প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যে দাম মেলেনি চামড়ার

editor
প্রকাশিত জুন ১২, ২০২৫, ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ
সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যে দাম মেলেনি চামড়ার

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual4 Ad Code

আমাদের দেশে কোরবানির চামড়া বিক্রির অর্থ সাধারণত মাদ্রাসার জন্য ব্যয় করা হয়। তবে প্রতি বছর এখানেও থাবা বসায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকে আশায় ছিলেন এবার হয়তো প্রতিবারের চিরচেনা চিত্র পাল্টাবে। কিন্তু এবারও সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার ন্যায্য দাম জোটেনি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় অনেক কম দামে চামড়া বিক্রি হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ চামড়া সংগ্রহকারীরা।

দেশে চামড়া সংরক্ষণের জন্য শুধু লবণ মাখিয়ে রাখা হয়। সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়েই চামড়া সংরক্ষণের আধুনিক কোনো পদ্ধতি নেই। কোরবানির পর সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চামড়ার গুণগত মানও কমতে থাকে। এ সুযোগ নিয়ে ট্যানারির মালিকরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সময় পার করেন। ফলে চামড়া নষ্ট হতে থাকে। বাধ্য হয়েই চামড়া সংগ্রহকারীরা কম দামে ট্যানারির মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। অনেকের চামড়া বিক্রি করে পরিবহন খরচও উঠে না। তাই নষ্ট করে ফেলেন। অনেকে মনের দুঃখে চামড়া পুঁতে ফেলেন। এবারও সারা দেশে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রিতে বিগত দিনের নৈরাজ্য দেখা দেয়। যদিও এবার সরকার অনেক আগে থেকেই তৎপর ছিল। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবল থেকে চামড়াকে মুক্ত করতে এরই মধ্যে কাঁচা চামড়া ও ব্লু ওয়েট রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধ হয় না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো এ বছরও পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া যায়নি। এবারও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে। বর্তমান সরকার তেমন কিছুই করতে পারেনি। চামড়া সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থা থাকলে সিন্ডিকেটের কবল থেকে চামড়ার বাজার মুক্ত করা সম্ভব।

Manual5 Ad Code

ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রে অবস্থা এবার সবচেয়ে খারাপ। ঢাকার অনেক এলাকায় এসব চামড়া বিনামূল্যে দান করা হয়েছে, কোথাও বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫-৩০ টাকায়।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, “ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রে সরকারি মূল্য মানা হচ্ছে না। এটা আমরা নিজেরাও লক্ষ্য করেছি। কিন্তু, আমরা সে অনুযায়ী সঠিক অ্যাকশন নেওয়ার চেষ্টা করব। এ বছরের শিক্ষা নিয়ে সামনের বছর কাজে লাগানো হবে।” তিনি বলেন, “ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছ থেকে চামড়ার বাজারের নির্ভশীলতা কাটাতে এরই মধ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যতে চামড়া সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে।

Manual7 Ad Code

বাজারে গরু কম ছিল:

বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহার আগে ভারত থেকে গড়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ এবং মায়ানমার থেকে গড়ে ৫ লাখ পশু দেশের বাজারে এনে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু এবার ভারত এবং মায়ানমার থেকে পশু আসেনি বলা যায়। মূলত দেশের পশুর ওপর নির্ভরশীল ছিল কোরবানির বাজার।

কোরবানি কম হয়েছে:
চামড়া খাতের বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম পশু কোরবানি হয়েছে। চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এবার ৭৫ লাখ চামড়া পাওয়া যাবে বলে তারা জানিয়েছেন। সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ১৪০টি ট্যানারিতে ৪ লাখ ৫০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। রাজধানীর বাইরের চামড়া এখনো এসে পৌঁছায়নি।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি কালো টাকার মালিকরা এবার আত্মগোপনে থাকায় বিশেষ করে বিগত দিনে মতিউরের মতো কালো টাকার মালিকদের সংখ্যা এখন কমেছে। তাই লাখ লাখ টাকা দামের পশু কোরবানি কমেছে। এ ছাড়া এবার দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত দিয়ে পশু আনতে না পারার কারণে বাজারে পশুর সরবরাহ কম ছিল।’

ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, ‘প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া কিনছেন। তবে বেশি দামে চামড়া কেনা সম্ভব না। অনেকে বেশি দামে চামড়া সংগ্রহ করে বেশি দামে আমাদের কাছে বিক্রির চেষ্টা করছেন।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘পশু কোরবানি কম হওয়ার অন্যতম কারণ মূল্যস্ফীতি। সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা কোরবানি দেবেন কোথা থেকে? আগে অনেকে একা একটি পশু কোরবানি দিলেও এবার কয়েকজন মিলে দিয়েছেন। এতে পশুর চামড়া কম পাওয়া গেছে।’

নৈরাজ্যের প্রভাব পড়বে চামড়া ব্যবসায়:

কোরবানির পশুর চামড়া মূলত দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার উৎস। অথচ, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। চামড়া সংগ্রহের ব্যর্থ সরবরাহ চেইন ব্যবস্থা, মান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, লবণের সংকট ও নিম্নমানের লবণ এসব মিলিয়ে চামড়ার বিশাল অংশ প্রতি বছর নষ্ট হয়ে যায়। চামড়া শিল্প ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘প্রতিবছর যদি কোরবানির চামড়া এ শিল্পের জন্য লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এটি আর সম্ভাবনার খাত থাকবে না।’

সারা দেশের চামড়া বিক্রির চিত্র:

Manual1 Ad Code

চট্টগ্রামে উপযুক্ত দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অনেকে রাগে-ক্ষোভে চামড়া ফেলে যান ময়লার ভাগাড়ে। কেউ পুঁতেছেন মাটির নিচে। আবার অনেকে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে দান করেছেন মাদ্রাসা ও এতিমখানায়। দেশের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে ঈদ-পরবর্তী হাটে প্রায় অর্ধ লাখ গরু-ছাগলের চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। তবে দাম নিয়ে হতাশ হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। অনেকে পুঁজি হারাতে বসেছেন। অনেকের খরচের টাকাও ওঠেনি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code