প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভয় কেটে গেছে, স্বস্তিতে রপ্তানিকারকরা

editor
প্রকাশিত আগস্ট ২, ২০২৫, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
ভয় কেটে গেছে, স্বস্তিতে রপ্তানিকারকরা

Manual8 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে সুখবর এল। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাড়তি শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশকে বর্তমানের গড় ১৬ শতাংশ ও নতুন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৩৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। গতকাল শুক্রবার থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা। তবে বিবিসির খবরে জানা গেছে, কানাডা বাদে ৭ আগস্ট থেকে সব দেশে নতুন এই শুল্কহার কার্যকর হবে।

Manual6 Ad Code

শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তৃতীয় দফা আলোচনা শেষে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে নতুন এ হার ঘোষণা করা হয়। ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত ৭ জুলাই বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কথা জানিয়েছিল হোয়াইট হাউস।

এদিকে ট্রাম্প সরকারের শুল্কহার কমানোর সিদ্ধান্তে স্বস্তি এসেছে দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে। তারা বলেছেন, বাড়তি শুল্ক নিয়ে তিন মাস ধরে যে ধরেনের অনিশ্চয়তা ও ভয়ভীতি ছিল তা কেটে গেছে। এর ফলে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে। পাশাপাশি এও বলেছেন, বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। শুল্কহার কমানোর ফলে বাংলাদেশের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এ জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন বৈচিত্র্যময়, প্রতিযোগিতামূলক ও সহনশীল বাণিজ্যকৌশল প্রতিষ্ঠা করা যায়। বিশ্ববাজারে ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে সরকারের কাছে আরও নীতিসহায়তার দাবি জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে পোশাকপণ্য ৮৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি কমাতে বিশ্বের ৬০টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও পাল্টা বাড়তি শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এটা নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল। তিন মাস পর হোয়াইট হা্উস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের তৃতীয় দফা ও চূড়ান্ত আলোচনা শেষে অবশেষে ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার দুই দেশের মধ্যে সফল সমঝোতার মধ্য দিয়ে সব ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটে। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। এ ছাড়া দলে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।

শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আমরা ২০ শতাংশের নিচে প্রত্যাশা করেছিলাম।’

 

তৈরি পোশাক ও রপ্তানিকারক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বর্তমানে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের বিসিআই প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ট্রাম্পের ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণের সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য নিঃসন্দেহ ইতিবাচক। সুসংবাদও বটে। তবে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকলেও পোশাকের দাম নিয়ে চাপে পড়ব। এটি মোকাবিলায় এ খাতে সরকারকে নগদ সহায়তা আরও বাড়াতে হবে।’

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য দেশের ওপর শুল্কের হার তুলে ধরা হয়েছে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের ওপরও ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। তবে চীনের ওপর ৩০ শতাংশ আরোপ করা হলেও আলোচনা এখনো শেষ হয়নি বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে।

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘বাড়তি পাল্টা শুল্ক নিয়ে তিন মাস ধরে আমরা একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। ট্রাম্প সরকার শুল্ক কমানোর ফলে এই অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গেছে। এটি আমাদের জন্য বড় স্বস্তির।’

গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।

Manual1 Ad Code

যুক্তরাষ্ট্রের তিন মাসের সময়সীমা গত ৯ জুলাই শেষ হয়। এর আগের দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও ৭ জুলাইয়ের পর পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। শুল্কের হার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে সময় দেওয়া হয়। বাংলাদেশ তার আগেই বাড়তি শুল্কারোপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায়।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ট্রাম্প সরকার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর চূড়ান্তভাবে ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করায় এতদিন যে ভয় ছিল তা কেটে গেছে। এর ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে। যদিও শুল্কহার এখনো বেশি। তবু এটা মন্দের ভালো।

Manual2 Ad Code

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা রপ্তানি খাতের জন্য একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তিনি আরও বলেন, এটি সুযোগ এবং একই সঙ্গে সতর্কবার্তা। বাংলাদেশকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে বৈচিত্র্যময়, প্রতিযোগিতামূলক ও সহনশীল বাণিজ্যকৌশল প্রতিষ্ঠা করা যায়।

 

বাংলাদেশ কী পেল, কী দিয়েছে

বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে, তা কিন্তু সহজেই আসেনি। এ জন্য বাংলাদেশকেও অনেক ছাড় দিতে হয়েছে। এখন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কম পণ্য আমদানি করে। বিপরীতে বেশি রপ্তানি করে। সে জন্য বাণিজ্য বাংলাদেশের অনুকূলে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ৬২৯ কোটি ডলার। এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বাংলাদেশ অঙ্গীকার করেছে, আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে এই ঘাটতি দেড় থেকে ২০০ কোটি ডলারে নামিয়ে আনা হবে। এ জন্য সরকারিভাবে ৩৫ লাখ টন গম ও ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনবে বাংলাদেশ।

বেসরকারি পর্যায়ে সয়াবিন তেল ও তুলা আমদানি করা হবে। এগুলো বাণিজ্য ইস্যু। এর বাইরে আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যা এখনো জানা যায়নি। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ বলেন, শুল্ক কমানোর ফলে প্রতিযোগিতা হবে। এটা ভালো দিক। কিন্তু এর জন্য আমরা কী দিয়েছি, তা এখনো পুরোপুরি জানি না। আমার মনে হয় বিষয়গুলো প্রকাশ করা উচিত।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code