প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মব সন্ত্রাসে চার বছরে মৃত্যুহার বেড়েছে পাঁচ গুণ

editor
প্রকাশিত আগস্ট ১২, ২০২৫, ০১:১৭ অপরাহ্ণ
মব সন্ত্রাসে চার বছরে মৃত্যুহার বেড়েছে পাঁচ গুণ

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

গণপিটুনি বা মব সহিংসতায় বিগত চার বছরে মৃত্যুহার পাঁচ গুণ বেড়েছে। এসব ঘটনায় ২০২১ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ২৯ জন, যা ২০২৪ সালে ১৪৬ জনে পৌঁছেছে। এতে গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ১২ জনের বেশি মারা গেছে। গত বছর আগস্ট থেকে চলতি বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত এক বছরে মব সহিংসতার ঘটনায় মারা গেছে ১৭৭ জন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) চার বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

Manual4 Ad Code

দেশে ‘মব সহিংসতা’ এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় চোর, ডাকাত, ধর্ষণকারী সন্দেহে নির্বিচারে বেদম পিটুনি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

মব সন্ত্রাসে চার বছরে মৃত্যুহার বেড়েছে পাঁচ গুণঅতীতে একটা সময় চুরি-ডাকাতি বা অপরাধমূলক কোনো ঘটনায় সন্দেজভাজন ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার হতো।
হালে মব-সন্ত্রাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ খোদ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে মৃত্যুহারও বাড়ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন  বলেন, দেশ একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও অনেকটা ভেঙে পড়েছিল।
এসব কারণে মবের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অপরাধ দমনে শতভাগ প্রস্তুত। কোথাও অপরাধের সংবাদ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জনগণকে বলব, কোনো সমস্যা হলে দ্রুত কাছের থানা বা জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সহযোগিতা চান।

Manual1 Ad Code

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, পণপিটুনি বা মবের সংখ্যা বেড়ে গত বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই প্রথম সাত মাসে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ জন। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পরবর্তী পাঁচ মাসে নিহতের সংখ্যা ছিল ৯৯ জন, আগের সাত মাসের তুলনায় দ্বিগুণ এবং ওই বছরে মোট নিহতের ৬৬ শতাংশ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনেও গণপিটুনি ও মবের ঘটনায় মৃত্যুর একই চিত্র দেখা যায়। গত বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে নিহত হয়েছে ৩২ জন। আগস্ট পরবর্তী পাঁচ মাসে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ওই বছর মোট মৃত্যুর ৭৫ শতাংশ।

Manual5 Ad Code

মানবাধিকবার সংগঠনটির তথ্য মতে, চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে মবের ঘটনায় ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকায় ৪৫ জন, চট্টগ্রামে ১৭ জন, বরিশালে ১১ জন, রাজশাহীতে চার, রংপুরে চার, ময়মনসিংহে তিন, খুলনায় তিন ও সিলেটে দুজন।

এ ছাড়া সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেমসহ একাধিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণে মবের ভয়াবহ উত্থানের চিত্র দেখা যায়।

সানেমের গত ৭ জুলাই প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৭১.৫ শতাংশ তরুণ মনে করে, মব জাস্টিস সমাজে গভীর প্রভাব ফেলছে এবং এটি আইনের প্রতি অনাস্থা বাড়াচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, যেখানে সরকার আছে, এর পরও যদি এসব নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, এটি চরম ব্যর্থতা। আইনের শাসন দুর্বল থাকা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর যথেষ্ট ভূমিকা না থাকা, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্যের ঘাটতি এবং রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতার কাছাকাছি মনে করা, অর্থাৎ নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবার কারণে এই সহিংসতা চলছে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা না থাকলে এটি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

তিনি বলেন, চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী বা ধর্ষক বা এসব অপরাধে জড়িত সন্দেহে জনগণ এক হয়ে মারধর করা হলে তাকে গণপিটুনি বলে। ‘মব সহিংসতা’ ভিন্ন বিষয়। আইনের মাধ্যমে প্রতিকার না পেয়ে একটি দল বা মতের গোষ্ঠী নিজেরাই বিচার করার জন্য উদ্বুদ্ধ হলে তাকে ‘মব’ বলে। অন্যায় দাবি নিয়ে কেউ জড়ো হয়ে বিশৃঙ্খলা করলে তাকে মব বলা যাবে না। মব পরিকল্পিত, গণপিটুনি অপরিকল্পিত। বিভিন্ন দলের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের একযোগে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসবের বিরূপ প্রভাবও সমাজে পড়েছে। এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘মব সহিংসতার ঘটনা কমলেও সম্প্রতি কিছু এলাকায় তা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতেও কেউ মবের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।’

Manual8 Ad Code

আলোচিত মবের ঘটনা : রংপুরের তারাগঞ্জে ভ্যানচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুজন নিহত হয়েছেন। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন তারাগঞ্জের কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের রূপলাল দাস (৪০) ও তাঁর ভাগ্নিজামাই মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। প্রদীপ দাস পেশায় ভ্যানচালক এবং রূপলাল জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন।

নিহতদের পরিবার জানায়, রূপলাল দাসের মেয়ের সঙ্গে মিঠাপুকুরের কমল দাসের বিয়ের কথা চলছিল। বিয়ের ঘটক ছিলেন প্রদীপ। বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করতে তাঁরা মিঠাপুকুরের দিকে রওনা দেন। রাত ৯টায় তারাগঞ্জ-কাজীরহাটে পৌঁছলে স্থানীয়া তাঁদের ভ্যানচোর সন্দেহে পেটাতে শুরু করে। এতে গুরুতর আহত হয়ে দুজনই মারা যান।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তরা শাখায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা পরিদর্শনে গিয়ে টানা ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তা। পরে যৌথ বাহিনীর কড়া পাহারায় তাঁরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

রাজধানীর মিরপুরে বাজার করতে গিয়ে মাসুদুর রহমান নামের একজন পুলিশ পরিদর্শক ‘মবের’ শিকার হন। গত ১৩ জুন সকালে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারে তাঁকে মারধর করে নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার উত্তরার বাসায় গত ২০ জুলাই মব তৈরি করে একদল লোক। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সাবেক এই সিইসিকে ভোট কারচুপির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code