প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নিজের নয়, জনগণের ইচ্ছায় সরকারপ্রধানের পদে বসেছি: সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস

editor
প্রকাশিত আগস্ট ১৬, ২০২৫, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ
নিজের নয়, জনগণের ইচ্ছায় সরকারপ্রধানের পদে বসেছি: সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস

Manual8 Ad Code

 

Manual4 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর এই বয়সে বাংলাদেশের জাতীয় পটপরিবর্তনের অস্থিরতা থেকে বহুদূরে শান্ত অবসরজীবন বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি এখন দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে খুঁজে পান। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য এমন এক দায়িত্বে রয়েছেন; যা তাঁর দৃষ্টিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়, বরং অবশ্যপালনীয় কর্তব্য।

অধ্যাপক ইউনূস এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি চটজলদি জবাব দেন, এটা (সরকারপ্রধানের পদে বসা) কখনোই তাঁর নিজের জন্য নয়; বরং দেশের জনগণের জন্য।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটা আমার নয়, এটা সেসব মানুষের চাওয়া, যাঁরা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তাঁরা যেভাবে চলতে চান, আমি শুধু তাঁদের সেভাবে চলতে সহায়তা করছি।’

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদমাধ্যম বারনামাকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।

ক্ষুদ্রঋণ ধারণার পথিকৃৎ হিসেবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি পাওয়া একজন ব্যক্তি হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের আসনে পা রাখাটা কখনোই অধ্যাপক ইউনূসের পরিকল্পনার অংশ ছিল না। তাঁর ভাষায়, পরিস্থিতি তাঁকে পছন্দ বেছে নেওয়ার বিষয়ে খুব কমই সুযোগ দিয়েছে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে ১১ থেকে ১৩ আগস্ট অধ্যাপক ইউনূস দেশটি সফর করেন। সফরের শেষ দিকে অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎকারটি নেন বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজ। সঙ্গে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের সম্পাদক ভুন মিয়াও পিং ও বারনামার ইকোনমিক নিউজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারী সুশেদারাম।

Manual6 Ad Code

ক্ষুদ্রঋণ ধারণার পথিকৃৎ হিসেবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি পাওয়া একজন ব্যক্তি হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের আসনে পা রাখাটা কখনোই অধ্যাপক ইউনূসের পরিকল্পনার অংশ ছিল না। তাঁর ভাষায়, পরিস্থিতি তাঁকে পছন্দ বেছে নেওয়ার বিষয়ে খুব কমই সুযোগ দিয়েছে।

Manual8 Ad Code

 

একজন নেতার চেয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একজন অভিভাবক হিসেবেই বর্তমানে নিজের ভূমিকা তুলে ধরতে চান অধ্যাপক ইউনূস। নিজের সামনে থাকা বিশাল চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়েও তিনি অকপটে স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এখানে অসুবিধা অনেক। অনেকেই এটাকে ব্যাহত করতে চায়। কেননা, বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক উপাদানগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’

 

বাংলাদেশে গত দেড় দশকে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকে নতুন ভোটার হয়েছেন, যাঁদের কেউ আগে কখনো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। তাঁদের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘কেউ ১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। কেউ ১৫ বছর ধরেও।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একবার ভাবুন, আপনার ১৮ বছর বয়স হয়েছে, আপনি ভোট দিতে আগ্রহী। কিন্তু আপনি সেই সুযোগ কখনো পাননি। কারণ, সত্যিকার অর্থে কখনো নির্বাচনই হয়নি। এখন তাঁরা ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার ভোট দিতে পারবেন।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার ভার দেন।

অধ্যাপক ইউনূসের এ কথায় জাতীয় পরিবর্তনের প্রত্যাশার আলো ফুটে ওঠে। বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার ভার দেন।

তবে অধ্যাপক ইউনূসের পেশাজীবন শুরু হয়েছিল এরও কয়েক দশক আগে, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে চরম দরিদ্র মানুষদের সহায়তা করার মধ্য দিয়ে। তখন তিনি ৪২টি পরিবারকে মাত্র ২৭ ডলার ব্যক্তিগত ঋণ দিয়েছিলেন। এ অর্থে তাঁরা উচ্চ সুদের বোঝা ছাড়াই বিক্রির জন্য পণ্য উৎপাদন করতে পেরেছিলেন।

 

Manual5 Ad Code

অধ্যাপক ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক উদ্যোগটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় গবেষণাধর্মী পাইলট প্রকল্প হিসেবে ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করেছিল। ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন।

গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি ১০ দশমিক ৭২ মিলিয়ন (১ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার) গ্রহীতাকে মোট ৪০ হাজার ৩৬৮ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের ৯৭ শতাংশই নারী।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code