প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অন্তরালে জোট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ

editor
প্রকাশিত আগস্ট ১৬, ২০২৫, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ
অন্তরালে জোট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual7 Ad Code

দেশ এখন নির্বাচনমুখী। রাজনৈতিক দলগুলো যার যার মতো ভোটের মাঠ দাপিয়ে বোড়চ্ছে। তারা ধরনা দিচ্ছে ভোটারদের কাছে। এরই মধ্যে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে দুই-একটি দল।
তবে কার্যত শেষ পর্যন্ত তারাও ভোটের মাঠেই থাকছে। বড় দল বিএনপিকে চাপে রাখতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ দুই-একটি দল ভোটে না যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, এটিও তাদের নির্বাচনী কৌশল। পেছনে বড় দলের সঙ্গে আসন সমঝোতাই মূল লক্ষ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে মূলত প্রধান তিনটি রাজনৈতিক জোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সময় যত এগোচ্ছে, সামনের ফেব্রুয়ারিকে লক্ষ্য রেখেই জোট গঠন প্রক্রিয়ায় তোড়জোড় বাড়ছে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২ দল, সমমনা জোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ আরো কয়েকটি দলের বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। পাশাপাশি এই জোটে ভেড়াতে গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, এনসিপি, গণ-অধিকার পরিষদসহ বেশ কিছু দলের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ড নিয়মিত যোগাযোগ ও বৈঠক করছে।
তবে বিএনপি কোনোক্রমেই আগামী নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাবে না।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন অংশ নিয়ে জোট বাঁধার বিষয়ে অনেকটাই ইতিবাচক।

এর বাইরে এনসিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, গণ-অধিকার পরিষদসহ আরো কয়েকটি দল পৃথক জোট গঠনের পথে এগোচ্ছে বলে নির্ভরশীল সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই জোট বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে বলে আলোচনা আছে।

জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যচেষ্টা : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘যারা নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলছে সেটি তাদের কৌশল।

মূলত আসন সমঝোতা বা দেন-দরবারের জন্যই তারা এগুলো বলছে। আসলে সবাই নির্বাচনমুখী। সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে আমরা নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ উষ্ণ। বিএনপির সঙ্গে আগামী ১৮ আগস্ট গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক আছে। সেখানে জোট সম্প্রসারণসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে খবর আছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস এবং হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি ইসলামী দলকে নিয়ে ঐক্য গঠনের চেষ্টা করছে জামায়াত। তবে জামায়াতের নেতৃত্বে এই জোটে হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হকের অংশ না-ও যেতে পারে বলে তিনি জানান।

আসন সমঝোতা : জানা গেছে, আসন বণ্টন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এনসিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, গণ-অধিকার পরিষদের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিএনপি জোটসঙ্গীদের ৬০টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি নয়। কিন্তু এনসিপি ৩০টি আসন ধরেই দর-কষাকষি করছে। তারা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দর-কষাকষি করছে। এ ক্ষেত্রে ১৭টির বেশি আসন ছাড়তে নারাজ বিএনপি।

এদিকে জামায়াত জোটবদ্ধ না হলেও বিএনপির কাছে কমপক্ষে ৫০টি আসনে ছাড় চায় বলে জানা গেছে। সেটি নিশ্চিত না হওয়ায় তারা নির্বাচনে না যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি ও জামায়াতের সূত্র জানিয়েছে।

