, বাংলাদেশ এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করবে, আপনার সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়ন করবে এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে নিজের সঠিক স্থান প্রতিষ্ঠা করবে। আমাদেরও অনুপ্রাণিত করেছে বাংলাদেশের ছাত্র ও সাধারণ মানুষ যারা এই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। তবে এই বিজয়ের পেছনে ছিল বড় ধরনের মানবিক মূল্যও।’

চিঠিতে বলা হয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রয়টার্স ও জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরগুলোতে সরকারের নির্মম দমন-পীড়নে হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং বহু আহত হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আমরা স্বাধীন, স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে অতীতের রাজনৈতিক সহিংসতার দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য আপনার প্রশাসনকে আহ্বান জানাচ্ছি। ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য সত্য, ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা প্রয়োজন। আমরা এই আহ্বানের মানবিক গুরুত্ব ও তীব্রতা স্বীকার করি।’

 

Manual8 Ad Code

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ভেঙে ফেলার প্রসঙ্গে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মানবাধিকার সংক্রান্ত পর্যালোচনায় র‍্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ২০০৯ সাল থেকে র‍্যাবের হাতে ২,৬৯৯-এরও বেশি মানুষ বেআইনিভাবে নিহত হয়েছে। এই বাহিনী দায়মুক্ত থেকে মতবিরোধ চেপে দিয়েছে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের লক্ষ্য করে কাজ করেছে।’ চিঠিতে মার্কিন সরকারের র‍্যাবের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে র‍্যাব ভেঙে ফেলা ও শিকারদের ন্যায়বিচার দেওয়ার অনুরোধও পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে আরও বলা হয়েছে, ‘অবিলম্বে জনসমক্ষে একটি স্পষ্ট ও সময়সীমাবদ্ধ নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। এটি বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য ও আলোচনা বহির্ভূত পদক্ষেপ।’

 

Manual8 Ad Code

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর ও এমপিদের মধ্যে রয়েছেন সিনেটর লারিসা ওয়াটার্স, ডেভিড শোব্রিজ, জর্ডন স্টিল-জন, ফাতিমা পেম্যান, লিডিয়া থর্প, পেনি অলম্যান-পেইন, মেহরিন ফারুকি, স্টেফ হজগিন্স-মে, বারবারা পোকক, পিটার হুইশ-উইলসন, ডোরিন্ডা কক্স, নিক ম্যাককিম, সারা হ্যানসন-ইয়ং, এলিজাবেথ ওয়াটসন-ব্রাউন এমপি, অ্যাবিগেল বয়েড, আমান্ডা কোহন, ক্যাথরিন কোপসি, সু হিগিনসন, কেট ফেহরম্যান, আনাসিনা গ্রে-বারবেরিও, আইভ পুগলিয়েলি, ড. সারাহ ম্যানসফিল্ড, ব্র্যাড পেটিট, জেনি লিওং, তামারা স্মিথ, কোবি শেট্টি, টিম রিড, এলেন স্যান্ডেল, মাইকেল বার্কম্যান, গ্যাব্রিয়েল ডি ভিয়েট্রি, ড. রোজালি উডরাফ, তাবাথা ব্যাজার, সিসিলি রোজল, ক্যাসি ও’কনর, ভিকা বেইলি, হেলেন বার্নেট, শেন র‍্যাটেনবারি, অ্যান্ড্রু ব্র্যাডক, জো ক্লে, লরা নাটাল, রবার্ট সিমস ও ড. মাইক ফ্রিল্যান্ডার।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code