Manual7 Ad Code

জাতীয় পার্টির ওপর ভর করবে আ. লীগ : সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সূত্র জানায়, মূলত প্রধান তিনটি জোটের বাইরেও নির্বাচন সামনে রেখে হঠাৎ জাতীয় পার্টি নড়েচড়ে বসেছে। দলটির নেতারা ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও গত বুধবার আদালতের এক আদেশে জি এম কাদের ও তাঁর দলের এক শীর্ষ নেতার কর্মকাণ্ডে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ায় এ আলোচনার পালে নতুন হাওয়া যোগ করেছে। চিন্তকরা মনে করছেন, ক্ষমতায় থাকা কারো কারোর ইঙ্গিত ছাড়া গত ১৫ বছরে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার যে দায়, তা কাটিয়ে ওঠা সহজ ছিল না। এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকেও ফ্যাক্টর করে তোলা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছে। তাদের ধারণা, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা জাতীয় পার্টির ওপর ভর করবে। গোপালগঞ্জ, বৃহত্তর ফরিদপুর, রংপুর, খুলনাঞ্চলের বেশ কিছু আসনে জাতীয় পার্টির শক্ত প্রতিন্দ্বন্দ্বিতার মোকাবেলা করতে হবে বিএনপি বা জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটকেও। গত রাতে জানতে চাইলে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকছে। কিন্তু মব কালচার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, প্রশাসনকে ‘একচোখা নীতি’ পরিহার করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ। তবে সরকার কোনো কোনো দলকে সুবিধা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, এখানে বড় ধরনের বৈষম্য করছে সরকার। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগের রিজার্ভ ভোটসহ ৫২ শতাংশ ভাসমান ভোট রয়েছে। তাদের টার্গেট করে জাতীয় পার্টি এগোচ্ছে। আওয়ামী লীগের ভোটাররা জাতীয় পার্টিকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের কেউ জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

Manual2 Ad Code

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, ‘যারা বলছে নির্বাচনে যাবে না বা নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না—এটা তাদের এক ধরনের রাজনৈতিক চাপ। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য তাদের মধ্যে আগে থেকেই আছে। গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই—এটা তারাও বোঝে। ভোটই গণতন্ত্রের প্রথম সোপান। এনসিপি বলেন, আর জামায়াত বলেন—দেশের কথা চিন্তা করে তারা নির্বাচনে যাবে। বিএনপিকে বড় দল হিসেবে প্রয়োজনে আরো ছাড় দিতে হবে।’

Manual1 Ad Code

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১২ দল, সমমনা জোটসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও আলোচনা হচ্ছে আমাদের। তবে এখনো আসন নিয়ে সেভাবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেউ যদি বিএনপির জোটের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তাদের সঙ্গে আলোচনা হতেই পারে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শরিক সবাইকে নিয়েই জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের বিষয়ে বিএনপি এখনো ইতিবাচক।’

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট হচ্ছে না : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ইসলামী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনা বা জোট গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আরো বলেন, ‘দেশের স্বার্থে আমরা যেকোনো বিষয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। রাজনীতিতে অনেক কিছুই সম্ভব। তবে বিএনপি এরই মধ্যে স্পষ্ট করে বলেছে, তারা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা বা ঐক্যে যাবে না।’

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া পথ নেই। বাস্তবে নির্বাচন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইসলামী দলগুলোর জোট হতেই পারে। জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। পিআর পদ্ধতি নিয়েও তারা কথা বলছে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট হবে না বলেই মনে করছি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মানসিকতার ওপর, এই বড় দলের সিদ্ধান্তের ওপর জোটবদ্ধ নির্বাচনের বিষয়টি অনেকাংশেই প্রভাব ফেলবে। আমাদেরও একাধিক দল জোটভুক্ত হওয়ার আভাস দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোনো কোনো দল পিআর পদ্ধতি নিয়ে ও অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলছে। আমার মনে হয় এগুলো তাদের কৌশল। শেষ পর্যন্ত এসব দল নির্বাচনে যাবে।’

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে শরিক সব দলের সঙ্গে সম্মানজনক সমঝোতায় যেতে পারে। হতে পারে বড় জোট। আমাদের দল ও আরো কয়েকটি দলকে নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে একসঙ্গে ভোট করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা যে হয়নি তা নয়। তবে আমরা এখন দল গোছাচ্ছি।’ আসন সমঝোতার বিষয়টি এখন প্রধান বিবেচ্য কি না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই আমরা এগোতে চাই।’ সরকারের ভেতরের ফ্যসিবাদীদের একটি অংশ জাতীয় পার্টিকে আবার সক্রিয় করতে চাইছে বলে মনে করেন তিনি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বহু হিসাব-নিকাশ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code